সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
বয়স মানুষকে বৃদ্ধ করতে পারে না। মানসিকভাবে কেউ চির তরুণ থাকতেই পারেন। আর হাসিখুশি মানুষ শারীরিক নানা সমস্যায়ও তুলনামূলকভাবে কম পড়েন। তবে, আরও অনেক যন্ত্রের মতো শরীরও এক রকমের যন্ত্র। এই যন্ত্রের সঠিক যত্ন না নিলে, একটা সময় এটিও বিগড়ে যেতে পারে।
নারীরা এক্ষেত্রে পুরুষের চাইতে কিছু বাড়তি সমস্যায় ভুগে থাকেন। বর্তমান সময়ে নারীরা স্তন ক্যান্সারের হুমকিতে ভুগে থাকেন, যেটির ঝুঁকি ৪০ বছর বয়সের পর আরও বেড়ে যায়। আপনার আশেপাশে কি এমন কোনো নারী আছেন যার বয়স ৪০ এর বেশি? আপনি কি ৪০এর ঘর পার করেছেন? যদি আরও অনেকের মতো আপনিও অনেকটা দিন বাঁচতে চান এবং সুস্থ থাকতে চান, তাহলে দ্রুত আপনার শরীর ঠিক আছে কিনা তা জানতে পরীক্ষা করুন।
নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করুন-
নারী হিসেবে ৪০ বছর বয়স পার করলে নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করুন। অন্তত, বছরে একবার চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে। তবে আপনার বয়স ৫০ বছর পেরিয়ে গেলে সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের সাথে কথা বলে দুই বছরে একবার পরীক্ষা করতে পারেন।
তবে আপনি যদি ম্যামোগ্রাম করার কথা ভাবেন, সেক্ষেত্রে আপনার বয়স আরেকটু বাড়লে এই পরীক্ষাটি করাতে পারেন। কারণ- কমবয়সী নারীদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। এছাড়া তাদের স্তন বয়স্কদের চাইতে গভীর হওয়ায় সেটির ম্যামোগ্রাম করাটা কঠিন হয়ে পড়ে।
কেন নিয়মিত পরীক্ষা করা প্রয়োজন?
প্রাথমিক পর্যায়ের স্তন ক্যান্সারকে চিহ্নিত করার জন্য ম্যামোগ্রাম করার প্রয়োজন। স্তন ক্যান্সার প্রাথমিকভাবে ধরা পড়লে সেটির চিকিৎসা করা খুব সহজ হয়। যতটা সময় যায় এটি ঠিক করে নেওয়া ততটাই কঠিন হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে ক্যান্সারের দ্বারা আক্রান্ত কোষ একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।
এসময় কেমোথেরাপি ও মাস্টেক্টোমির মাধ্যমে সুস্থ হয়ে যাওয়া সম্ভব। পরবর্তী পর্যায়ে ক্যান্সার ধরা পড়লে সেটি পুরোপুরি দূর করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুসারে, ম্যামোগ্রামি ৫০ বছরের বেশি বয়সী নারীদের স্তন ক্যান্সারের ফলে হওয়া মৃত্যুহার অন্তত ২৫ শতাংশ কমিয়ে এনেছে।
নারীরা চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না কেন?
একবার ভেবে দেখুন তো, আপনি যদি আপনার মা বা চাচীকে বলেন চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার জন্য, তাহলে তারা কি যেতে রাজি হবেন? অবশ্যই না! এক্ষেত্রে নারীরা কারণ হিসেবে দেখিয়ে থাকেন-
- নিজের অত্যাধিক ব্যস্ততাকে। - ম্যামোগ্রাম করতে গেলে ব্যথা লাগবে। - শারীরিক সুস্থতা এবং ক্যান্সারের লক্ষণের অনুপস্থিতিকে। - ক্যান্সার হওয়ার আশংকাকে।
এক্ষেত্রে তাদেরকে নিয়ে বসুন এবং কথা বলুন। আলোচনার মাধ্যমে তাদেরকে বোঝান যে, ব্যস্ততার মধ্য থেকেই সময় বের করে নিতে হবে। একটা দিনের ব্যস্ততার পরিবর্তে যদি অনেকটা বছর বেশি বাঁচা যায়, তাহলে তাতে ক্ষতি কী? আর ম্যামোগ্রাম মোটেও ব্যথা প্রদান করে না। এটি করার সময় হয়তো কেউ কেউ খানিকটা অস্বস্তিবোধ করতে পারেন। তবে, তারমানে এই নয় যে তিনি ব্যথা পাবেন।
আর শারীরিক সুস্থতা বা ক্যান্সারের লক্ষণ না থাকা মানেই কিন্তু এই নয় যে, আপনার শরীরে ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়টি নেই। যদি তার আগেই ব্যাপারটাকে সামলে নেওয়া যায়, তাহলে তো সেটা আরও ভালো। আর যদি পরীক্ষায় পাওয়া যায় যে, আপনার ক্যান্সার হয়েছে, তাহলে দ্রুত সেটার সমাধানও করা সম্ভব হবে। আপনার পরিচিত ও কাছের মানুষটিকে এই ব্যাপারগুলো বুঝিয়ে বলুন। তার সাথে হাসপাতালে যান এবং পুরোটা সময় সাথে থাকুন।
আপনি কি চান না আপনার পাশের মানুষটি আরও অনেকগুলো দিন এভাবেই আপনার পাশে থাকুক? যদি আপনি সেটা চান, তাহলে ৪০ বছর বয়স পেরোনোর পর তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান স্তন ক্যান্সারের পরীক্ষার জন্য। সচেতনতা থেকেই ক্যান্সারকে ঠেকানো সম্ভব।
সূত্র- মাউন্ট এলিবাজেথ হসপিটাল।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড