সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
কিডনির পাথর সাধারণত নিজ থেকেই শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু কোনো কারণে যদি এই পাথর জমাট বেঁধে যায় এবং স্বাভাবিক নানা কাজকর্মে সমস্যা সৃষ্টি করে, সেক্ষেত্রে পাথর অপসারন করার দরকার পড়ে। এজন্য অস্ত্রোপচারের সাহায্য নেওয়া হয়। আপনার কি কিডনি স্টোন বা কিডনির পাথর আছে? কী করবেন আপনি এক্ষেত্রে? চলুন দেখে নেওয়া যাক এ সংক্রান্ত খুঁটিনাটি তথ্যগুলো-
কিডনির পাথর কী?
কিডনির পাথর বলতে আমরা যেটাকে বুঝি সেটা মূলত ক্যালসিয়াম, লবণ অথবা অন্যান্য খনিজ জমে গিয়ে কিডনিতে সৃষ্টি হওয়া শক্ত পদার্থ। কিডনিতে পাথর হওয়ার বেশ কিছু সম্ভাব্য কারণ থাকতে পারে। এই যেমন-
● পানিশূন্যতা ● খাবারে অনিয়ম ( যেমন- অতিরিক্ত পরিমাণ লবন গ্রহন করা) ● অতিরিক্ত মেদ ● পাকস্থলীতে প্রদাহ ● টাইপ ২ ডায়াবেটিস ● কিডনির সমস্যা, যার মাধ্যমে ক্যালসিয়াম অতিরিক্ত পরিমাণে উৎপাদিত হয় ● মূত্রে কিছু নির্দিষ্ট রাসায়নিক পদার্থের অতিরিক্ততা ইত্যাদি।
কিডনির পাথর হলে আপনি পিঠে ব্যথা অনুভব করতে পারেন। এছাড়া মূত্রত্যাগের পরিমাণ বাড়তে পারে। তবে মূত্রত্যাগের সময় ব্যথাবোধ করা এবং প্রস্রাবের সাথে রক্তপাত হতে পারে। এমন সমস্যাগুলো দেখা দিলে চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন এবং দ্রুত ব্যবস্থা নিন। কিডনির পাথর যে কারো হতে পারে। তাই এ ব্যাপারে খুব বেশি চিন্তা করার কিছু নেই। বরং, লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে নেওয়াই ভালো।
কিডনিতে পাথর সরানোর প্রক্রিয়া কী?
কিডনির পাথর বের হওয়ার প্রক্রিয়াটিতে যে পরিমাণ ব্যথা বোধ হয় যেটাকে সন্তান জন্মদানের সাথে তুলনা করা হয়। তবে আপনি যদি ব্যাপারটি টের পেয়ে যানে এবং চিকিৎসকের সাহায্য নিয়ে থাকেন, তাহলে ব্যাপারটি আপনার জন্য সহজও হয়ে উঠতে পারে। বর্তমানে কিডনির পাথর অপসারণের জন্য, বিশেষ করে ছোট আকৃতির পাথর সরাতে চিকিৎসকেরা এক্সট্রাকরপোরেল শক ওয়েভ লিথোট্রিপসি বা ইএসডব্লিউএল ব্যবহার করে থাকেন।
এক্ষেত্রে, তরঙ্গের সাহায্য কিডনির পাথরকে ভেঙ্গে ফেলা হয়। তারপর সেই ছোট টুকরোগুলো মূত্রনালী দিয়ে বের করে আনা হয়। সাধারণত, এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে ৪৫ মিনিট প্রয়োজন হয়। এরপর চিকিৎসকের কথানুসারে কিছু ওষুধ সেবন করলেই ব্যথা দূর হয়ে যায় ২-১ দিনের ভেতরেই।
কিডনির পাথর অপসারণের ক্ষেত্রে ইএসডব্লিউএলকে সবচাইতে নিরাপদ প্রক্রিয়া বলে মনে করা হয়। এতে কোনো অপারেশনের দরকার হয় না। এছাড়া এর ফলে শারীরিক সমস্যাও হওয়ার সম্ভাবনা তেমন থাকে না। যদিও প্রক্রিয়াটির পর প্রস্রাবের সাথে খানিকটা রক্ত আসতে পারে। তবে সেটা কিছুদিনের জন্যই। সংক্রমণ বা প্রদাহের মত কোনো সমস্যা এতে করে হয়ে থাকলেও সেটা খুবই বিরল।
তবে এছাড়াও পাথর যদি একটু বেশি সমস্যা করে থাকে তাহলে সেটি অপসারণে ইউরেটেরোস্কোপি ব্যবহার করেন চিকিৎসকেরা। এতে করে একটি পাতলা নল প্রবেশ করান হয় এবং লেজারের মাধ্যমে পাথর ভেঙ্গে ফেলা হয়। এরপর ধীরে ধীরে পাথর বের করে নিয়ে আসা হয়। এসময় রোগীকে অজ্ঞান করে রাখা হয়।
তাই আপনি যদি ব্যথা পাবেন বলে ভয় পান তাহলে ভয় পাবেন না। এতে করে কোনোরকম ব্যথা রোগী বোধ করেন না। এছাড়াও পিসিএনএল নামক আরেকটি সার্জারির মাধ্যমে কিডনির পাথর দূর করা সম্ভব। এক্ষেত্রে, পিঠে ছোট্ট একটা অপারেশন করার দরকার পড়ে। সরাসরি কিডনি থেকেই পাথর অপসারণ করা হয় এই সার্জারির মাধ্যমে। মূলত, আপনার পাথরের আকৃতি কেমন তার উপরে নির্ভর করে চিকিৎসক কোন পদ্ধতিটি ব্যবহার করবেন।
কিডনির পাথর অপসারণের খরচ নিয়ে অনেকেই ভেবে থাকেন। এক্ষেত্রে আপনি কোন হাসপাতালে যাচ্ছেন, কোন চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন এবং কোন পদ্ধতিটি ব্যবহার করছেন- এই সবগুলো ব্যাপার গুরুত্ব রাখবে। কিডনির পাথর মোটেও খুব একটা অবহেলা করার মতো ব্যাপার নয়। তাই, এমন কিছু হলে দেরী না করে চিকিৎসকের কাছে চলে যান।
মূল লেখক- ডক্টর মিশেল অং, ইউরোলজিস্ট, মাউথ এলিজাবেথ হসপিটাল
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড