সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করাটা খুব কষ্টকর ব্যাপার। এটি যেমন অসম্ভব কঠিন একটি রাস্তা, তেমনি অনেক বেশি ধৈর্য্যও প্রয়োজন এ পথের শেষ মাথায় জয়ী হিসেবে যাওয়ার জন্য। অনেক সময় ক্যান্সারের চিকিৎসা নারীদের শরীরে নেতিবাচক অনেক প্রভাব রাখে। এতে করে সন্তান জন্মদানের সম্ভাবনা ঝুঁকির মুখে পড়ে যায়। এমনকি, ভাবা হয় যে, ক্যান্সারের চিকিৎসা চালানোর সময় সন্তানধারণ করা পুরোপুরি অসম্ভব একটি ব্যাপার। তবে বর্তমান চিকিৎসাপদ্ধতি এই ব্যাপারে যে কিছুই ভাবেনি এবং কোনো উপায় যে একেবারেই নেই তা কিন্তু নয়। উপরের কথাগুলো কতটা সত্যি? ক্যান্সারের চিকিৎসা চালানোর পরও কি আপনি গর্ভধারণ করতে পারবেন? নিচে থাকলো আপনার প্রশ্নের উত্তরগুলো।
ক্যান্সারের চিকিৎসা কীভাবে গর্ভধারণকে প্রভাবিত করে?
ক্যান্সারের চিকিৎসায় যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় রোগটিকে ছড়াতে না দেওয়া এবং সারিয়ে তোলার জন্য, সেটি গর্ভাশয় ও ডিম্বাণুর উপরে ক্ষতিকর প্রভাব রাখতে পারে। প্রতিটি নারী যেহেতু নির্দিষ্ট কিছু ডিম্বাণু উৎপাদনের ক্ষমতা নিয়ে জন্ম নেয়, তাই সেই নির্দিষ্ট ডিম্বাণুর উপরে ক্ষতিকর প্রভাব পড়লে তাতে সন্তানধারনের ক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি হতেই পারে। তাই কোনো নারীর শরীরে যদি ক্যান্সার ধরা পড়ে সেক্ষেত্রে নিজের সন্তানধারণ ক্ষমতা নিয়ে তার আগে থেকেই চিন্তা করা প্রয়োজন। অবশ্য ক্যান্সার ধরা পড়া মানেই কিন্তু সবসময় গর্ভধারণ ক্ষমতার উপরে ক্ষতিকর প্রভাব পড়া নয়। ক্যান্সারের চিকিৎসার প্রভাব কোনো নারীর শরীরে কীভাবে পড়বে তা মূলত নির্ভর করে তার বয়স ও শারীরিক গঠনের উপরে। এমনকি, সুস্থ হয়ে ওঠার পর যদি কোনো নারীর পিরিয়ড স্বাভাবিক হয়ে যায়, তার মানে কিন্তু এই নয় যে, তার গর্ভধারণের ক্ষমতাও আগের মতোই আছে।
ক্যান্সারের চিকিৎসা হোক গর্ভধারণে কোনো সমস্যা ছাড়াই নিশ্চয় উপরের লেখাটি পড়ে আপনি একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলেন। বাস্তবেই এমনটি করা সম্ভব এখন। পৃথিবীর অনেক নারীই নিজেদের সন্তান জন্মদানের বয়সে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে, তাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের হার দিনকে দিন আরো বেড়ে চলেছে। এজন্য ক্যান্সারের চিকিৎসা চলার সময় একজন নারীর গর্ভধারণ ক্ষমতাকে কীভাবে নিরাপদ রাখা যায় সেটারও পদ্ধতি বের করা হয়েছে। চলুন পদ্ধতিটির উপরে একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক।
ক্রায়োপ্রিজার্ভেশন : গর্ভধারণ ক্ষমতাকে নিরাপদ রাখার উপায়
সন্তানধারণের ক্ষমতাকে নিরাপদ রাখার জন্য ক্রায়োপ্রিজার্ভেশনের কার্যকারিতা প্রমাণিত। এই পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট কিছু কোষ ও টিস্যুকে জমিয়ে রাখা হয় পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্য। অতীতে এক্ষেত্রে ধীরে ধীরে কোষকে জমাট বাঁধানোর প্রক্রিয়ায় ফেলা হলেও বর্তমানে ভিট্রিফিকেশন পদ্ধতির মাধ্যমে বরফ ব্যবহার না করেই দ্রুত কোষ ও টিস্যুকে কঠিনরূপে নিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে। আর এতে করে কোষ বা টিস্যুর কোনো ক্ষতি হওয়ারও সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এভাবে ক্রায়োপ্রিজার্ভেশনের জন্য ভ্রূণ তৈরি করাটাও বেশ সহজ একটি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েকটি ডিম্বাণুর মধ্যে থেকে এখানে সেরাটি বেছে নেওয়া হবে এবং সেটিকে সংরক্ষণ করা হবে। এই প্রক্রিয়াটি বেছে নিলে অবশ্য ক্যান্সারের চিকিৎসা শুরু করতে কিছুদিন দেরী হতে পারে।
আর কোনো উপায় কি নেই?
ক্যান্সারে আক্রান্ত নারী যদি কিশোরী হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে তার জরায়ু সরিয়ে ফেলাটা কার্যকর উপায় হতে পারে। পরবর্তীতে ল্যাপ্রোস্কোপি ব্যবহারের মাধ্যমে জরায়ু আবার শরীরে স্থাপন করে কাজ চালিয়ে নেওয়া সম্ভব। তবে যদি আপনার ব্লাড ক্যান্সার ভা জরায়ুর ক্যান্সার হয়ে থাকে, তাহলে জমাট জরায়ু প্রতিস্থাপনের সাথে সাথে শরীরে আবার ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
ক্যান্সার কি শিশুকে প্রভাবিত করে?
স্তন ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার ইত্যাদিতে মা আক্রান্ত হলে তার শিশুর মধ্যে এই সমস্যা দেখা দেওয়ার কোনো আশঙ্কা থাকে না। তবে মায়ের শারীরিক সমস্যার কারণে শিশুর জন্মকালীন সময়ে কিছুটা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তাই আপনি যদি ক্যান্সার বহন করে থাকেন এবং চিকিৎসা করতে চান, সেক্ষেত্রে ভয়ের কিছু নেই। বর্তমান চিকিৎসাপদ্ধতি অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। তাই একটু চেষ্টাতেই আপনিও সুস্থ হওয়ার পর সুস্থ একটি শিশুর জন্ম দিতে পারবেন।
লেখক- ডক্টর আন তান মাউন্ট এলিজাবেথ ফার্টিলিটি সেন্টার
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড