সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
শীতে ঠান্ডা লাগা, আর সেখান থেকে খুব বাজে ধরনের কোনো অসুখ হয়ে কফের সাথে রক্ত আসা- এ দুটো খুব স্বাভাবিক ঘটনা। যদি একটু সতর্কতার অভাব হয়, তাহলেই এমন ঘটনা ঘটতে পারে। আপনারও কি কফের সাথে রক্ত আসছে ইদানীং? চলুন দেখে নেওয়া যাক সমস্যাটির খুঁটিনাটি ও প্রতিকার-
রক্তবমি আর কফে রক্ত আসা কি এক?
একেবারেই না! রক্তবমি আর কফে রক্ত আসা একেবারেই আলাদা ব্যাপার। অনেকে এই দুটো ব্যাপারকে এক ভেবে থাকেন। কফে রক্ত আসার ক্ষেত্রে মূলত আঠালো কফ এবং তাতে রক্তের ছিটাকেই বোঝায়। কখনো এই রক্তের পরিমাণ বেশি হয়ে যায়। কিন্তু রক্তবমির ক্ষেত্রে সমস্যা পাকস্থলীতে হয়। এতে করে রক্তের সাথে খাবারের অংশও বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। কখনো এই রক্ত কালো হতে পারে, কখনো স্বাভাবিক রঙের হতে পারে। সাধারণত, হজমের সমস্যা এবং পাকস্থলীর নানা সমস্যার কারণেই এমনটা হয়ে থাকে। অন্যদিকে কফে রক্ত আসার পেছনে থাকে পুরোপুরি অন্য কারণ।
কফে রক্ত আসার রকমভেদ-
কফে রক্ত আসতেই পারে। তবে এই রক্তেরও আছে নানারকম। এই যেমন-
কফে যদি হালকা রক্তের ছিটে দেখা যায়, তাহলে এর সম্ভাব্য কারণ হতে পারে- ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া এবং টিউবারকুলোসিস। এ ক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের সাথে দেখা করাটাই শ্রেয়।
হালকা গোলাপি রঙের কফ আসলে এর সম্ভাব্য কারণ হতে পারে ফুসফুসের কোনো সমস্যা। এ ক্ষেত্রে আপনার শরীরে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ও চিন্তা করার মতো রোগ বাসা বাঁধতে পারে। এ ক্ষেত্রেও দ্রুত চিকিৎসকের সাথে দেখা করুন।
কফে যদি পুরোটা রক্ত দেখা যায় তাহলে আপনার টিবি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ ক্ষেত্রে রক্তনালীর নষ্ট হওয়া বা ফুসফুসের ক্যান্সার বড় কারণ হতে পারে। সমস্যার সমাধানে চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন।
এছাড়াও যদি আপনার মধ্যে-
১। সর্দিতে রক্ত আসা ২। বুক ব্যথা ৩। ওজন হ্রাস পাওয়া ৪। রাতের বেলায় অতিরিক্ত ঘাম ৫। সাধারণ কাজকর্ম করার সময় শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি সমস্যা দেখা যায়, তাহলেও চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন।
কফে রক্তপাতের পেছনে আরও অনেক কারণ, এই যেমন- ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া, ফুসফুসে টিউমর বা ক্যান্সার, হৃদপিণ্ডের সমস্যা, পালমোনারি এমবোলিজম, পাকস্থলী বা অন্যান্যস্থানে প্রদাহ ইত্যাদি থাকতে পারে।
সমস্যা চিহ্নিত করবেন কীভাবে?
এগুলোর মধ্যে আপনার কফে রক্ত আসার কারণ কোনটি সেটা জানতে চিকিৎসকেরা-
● আপনার পরিবারে এমন সমস্যা আগেও ছিল কি না সেটা জানার চেষ্টা করবেন।
● সমস্যা আরও ভালোভাবে বুঝতে এক্স রে, সিটি স্ক্যান এবং ইউরিন টেস্ট করতে হতে পারে।
● বাড়তি কিছু পরীক্ষা, এই যেমন- ব্রোংকোসকপি ( নাক বা মুখের মধ্য দিয়ে পাইপ প্রবেশ করিয়ে ভেতরটা দেখা হবে, যাতে করে সেখানে কোনো সমস্যা আছে কি না তা বোঝা যায়), পালস অক্সিমেট্রি ( শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ বোঝার জন্য), নানারকম রক্তপরীক্ষা ইত্যাদি করবেন।
● এই সমস্যার প্রতিকার হিসেবে রক্তপাত বন্ধ করতে চিকিৎসকেরা আপনাকে কিছু ওষুধ দিতে পারেন। তবে সবক্ষেত্রে ওষুধ কাজ করবে এমনটা নয়। সে ক্ষেত্রে, কেমোথেরাপি বা স্টেরয়েড নেওয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে।
তবে হ্যাঁ, এই সবগুলো পদ্ধতি ব্যবহার করে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব, যদি আপনি দ্রুত চিকিৎসকের সাথে দেখা করেন। যতটা দেরি করা হবে, এ ক্ষেত্রে সমস্যা আরও বেশি বাড়বে। তাই, আপনার যদি কফে রক্ত আসার এমন সমস্যা থাকে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন।
মূল লেখক- ডক্টর কেনেথ চ্যান, গ্লেনাগ্লেস হসপিটাল।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড