• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

হ্যাপি হার্ট সিনড্রোম : হাসি যখন স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়!

  সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি

২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১১:১৭
হাসি
হাসিও হতে পারে স্বাস্থ্যের জন্য হানিকারক!

‘হাসলে মন ভালো থাকে’ কথাটি নিশ্চয় অনেক শুনেছেন? শুধু মন নয়, শরীর ভালো রাখতেও চিকিৎসক হাসার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু গবেষণানুসারে, হাসি এত বেশিও ইতিবাচক কোনো ব্যাপার নয়। এই সুন্দর জিনিসটিরও নেতিবাচক দিক থাকতে পারে। চলুন, আজ মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটালের কার্ডিওলজিস্ট ডক্টর জুলিয়ান তানের কাছ থেকে আমাদের হৃদপিণ্ডের উপরে অনেক বেশি খুশি থাকার নেতিবাচক ফলাফলগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

তাকোসুবো সিনড্রোম বা ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোম

তাকোসুবো সিনড্রোমকে ১৯৯০ সালে হৃদপিণ্ডের বামপাশের ভেন্ট্রিকেলের দুর্বলতা বলে ভাবা হতো। এই অংশ দিয়েই হৃদপিণ্ড বেশি পরিমাণ রক্ত পাম্প করে। জাপানিজ ভাষায় তাকাসুবো অর্থ অক্টোপাসের ফাঁদ। এই পুরো সমস্যাটির নাম তাকাসুবো রাখা হয়েছিল, কারণ মনে করা হয়েছিল যে হৃৎপিণ্ডের বামপাশের অবস্থা অনেকটা অক্টোপাসের জালের মতোই দেখতে।

তাকাসুবো সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিরা হার্ট অ্যাটাকের অনুভূতি পান এবং তাদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ দেখা যায়। তবে তার মানে এই নয় যে তাদের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। রক্তনালীতে কোনোরকম বাধা ছাড়াও এই সমস্যাগুলো অনুভব করেন তারা। রাগ, কষ্ট, ভয়- এমন আবেগের ফলাফল হিসেবে ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোম প্রকাশ পায়। আবেগীয় চাপ এক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে।

আরও পড়ুন:

টানা ৮ ঘণ্টা ঘুমানোর ধারণা অবান্তর, বলছেন ঘুমের কোচ

স্ট্রেচ মার্ক দূর করতে কাজে লাগান এ উপায়গুলো

নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, কেন এই সমস্যাটির নাম ব্রোকেন হার্ট রাখা হয়েছে। সাধারণত, নারীদের ক্ষেত্রে মেনোপোজের পরবর্তী সময়ে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। মেনোপোজ বন্ধ হয়ে গেলে নারীদের মধ্যে আবেগের প্রভাব অনেক বেশি দেখতে পাওয়া যায়। বেশিরভাগ সময়, সন্তানদের সাথে বা স্বামীর সাথে মনোমালিন্য বা ঝগড়ার পর এই লক্ষণ তাদের মধ্যে দেখা যায়। অতিরিক্ত আবেগ আমাদের সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেমের পরিচালনাকে অনেক বেশি বাড়িয়ে দেয় এবং প্যারাসিম্প্যাথেটিক সিস্টেমকে থামিয়ে দেয়। এতে করে মানুষের হৃদপিণ্ড প্রভাবিত হয় এবং ঠিকভাবে কাজ করতে ব্যাহত হয়। দেখা দেয় ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোম।

হ্যাপি হার্ট সিনড্রোম

এতক্ষণ নিশ্চয় ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোমের কথা শুনে ভেবেছেন এর উল্টোটা হলে হৃদপিণ্ড ভালো থাকে? মোটেও নয়! মূলত, ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোম যতটা ক্ষতি করে আমাদের হৃৎপিণ্ডে, তারচাইতে অনেক বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে যখন আমরা অনেক বেশি খুশি হই। কারণ, এই সময় আমাদের আবেগ হৃৎপিণ্ডের গতিকে দ্রুত করে তোলে, রক্তচাপ বাড়িয়ে তোলে। এখনো পর্যন্ত চিকিৎসকেরা খুব পরিষ্কারভাবে বলতে পারেননি যে, মানুষ খুশি হলে সেটা তার শরীরের উপরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, নাকি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

জুরিখে ৪৮৫ জন রোগীর উপরে এই ব্যাপারটি নিয়ে পরীক্ষা চালানো হয়। আর তাতে বেরিয়ে আসে যে, খুব আনন্দের সময়েও অনেক ব্যক্তি টিটিএস রোগে আক্রান্ত হন। তবে তুলনা করলে ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোমের প্রভাবটাই এক্ষেত্রে বেশি দেখতে পাওয়া যায়। এই ৪৮৫ জন রোগীর মধ্যে ৪.১ শতাংশ মানুষ আনন্দের সময়ে টিটিএস-এ আক্রান্ত হয়েছিলেন। অন্যদিকে, বাকি ৯৫.৯ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন খারাপ খবর শোনার পর বা নেতিবাচক মানসিক আবেগে প্রভাবিত হওয়ার পর। মজার ব্যাপার হলো, হ্যাপি হার্ট সিনড্রোম ও ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোম- এ দুটো ব্যাপার পুরোপুরি আলাদা হলেও এদের কারণে তৈরি হওয়া এই আবেগ এবং হার্ত অ্যাটাকের লক্ষণের মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখা যায় না।

আমাদের হৃৎপিণ্ডের অসুখের পেছনে সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের কততা প্রভাব রয়েছে এবং কেন এই প্রভাব রয়েছে- তা নিয়ে খুব বেশি এখনো জানা যায়নি। তবে এই সম্পর্ক যে আছে সেতা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। অ্যামিগডালা নামে মস্তিষ্কের একটি অংশ এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা কাজ করতে পারে বলে মনে করেন চিকিৎসকেরা। তাই, হাসুন। তবে সেটাও একটু হিসেব করে!

স্বাস্থ্য-ভোগান্তি, নতুন পরিচিত অসুস্থতার কথা জানাতে অথবা চিকিৎসকের কাছ থেকে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শ পেতেই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব এবং সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যার পরামর্শ দেবার প্রচেষ্টা থাকবে আমাদের।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড