সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
আমাদের পুরো শরীর ভার বহন করে পা। তাই, আক্ষরিক অর্থেই শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের চাইতে পায়ের উপরে অনেক বেশি চাপ পড়ে। হাস্যকর ব্যাপার হলেও সত্যি যে, আমাদের প্রতিদিনের কাজে অতি প্রয়োজনীয় এই পায়ের যত্ন নিতেই ভুলে যাই আমরা। কখনো কখনো ইচ্ছে করেই এড়িয়ে যাই। বাস্তবে, পায়ের ছোটোখাটো কোনো সমস্যাও আমাদের পুরো দিন মাটি করে দিতে পারে। তাই চলুন, দেখে নেওয়া যাক পা ও গোড়ালির এমন কিছু সমস্যাকে যেগুলো এড়িয়ে না গিয়ে গুরুত্বের সাথে দেখা উচিত-
১। পায়ের হাড় বৃদ্ধি পাওয়া-
অনেকসময় মায়ের নানা অংশে হাড় বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটি বেশি দেখা যায়। একসময় এই হাড় বাড়তে বাড়তে ব্যথা সৃষ্টি করে। কীভাবে এমনটা হয়? অনেকে মনে করেন, পরিবারে অন্য কারো এই সমস্যা থাকলে সেটি অন্যদের প্রভাবিত করতে পারে। এছাড়া, পায়ের জন্য ক্ষতিকর জুতো, এই যেমন- হাই হিল ব্যবহার করলে এই সমস্যা আরও বেড়ে যায়।
কখনো কখনো অনেকগুলো কারণের ফলাফল হিসেবে বানিয়ন বা পায়ের হাড়ের বৃদ্ধি ঘটে। এই সমস্যাটির দ্রুত কোন সমাধান না নিলে ধীরে ধীরে আপনার পায়ের ব্যথা বাড়তে পারে। এছাড়া ত্বক ফেটে যাওয়া, হাঁটার পদ্ধতি বদলে যাওয়া- ইত্যাদি আরো অনেক ঝামেলা দেখা দিতে পারে। সমাধান দ্রুত করলে কিছু নির্দেশনা মেনে চললেই এই সমস্যা দূর হবে। তবে বেশি দেরী হয়ে গেলে আপনার পায়ে অপারেশন করার প্রয়োজন হতে পারে।
২। গোড়ালির ব্যথা-
আপনি যদি খেলাধুলা করে থাকেন, তাহলে গোড়ালির ব্যথা আপনার হতেই পারে। এছাড়া দৈনন্দিন নানা কাজের ক্ষেত্রেও এই ব্যথা তৈরি হয়। এক্ষেত্রে ভেতর থেকে আঘাত পাওয়া থেকে শুরু করে গোড়ালিতে থাকা শিরাগুলোতে টান পড়া- এমন অনেক কিছুই হতে পারে। তবে, আপনার ঠিক কী হয়েছে সেটা বুঝতে হলে চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন। আর তার আগে নিজ থেকে আরআইসিই পদ্ধতি আপনি অবলম্বন করতে পারেন। আরআইসিই বলতে এখানে-
বিশ্রাম (রেস্ট)- যেসব কাজ করলে গড়ালির ব্যথা বাড়তে পারে এমন কাজ করা, অতিরিক্ত হাঁটাচলা করা থেকে বিরত থাকুন।
বরফ ব্যবহার (আইস)- পায়ে ১৫/২০ মিনিটের জন্য বরফ ব্যবহার করুন। যতক্ষণ জেগে আছেন, প্রতি ২-৩ ঘন্টা পর পর একই কাজ করুন। তবে ডায়াবেটিস, ভাসকুলার ডিজিজ ইত্যাদি থাকলে বরফ ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের সাথে কথা বলে নিন।
চাপ দেওয়া (কমপ্রেশন)- পায়ে একটু একটু করে চাপ দিন। এজন্য কিছু একটা দিয়ে পায়ের পাতা চাপ দিয়ে বাঁধুন। শুরু করুন আঙুলের নিচ থেকে, আর শেষ করুন গরালির দিকে।
উঁচু করা (এলিভেশন)- পা একটু উঁচু করে রাখলে ব্যথাবোধ কমে যায় খানিকটা। তাই, শুয়ে থাকুন এবং পা উঁচু করে বেঁধে রাখুন।
সাধারণত এই ব্যথা ২-৩ দিনের মধ্যে চলে যায়। তবে যদি আপনার গোড়ালির ব্যথা ২-৩ দিন পরেও থাকে এবং না কমে তাহলে চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন। হতেই পারে যে, আপনার হাড় বা বাড়তি টিস্যু এই ব্যথা সৃষ্টি করছে। সমস্যা বাড়লে একটা সময় পর আপনার অপারেশনের দরকার পড়তে পারে।
সমান্তরাল পায়ের পাতা-
পায়ের পাতা সমান্তরাল হওয়ার ক্ষেত্রে বয়স একটা বড় ভূমিকা পালন করে। সাধারণত শিশুদের পায়ের পেশী বেশি নমনীয় হওয়ায় তাদের পায়ের পাতা সমান্তরাল হতেই পারে। এক্ষেত্রে অনেকে ব্যথাবোধ করে না। অনেকে হালকা জড়তা বা ব্যথাবোধ করে।
এই সমস্যা সমাধানে আপনি বাড়িতেই আপনি কিছু ব্যায়াম করতে পারেন। তবে টেন্ডন ডিসফাংশানের জন্য এমন কিছু হলে সেটা অপারেশনের দিকে নিয়ে যেতে পারে। পা ফেলতে না পারা, পায়ের নিচের ফাঁকা স্থান কমে যাওয়া, ব্যথা ইত্যাদি এই সমস্যার মূল লক্ষণ।
কী? আপনার কি এমন কোনো সমস্যা রয়েছে? তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন আর বড় রকমের কোন সমস্যা থেকে দূরে থাকুন সহজেই।
মূল লেখক- কান্নান কালিয়াপেরুলাম, অর্থোপেডিক সার্জন, মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটাল
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড