সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য নানারকম ওষুধ সেবন করেন? আপনি কি জানেন যে, আমাদের শরীরে যতগুলো কোষ আছে তারচাইতে দশগুণ বেশি ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। আর এই ব্যাকটেরিয়ার বেশিরভাগই বাস করে আমাদের অন্ত্রে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই! এই ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু মূলত অনেকটা এক কোষজীবী প্রাণীর মতো।
শরীরের এই ব্যাকটেরিয়াগুলো একত্রে মাইক্রোবায়োম তৈরি করে। একেকজন মানুষের মাইক্রোবায়োম একেকরকম হয়ে থাকে। সাধারণত অন্ত্রের এই ব্যাকটেরিয়াগুলো আমাদের শারীরিক অবস্থার পেছনে বড় ভূমিকা রাখে। আপনার স্বাস্থ্যের পেছনে এই মাইক্রোবায়োমই নেই তো? চলুন, জেনে নেওয়া যাক-
গাট ব্যাকটেরিয়া বা অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া কী?
গাট ব্যাকটেরিয়া হলো আমাদের অন্ত্রে বাস করে এমন ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটেরিয়া আমাদের স্বাস্থ্য খারাপ হবে না ভালো, এর পেছনে বড় ভূমিকা পালন করে। শরীরের অন্যসব স্থানে বসবাস করা ব্যাকটেরিয়াও আমাদের স্বাস্থ্যে বড় ভূমিকা রাখে। তবে সবচাইতে বেশি ভূমিকা এ ক্ষেত্রে রাখে গাট ব্যাকটেরিয়া।
মানব শরীরে গাট ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব কী?
গাট ব্যাকটেরিয়া বা অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া মানুষের শরীরে যথেষ্ট প্রভাব রাখে। এদের মধ্যে কিছু ব্যাকটেরিয়া-
১। শরীরকে পুষ্টি উপাদান, এই যেমন- ভিটামিক কে, ভিটামিন বি১২ ইত্যাদি পেতে সাহায্য করে। ২। শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা গড়ে তুলতে ও পরিচালিত করতে সাহায্য করে। ৩। পাকস্থলীর পরিপাকক্ষমতা থেকে শুরু করে নানাবিধ কার্যাবলিকে প্রভাবিত করে থাকে।
গবেষণা থেকে জানা যায় যে, অন্ত্রের নানারকম এই ব্যাকটেরিয়াগুলোর ওপরে নির্ভর করে আমাদের স্বাস্থ্যও কেমন হবে এবং রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কতটা বেশি বা কম হবে।
ক্ষুধাবোধ ও অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া :
লেপ্টিন বা পেপটাইডের মতো হরমোনগুলো আমাদের শরীর উৎপন্ন করে আমাদের ক্ষুধাবোধকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। লেপ্টিন আমাদের মস্তিষ্কে ক্ষুধার অনুভূতি কমিয়ে দেয়। অন্যদিকে পেপটাইড শরীরের খাবার গ্রহণের ক্ষমতা কমিয়ে আনে। এছাড়া এমন কিছু হরমোন রয়েছে যেগুলো আমাদের ক্ষুধাবোধকে বাড়িয়ে দেয়। আর এই হরমোন উৎপন্ন হওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়া বেশ বড় ভূমিকা রাখে। তাই বলা যায় যে, আমাদের ক্ষুধাবোধ হবে, নাকি হবে না- এর নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার হাতে থাকে।
আমাদের শরীরে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া আর কী কী প্রভাব রাখে?
গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে যে, অন্ত্রের এই ব্যাকটেরিয়া আমাদের শরীরে আরও নানাবিধ অসুখের পেছনে কাজ করে থাকে। এই রোগগুলোর মধ্যে রয়েছে-
● ক্রোহনস ডিজিজ ● আলসেরাটিভ কোলিসিস ● ইনসুলিন প্রতিরোধক্ষমতা ● কোলোন ক্যান্সার
অন্ত্রের ইতিবাচক ব্যাকটেরিয়া বাড়িয়ে তোলার উপায় কী?
অন্ত্রে ভালো ও খারাপ দুই রকমের ব্যাকটেরিয়াই থাকে। আপনি যদি চান আপনার অন্ত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এমন ব্যাকটেরিয়া বেশি জন্ম নিক, সে ক্ষেত্রে খাবারের দিকে একটু বেশি মনোযোগ দিন। কলা, পেয়াজ ইত্যাদি প্রিবায়োটিক ফাইবার আছে এমন খাবার গ্রহণ করুন।
গ্রিন টি, শস্যজাত খাবার ইত্যাদি আপনাকে এ ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। পাস্তুরিত খাবারগুলোও আপনার অন্ত্রের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখার জন্য সহায়ক ব্যাকটেরিয়া তৈরি করতে সাহায্য করবে। প্রিয়াবায়োটিক সাপ্লিমেন্টগুলোও এ ক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করতে পারে। তবে এটি গ্রহণের আগে আপনার চিকিৎসকের সাথে কথা বলে নেওয়া প্রয়োজন।
শুধু খাবার নয়, একইসাথে একটি স্বাস্থ্যসম্মত জীবনপদ্ধতি মানার চেষ্টা করুন। নিয়মিত শরীরচর্চা, পর্যাপ্ত ঘুম- এই সবকিছুই স্বাস্থ্যসম্মত জীবনের অংশ। নিজের এলোমেলো জীবনকে গুছিয়ে নিন। তাতে করে খুব সহজেই আপনার অন্ত্রের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াকে আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন আর থাকতে পারবেন আরও বেশি সুস্থ।
মূল লেখক-লী জি মিয়েন, মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটাল।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড