সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
আপনার পেটের উপরের অংশে ব্যথা করছে? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যাপারটিকে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বলে মনে করেন অনেকে। আর তাই এই চিকিৎসাও হয় সেই অনুযায়ীই। মজার ব্যাপার হলো, চিকিৎসকেরাও প্রথমে এই ব্যথাকে গ্যাস্ট্রিকের সামান্য কোনো লক্ষণ বলে মনে করে নিতেই পারেন। কিন্তু যদি ওষুধ সেবনের পরেও ব্যথা দূর না হয়? পেটের মাঝ বরাবর বা ডানপাশে হওয়া এই ব্যথা মূলত গলস্টোনের ব্যথা।
গল ব্লাডার ও পেটের সাথে যুক্ত স্নায়ুর উৎস একই স্থানে হওয়ায় এই সমস্যাটি দেখা দেয়। কী এই গলস্টোন? কীভাবে এর সমাধান পাওয়া সম্ভব? চলুন, জেনে নেওয়া যাক!
গলস্টোনের লক্ষণ কী কী?
সাধারণত, ৬০-৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই গলস্টোনের দ্বারা খুব বড় কোনো স্বাস্থ্য ঝুঁকি কাজ করে না। লক্ষণটাও তাই খুব একটা আলাদা করে দেখা যায় না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে গলস্টোনের খুব মারাত্মক ও বাজে রকম লক্ষণ দেখতে পাওয়া যায়। এই যেমন-
বিলিয়ারি কলিকস বা প্রচন্ড ব্যথা
আপনার পেটের উপরিভাগের মাঝামাঝি ও ডানপাশে প্রচন্ড ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা পিঠ থেকে শুরু করে কাঁধ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
বদহজম
যে কোনো খাবার গ্রহণ করলে বা একটু বেশি পরিমাণ খেয়ে ফেললেই হজমে সমস্যা বোধ করতে পারেন। বমিভাব এবং গ্যাস্ট্রিকের কারণে তৈরি হওয়া আরো নানারকম সমস্যা দেখা দিতে পারে।
গল ব্লাডারে প্রদাহ
এক্ষেত্রে প্রদাহ আপনার পেটের উপরিভাগের মাঝামাঝি এবং ডানপাশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ব্যথা ও প্রদাহের সাথে জ্বরও থাকতে পারে।
লিভার ডাক্ট স্টোন
গল ব্লাডার থেকে পাথর লিভার ডাক্টে পড়তে পারে। এতে করে আপনার চোখ ও ত্বকের রং হলুদ হওয়া থেকে শুরু করে প্রস্রাবের রং পরিবর্তন ও শারীরিক আরো নানাবিধ সমস্যা দকেহা দিতে পারে।
অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ
গল ব্লাডার স্টোনের কারণে অগ্ন্যাশয়ের স্বাভাবিক পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়া এবং সেখান থেকে প্রদাহ সৃষ্টি হওয়াটাও এক্ষেত্রে অস্বাভাবিক নয়।
গলস্টোন তৈরি হয় কীভাবে?
সাধারণত গল ব্লাডারে বা পিত্তথলিতে পিত্ত শক্ত আকৃতি ধারণ করলে গলস্টোন জন্ম নেয়। স্থূলতা, অতিরিক্ত জন্মনিয়ন্ত্রণের পিল গ্রহণ, অত্যধিক কোলেস্টোরল গ্রহণ, মদ্যপান করা এবং রক্তে নির্দিষ্ট কিছু সমস্যার কারণে গলস্টোন জন্ম নিতে পারে। আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমেই বেশিরভাগ সময় গলস্টোনের উপস্থিতি পাওয়া যায়। আপনার গলস্টোন হয়েছে কিনা তা জানতে এক্ষেত্রে তাই আল্ট্রাসাউন্ড করাটাই শ্রেয়।
গলস্টোনের চিকিৎসা কী?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গলস্টোনের কোনো লক্ষণ সেভাবে দেখা না গেলে বা এটি কোনো জটিলতা তৈরি না করলে তার চিকিৎসা করা হয় না। আর যদি সমস্যা দেখা দেয় সেক্ষেত্রে সার্জারির মাধ্যমে গল ব্লাডার থেকে পাথর সরিয়ে আনা হয়। সাধারণত শক ওয়েভ বা রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় পাথর ভেঙ্গে ফেলা হলেও, অনেক সময় এই প্রক্রিয়া নেতিবাচক ফলাফল রাখে। তাই এক্ষেত্রে সঠিক প্রক্রিয়া কোনটি বা আপনি কোনটি বেছে নিবেন সেটা নিয়ে ভেবেচিনতে তারপর অগ্রসর হোন।
সিঙ্গল ইনসিশন ল্যাপ্রোস্কোপিক সার্জারি
ল্যাপ্রোস্কোপিক সার্জারি একটু পুরনো পদ্ধতি। এটি মোট দুই প্রকারের। প্রথমটি হলো কীহোল ল্যাপ্রোস্কোপিক সার্জারি। এর মাধ্যমেও সার্জারি করে গলস্টোন দূর করা সম্ভব। এটি অন্যান্য পদ্ধতির চাইতে বেশি সহজ ও ঝুঁকিবিহীন। এই পদ্ধতিতে সার্জারি করলে আপনার পেটে চারটি ক্ষত দেখা দেবে। এর মধ্যে তিনটিই থাকবে উপরের পেটে। অন্যদিকে, সিঙ্গল ইনসিশন ল্যাপ্রোস্কোপিক সার্জারি আপনার পেটে একটি ক্ষত সৃষ্টি করবে। তবে এই ক্ষতও আমাদের শরীরের ভাঁজের সাথে সহজেই মিশে যাওয়ায় আপনাকে সার্জারি বা সার্জারির ক্ষত নিয়ে কোনো চিন্তাই করতে হবে না।
আপনার পেটে যদি গলস্টোন হয়েই থাকে, তাহলে এর চিকিৎসাও রয়েছে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এই সমস্যাটিকে পুরোপুরিভাবে দূর করতে চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন। দেখবেন খুব দ্রুতই সামান্য একটি সার্জারির মাধ্যমেই আপনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
লেখক- ডক্টর স্টিফেন চ্যাং মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটাল
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড