• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পিরিয়ডের প্রচণ্ড ব্যথা কি গর্ভধারণের জন্য ক্ষতিকর?

  সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি

২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:৫৮
পিরিয়ড
ছবি : প্রতীকী

প্রাকৃতিক নিয়মেই একজন নারীকে মাসের নির্দিষ্ট কিছুদিন শারীরিক কিছু সমস্যায় মুখোমুখি হতে হয়। নারীর শারীরিক এই অবস্থাকে মাসিক বা পিরিয়ড বলা হয়। সন্তান জন্মদানের জন্য এই পর্যায়ের মধ্য দিয়ে জীবনের একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত প্রতিটি নারীকেই যেতে হয়।

পিরিয়ডকালীন সময় পেটব্যথা করা অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে এই পেটব্যথা প্রচণ্ড আকার ধারণ করে। অনেকেই এক্ষেত্রে ব্যথার ওষুধ সেবন করেন। ভাবেন, এই ব্যথা তো স্বাভাবিক। হ্যাঁ, তা তো বটেই। তবে, আপনার পিরিয়ডের সময়ে হওয়া এই ব্যথা কিন্তু পরবর্তী সময়ে আপনার শরীর এবং সন্তান জন্মদানের ব্যাপারগুলোতেই ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। কীভাবে? চলুন, জেনে নেওয়া যাক পিরিয়ডকালীন সময়ে হওয়া প্রচন্ড ব্যথার কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ, যেগুলো আপনার গর্ভধারনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে-

ইউটেরাইন ফাইব্রয়েডস-

জরায়ুর দেয়ালে কোনোরকম বৃদ্ধি দেখা দিলে সেটাকে ইউটেরাইন ফাইব্রয়েডস বলে। এই ফাইব্রয়েডসের আকার এক ইঞ্চি থেকে শুরু করে আরও বড় হতে পারে। এছাড়া, ফাইব্রয়েডের সংখ্যাও ক্ষেত্রবিশেষে ভিন্ন হয়ে থাকে। অনেক নারীর জরায়ুতেই ফাইব্রয়েডস থাকতে পারে। তবে, কোনোরকম লক্ষণ না দেখা দেওয়ায় সেটি কখনোই চিহ্নিত করতে পারেন না তাদের কেউ।

হুট করে কোনো পরীক্ষার সময় এই ফাইব্রয়েড চোখে পড়ে যেতে পারে। তবে তার মানে এই নয় যে, সেটি খুব নেতিবাচক কিছু। মূলত, ফাইব্রয়েডের অবস্থানের উপর নির্ভর করে যে, এটি গর্ভধারনের ক্ষেত্রে কোনো ঝুঁকিপ্রদান করবে, নাকি করবে না।

চিকিৎসা-

আপনার শরীর থেকে ফাইব্রয়েড অপসারণ করা হবে কিনা এবং কীভাবে করা হবে তা নির্ভর করে ফাইব্রয়েডের অবস্থান, আকার এবং প্রভাবের উপর। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মায়োমেক্টামি পদ্ধতি ব্যবহার করা হলেও ল্যাপারোস্কপি ও ল্যাপারোটোমির মাধ্যমেও এই অপারেশন করা যায়। এছাড়া ফাইব্রয়েডের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসক অপারেশনবিহীন প্রক্রিয়াও ব্যবহারকরতে পারেন।

এন্ডিমেট্রিওসিস-

জরায়ুর মধ্যকার টিস্যু যখন হঠাৎ করে বাড়তে থাকে এবং জরায়ুর চারপাশের অন্যান্য অঙ্গ, এই যেমন- মূত্রনালী, ফ্যালোপাইন টিউব ইত্যাদিকে প্রভাবিত করে, তখন এই অবস্থাটিকে এন্ডিওমেট্রিওসিস বলে। এতে করে টিস্যু অনেকটা দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে যায় এবং পিরিয়ডের সময় ভাঙতে থাকে। অতিরিক্ত রক্তপাত ও পেটব্যথাও এই কারণেই হয়ে থাকে। এর প্রভাব গর্ভধারণ ক্ষমতার উপরেও প্রভাব ফেলে।

চিকিৎসা-

সাধারণত, এন্ডিওমেট্রিওসিসের চিকিৎসা কীভাবে করা হবে তা নির্ভর করে আপনার শারীরিক অবস্থা ও সন্তানের চাহিদার উপরে। মোট দুইটি উপায়ে এই সমস্যার সমাধান করা হয়। প্রথমটি হলো শরীরে হরমোন প্রবেশ করিয়ে। গোনোডোট্রোপিয়ান-রিলিজিং হরমোন জরায়ুতে এমন হরমোনের উৎপাদন কমিয়ে দেয় যেটাতে এন্ডিওমেট্রিওসিসের সমস্যা বেড়ে যায়। এতে করে ধীরে ধীরে জরায়ু থেকে ক্ষতিকর টিস্যু ছোট হয়ে যায়।

আর যদি আপনার এন্ডিওমেট্রিওসিস থাকে এবং আপনি সন্তান জন্ম দিতে চান, সেক্ষেত্রে চিকিৎসক আপনাকে অপারেশনের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করতে পারে। এক্ষেত্রে ল্যাপারোস্কোপিকালি অপারেশনের মাধ্যমে টিস্যুগুলোকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়।

ওভারিয়ান সিস্ট-

জরায়ুর গায়ে ছোট ছোট পানিভর্তি ফোলা অংশকেই সিস্ট বলা হয়। জরায়ুর গায়ে এমন সিস্ট থাকতেই পারে। তবে অনেকসময় এই সিস্টের আকার বা পরিমাণ বেড়ে গেলে সেটি পিরিয়ডের সময় প্রচন্ড ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। সবচাইতে ভয় পাওয়ার মতো ব্যাপারটি হলো, সিস্ট থেকে টিউমর ও ক্যান্সার হওয়াটাও খুব একটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

চিকিৎসা-

জরায়ুতে সিস্ট হলে সেটা নিজ থেকেই চলে যাবে। তবে, যদি আপনার ক্ষেত্রে ব্যথা অনেকদিন যাবত স্থায়ী হয় এবং সিস্ট চলে না যায় সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন। চিকিৎসক আপনাকে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল সেবন করতে বলতে পারেন। এতেও সিস্ট না কমলে সার্জারির প্রয়োজন পড়তে পারে। পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যথা হতেই পারে। তবে যদি ব্যথা খুব বেশি হয়, তাহলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন। এতে করে সুস্থ থাকবেন আপনিই!

লেখক- ডক্টর কেলি লোই, মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটাল।

স্বাস্থ্য-ভোগান্তি, নতুন পরিচিত অসুস্থতার কথা জানাতে অথবা চিকিৎসকের কাছ থেকে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শ পেতেই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব এবং সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যার পরামর্শ দেবার প্রচেষ্টা থাকবে আমাদের।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড