মাহমুদা আক্তার রোজী, ফিজিওথেরাপিস্ট
এমন মানুষ হয়ত পৃথিবীতে পাবেন না যিনি তার জীবনে একবারও কোমরে ব্যথা অনুভব করেননি। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে সারা বিশ্বে ৮০ ভাগ প্রাপ্ত বয়স্ক লোক জীবনে কোনো না কোনো সময় কোমর ব্যথায় আক্রান্ত হয়। এই ব্যথা মানুষকে ভীষণ কষ্টে ফেলে দেয়। অনেকে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন বা স্বাভাবিক কাজ কর্ম করতে পারে না। কোমর ব্যথা অবহেলার বিষয় নয়। প্রাথমিক পর্যায়ে এই ব্যথা নির্মূল করতে না পারলে রোগীকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, এমনকি জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।
কারণ :
অনেকক্ষণ বসে বসে কাজ করা কিংবা নিচু হয়ে ভারী কোনো কিছু তোলার কারণে।
● হাড় ক্ষয় জনিত রোগ, যাকে বলে লাম্বার স্পনডাইলোসিস অর্থাৎ হাড় ক্ষয় হয়ে যাওয়া কিংবা বেড়ে যাওয়ার কারণে অথবা হাড় ফাঁকা হয়ে যাওয়া।
● ডিস্ক পলাপ্স; দুটি কশেরুকা বা হাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে জেলীর মতো ডিস্ক সরে গেলে তা পার্শ্ববর্তী নার্ভ বা স্নায়ুর গোড়ায় চাপ পড়লে।
● স্নায়ুচাপজনিত ব্যথা। এই ব্যথা কোমর থেকে পায়ের গোড়ালীতে চলে যেতে পারে। ব্যথা পায়ে বেশি অনুভূত হয়। একটানা বেশি হাটা-হাটি, দাঁড়িয়ে ও সামনের দিকে ঝুঁকে থাকলে এ ব্যথা আরও বেড়ে যায়।
● আঘাত জনিত ব্যথা।
● মেরুদন্ডে টিউমার, ইনফেকশন, টিবি হলে।
● মাংসপেশী শক্ত হয়ে যাওয়া।
● মেরুদন্ডের কাঠামো ঠিকমত না রাখা।
● মাংসপেশী দুর্বল হয়ে যাওয়া।
● শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া।
● দু:শ্চিন্তা ও সাইকোলজিক্যাল সমস্যা।
● গর্ভকালীন সময়ে কোমরে ব্যথা হতে পারে।
উপসর্গ :
● প্রাথমিক অবস্থায় কোমরে তীব্র ব্যথা অনুভূত হওয়া। কোমরের ব্যথা আস্তে আস্তে বাড়তে পারে অথবা হঠাৎ প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে।
● কোমরে ব্যথা কখনও কখনও কোমরে থাকে আবার কখনও কখনও পায়ের দিকে ছড়িয়ে পড়ে।
● পা ঝিন ঝিন বা জ্বালাপোড়া করা।
● সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে পা ফেলতে সমস্যা হতে পারে।
আরও পড়ুন : ট্রিগার ফিঙ্গার : আঙ্গুল না খোলার সমস্যা!
● পায়ের মাংসপেশী শুকিয়ে যাওয়া।
● পা অবশ ও ভারী হয়ে যাওয়া।
● পায়ের শক্তি কমে যাওয়া।
● মাংসপেশী মাঝে মাঝে চিবানো বা সংকোচিত হয়ে যাওয়া।
● স্বন্ধির কার্যক্রম ক্ষমতা কমে যেতে পারে।
● একটানা বেশিক্ষণ হাঁটলে ও দাঁড়িয়ে থাকলে ব্যথা বেড়ে যেতে পারে।
চিকিৎসা :
ফিজিওথেরাপি : কোমর ব্যথাজনিত সমস্যার অত্যাধুনিক চিকিৎসা হচ্ছে ফিজিওথেরাপি। এই চিকিৎসায় ইলেকট্রোথেরাপি, যেমন- ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন, আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, লাম্বার ট্রাকশন, শর্টওয়েভ ডায়াথার্মি, অতিলোহিত রশ্মি, ইন্টারফেরেনশিয়াল থেরাপি, ইনফারেড রেডিয়েশন, ট্রান্স কিউটেনিয়াস ইলেকট্রিক নার্ভ ইস্টিমুলেটর, ইলেকট্রিক নার্ভ ও মাসেল ইস্টিমুলেটর, অটো মেনুয়াল ট্রাকশন, হাইড্রোথেরাপি, লেজার থেরাপি চিকিৎসা করা হয়।
এছাড়া রোগীর ফিজিক্যাল এক্সামিনেশন করে, কোমর ব্যথার সঠিক কারন নির্ণয় করে অবস্থা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ব্যায়ামের মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়া হয়। একজন অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিষ্ট বিশেষজ্ঞ রোগীর কোমর ব্যথা প্রতিরোধে সঠিক চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
সার্জারি : যদি দীর্ঘদিন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নেবার পরেও রোগীর অবস্থার পরিবর্তন না হয় রোগীকে অবস্থা অনুযায়ী কোমর-মেরুদন্ডের অপারেশন বা সার্জারির করনোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। সার্জারির পরবর্তীতে রোগীকে বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টের নির্দেশ মতো নির্দিষ্ট ব্যায়াম দীর্ঘ দিন চালিয়ে যেতে হয়।
সচেতন হোন। সুস্থ থাকুন।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড