সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
মশার প্রকোপ বেশ বেড়ে গিয়েছে, তাই না? একইসাথে বেড়ে গিয়েছে ডেঙ্গুর পরিমাণও। ডেঙ্গু একটি মশাবাহিত রোগ। আর এই রোগটি বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক বেশি পরিমাণে ছড়িয়ে পড়েছে। আপনি জেনে অবাক হবেন যে, বছরে পুরো পৃথিবীতে প্রায় ৩৯০ মিলিয়ন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। আর এই মানুষগুলোর মধ্যে প্রায় ৯৬ মিলিয়ন মানুষ অসম্ভব অসুস্থ হয়ে পড়েন রোগটির কারণে। শুনতে খুব সাধারণ কিছু মনে হলেও আপনার জন্যেও ভয়ংকর কোনো সমস্যার নাম হয়ে যেতে পারে ডেঙ্গু। তাই চলুন, এই অযাচিত মশাবাহিত রোগটি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক-
ডেঙ্গু জ্বর কী?
ডেঙ্গু জ্বরকে ব্রেকবোন ফিভার নামেও ডাকা হয়। নারী এডিশ মশা থেকে ডেঙ্গু মানবশরীরে প্রবেশ করতে পারে। একই ভাইরাসের মোট তিনটি ধারার মাধ্যমে এই রোগ হতে পারে। খুব সাধারণ নিদর্শন থেকে শুরু করে খুব বড় ঝামেলাও হতে পারে ডেঙ্গু জ্বরের কারণে। ৭৫-৯০ শতাংশ মানুষ ডেঙ্গু জ্বরের কোনো লক্ষণই অনুভব করে না।
ডেঙ্গু সাধারণত কোন স্থানে বেশি দেখা যায়?
সাধারণত দক্ষিণপশ্চিম এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপগুলোতে ডেঙ্গুর প্রবণতা বেশি দেখা যায়। এছাড়া ল্যাটিন আমেরিকা, আফ্রিকা আর ক্যারিবিয়ান অঞ্চলেও এর প্রচণ্ডতা দেখা যায়। তবে, পৃথিবীর যেকোনো দেশেই এই অসুখ দেখা দিতে পারে।
এডিস মশার জন্ম কোথায় হয়?
সাধারণত এডিস মশা ৪০০ মিটার উপর পর্যন্ত উড়তে পারে। আর এই দূরত্বের মধ্যেই মানুষের আশেপাশে তারা থাকতে ভালোবাসে। পছন্দ করে পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়তে।
ডেঙ্গু ছড়ায় কীভাবে?
ডেঙ্গু রোগীকে কোনো মশা কামড়ালে এবং তার রক্ত পান করলে সেই মশাটিও এডিস রোগের বাহক হয়ে যায়। এরপর সেটি কোনো মানুষকে কামড়ালে মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়। এভাবেই সাধারণত এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ কী কী?
সাধারণত মশা কামড়ানোর দেড় থেকে ১০ দিনের মধ্যেই ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। যদি ব্যাপারটি গুরুতর না হয় তাহলে ২-৭ দিনের মধ্যেই লক্ষণগুলো দূর হয়ে যায়। জ্বর, মাথাব্যথা, চোখের তলায় ব্যথা, হাড় ও পেশীর সংযোগস্থলে ব্যথা, বমি, সর্দি, র্যাশ- ইত্যাদিকে ডেঙ্গু জ্বরের প্রধান লক্ষন হিসেবে গণ্য করা হয়।
এর ৩-৭ দিন পরেই বারবার বমি করা, তলপেটের ব্যথা, রক্তপাত, নিশ্বাস দ্রুত হওয়া অত্যাদি লক্ষণ দেখা যাবে রোগীর মধ্যে।
ডেঙ্গু কাদের জন্য সবচাইতে বেশি বিপদজনক?
সাধারণত, কমবয়সী শিশুরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। এছাড়া বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রেও এই রোগে বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যায়। তবে সঠিক চিকিৎসা না নিলে রোগের কারণে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে যেকোনো মানুষের।
ডেঙ্গু থেকে দূরে থাকতে কী করবো?
আপনার চারপাশে যেন মশা বসতি গড়তে না পারে সেই চেষ্টা করুন। নিজেকে মশার কামড় থেকে দূরে রাখুন। আর যদি কোনো লক্ষণ নিজের মধ্যে খুঁজে পান, যেটার কারণে ডেঙ্গু রোগ হতে পারে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন।
ডেঙ্গুর কি কোনো প্রতিষেধক নেই?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডেঙ্গুর প্রতিষেধক চালু করেছিল অনেকদিন আগেই। এরপর ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে গেলে এটি সেভাবে আর ব্যবহার করা হয় না। তবে নির্ধারিত কিছু টিকার মাধ্যমে ডেঙ্গুকে কিছুটা হলেও প্রতিরোধ করা যায়।
ডেঙ্গু চিহ্নিত কীভাবে করা যায়?
ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো চিকুনগুনিয়া, জিকার সাথে মিলে যাওয়ায় চিকিৎসকেরা এই রোগ শনাক্ত করতে রক্ত পরীক্ষা করে থাকেন।
ডেঙ্গু সাধারণত প্রচুর পানি পান, বিশ্রাম আর কিছু ওষুধের মাধ্যমেই সারিয়ে তোলা যায়। তবে তার আগে দরকার এর চিহ্নিতকরণ। আপনার শরীরে যদি ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলো দেখা যায় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন। সব ঠিক থাকলে সুস্থ হয়ে উঠবেন আপনিও!
মূল লেখক : ডক্টর লিওং হো নাম, মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটাল।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড