সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
ভালোবাসা দিবসের উৎপত্তি কোথা থেকে হলো তা নিয়ে নিশ্চয় অনেকটা পড়াশোনা করেছেন? তবে, ভালোবাসার জন্ম হয় যেখানে, সেই হার্ট বা হৃদপিণ্ড নিয়ে কখনো ভেবেছেন কি? নারী ও পুরুষের হৃদপিণ্ড কিন্তু একেবারেই আলাদাভাবে কাজ করে। বিশেষ করে নারীদের হৃদপিণ্ড তো পুরুষদের চাইতে একেবারেই আলাদা। কীভাবে? চলুন, আজ ভালোবাসা দিবসের এই দিনে জেনে নেওয়া যাক নারী ও পুরুষের হার্ট বা হৃদপিণ্ডের পার্থক্যগুলো!
নারী বনাম পুরুষ : হৃদপিণ্ডের অসুখ!
অনেকেই এখনো ভেবে থাকেন যে, নারী ও পুরুষের মধ্যে পুরুষই সবচাইতে বেশি হৃদপিণ্ডজনিত অসুখে ভুগে থাকেন। বাস্তবে ব্যাপারটি কিন্তু একেবারেই তা নয়। নারীরাও অনেক ক্ষেত্রে হৃদপিণ্ডের নানারকম অসুখের ঝুঁকিতে থাকেন। পুরুষের ক্ষেত্রে হৃদপিন্ডজনিত সমস্যার লক্ষণ পরিচিত হলেও, নারীদের ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যায় নানারকম লক্ষণ দেখা যায়। ফলে, তার অসুখ খুঁজে বের করাটাও কষ্টকর হয়ে পড়ে। এদিক দিয়ে দেখতে গেলে, নারীরা পুরুষের চাইতে এ সংক্রান্ত ঝুঁকিতে বেশি থাকেন।
হৃদপিণ্ডজনিত সমস্যা এবং নারী শরীরের ব্যতিক্রমধর্মী লক্ষণ-
হার্ট অ্যাটাক হলে কী হয়? নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, বুকের উপরে ভারী কিছু একটা চেপে বসে আছে এমনটা মনে হয়- এই তো? নারীদের ক্ষেত্রে সবসময় হার্ট অ্যাটাক বা হৃদপিণ্ডের যেকোন অসুখের লক্ষণ চিকিৎসকের বেঁধে দেওয়া এমন চিরাচরিত নিয়ম মানে না। হৃদপিণ্ডের সমস্যা দেখা দিলে নারীদের মধ্যে নিচের সমস্যাগুলো দেখতে পাওয়া যায়-
১। কাঁধ, পিঠ, ঘাড়, চোয়াল এবং মাঝেমধ্যে পেটেও ব্যথাবোধ হয়। ২। হুট করে বুকে ব্যথাবোধ করে, আবার খানিকটা পরেই সেটা চলে যাওয়া। এই লক্ষণকে অনেকে গ্যাস্ট্রিকের সাথেও মিলিয়ে ফেলেন। ৩। বমিভাব এবং আলো অসহ্য মনে হওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যায়। ৪। পুরো শরীর ঠান্ডা ঘামে ভিজে যেতে পারে। ৫। কোনো কাজ না করলেও প্রচন্ড ক্লান্ত লাগতে পারে।
যে সমস্যাগুলো নারীর হৃদপিণ্ডজনিত অসুখের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়-
দৈনন্দিন জীবনে খুব সাধারণ লক্ষণ মনে হলেও নারীর শরীরে থাকা ছোটখাটো নানা সমস্যা তার হৃদপিণ্ডের অসুখের সম্ভাবনাকে আরো বাড়িয়ে দেয়। এই যেমন- উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টোরল এবং স্থূলতা এক্ষেত্রে সবার ক্ষেত্রেই হৃদপিণ্ডের অবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে। তবে নারীদের ক্ষেত্রে এমন ঝুঁকিগুলো আরো নানারকম সমস্যা এই যেমন- ডায়াবেটিস, মানসিক চাপ, কম হাঁটাচলা করা ইত্যাদি থেকেও আসতে পারে।
এছাড়া, নারীরা হৃদপিণ্ডের অন্যান্য সমস্যার দ্বারা পুরুষের চাইতে বেশি ভুগে থাকেন। ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোম নামক একটি সমস্যায় নারীরা ভুগে থাকেন, যাতে করে মানসিক চাপ বেড়ে গেলে হৃদপিণ্ড কাজ করা বন্ধ করে দেয়। অন্যদিকে, পুরুষেরা নারীদের চাইতে ১০ বছর আগে হৃদপিণ্ডের অসুখে ভোগা শুরু করেন।
হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে চান?
নারী বা পুরুষ লিঙ্গভেদে আপনি যেভাবেই হৃদপিণ্ডের সমস্যায় ভোগেন না কেন, সেটি আপনার খুব বড় কোনো সমস্যা তৈরি করতে পারে। আর তাই, হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করুন।
- নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। এতে করে আপনার ওজন ঠিক থাকবে। আপনি স্থুলতার শিকার হবেন না। হৃদপিণ্ডের সমস্যা হওয়ার ঝুঁকিও অনেকটা কমে যাবে।
- ধূমপান থেকে দূরে থাকুন। এক্ষেত্রে হয়তো আপনার মনে হতেই পারে যে, ধূমপান না করলেও আমাদের হৃদপিণ্ড নানারকম সমস্যায় পড়তে পারে। তবে, ধূমপান হৃদপিণ্ডের এই সমস্যার ঝুঁকিই শুধু বাড়িয়ে দেবে।
- চর্বি ও লবণ কম খান। এছাড়া স্বাস্থ্যকর খাবার খান।
- যেকোন ওষুধ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের সাথে কথা বলে নিন। আপনি কী ওষুধ গ্রহণ করছেন সেটা আপনার শরীরে বড় রকমের প্রভাব রাখতে পারে।
আপনি নারী হোন, কিংবা পুরুষ- খানিকটা ব্যতিক্রম বাদে আপনার হৃদপিণ্ডও নির্দিষ্ট সময়গুলোতে একইরকম ঝুঁকির মুখোমুখি হবে। তাই, হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করুন। সুস্থ থাকুন!
মূল লেখক- ডক্টর স্ট্যানলি শিয়া, কার্ডিওলজিস্ট, মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটাল।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড