সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
আপনার শিশু কি কানে শুনতে পাচ্ছে না ঠিক করে? অনেকে ভেবে থাকেন, বাবা বা মায়ের কাছ থেকে এ ধরনের সমস্যা একটি শিশু পেতে পারে। কথাটি সত্যি। জিনগত সমস্যা এক্ষেত্রে কারণ হিসেবে কাজ করতে পারে। তবে এছাড়াও কিছু কারণ আছে যেগুলো একটি শিশুকে বধির হয়ে উঠতে সাহায্য করে। সেগুলো হলো-
১। গর্ভকালীন সময়ে মায়ের কোনো রকম আঘাত পাওয়া। ২। কম ওজন নিয়ে জন্ম নেওয়া বা জন্ডিসে আক্রান্ত হওয়া। ৩। ডেলিভারির সময় অক্সিজেনের স্বল্পতা থাকা এবং ৪। গর্ভকালীন সময়ে মায়ের অত্যাধিক পরিমাণ মাদক সেবন করা।
এছাড়াও বেড়ে ওঠার সময়ে হওয়া কিছু ব্যাপার, এই যেমন-
কানে বা মাথায় আঘাত পাওয়া, অতিরিক্ত শব্দের সম্মুখীন হওয়া, ওটিটিস মিডিয়া এবং ওষুধের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদি একটি শিশুর বধির হওয়ার পেছনে দায়ী হতে পারে।
অনেক ক্ষেত্রে, কেন শিশু কানে কম শুনছে সেটার কারণ সঠিকভাবে নির্ধারণ করাই সম্ভব হয় না।
কানে কম শোনার নানা পর্যায়-
কানের গঠন বেশ জটিল। এতে মোট তিনটি ভাগ আছে। একটি সামনের অংশ, একটি পেছনের এবং অন্যটি হলো মধ্যভাগ। আর এই পুরো ব্যাপারটির সাথে মস্তিষ্ক জুড়ে থাকে একটি স্নায়ুর মাধ্যমে। কানে না শোনার কারণ এই কোনো একটি ভাগের সমস্যার ফলাফল হতে পারে।
হতে পারে যে, সমস্যাটি মস্তিষ্কের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে হচ্ছে। আবার এমনটাও হতে পারে যে পুরো সমস্যাটি এই দুটো ব্যাপারের মিশ্রণ। তবে এই সবকিছু মিলিয়ে কম থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ কানে না শোনা পর্যন্ত কয়েকটি পর্যায় রয়েছে। চলুন, দেখে নেওয়া যাক সেগুলো-
১। মৃদু শ্রবণশক্তিজনিত সমস্যা-
এক্ষেত্রে শিশু সাধারন সব কথা শুনতে পারবে। তবে, অনেক বেশি আওয়াজ থাকলে কিছুই শুনতে পারবে না।
২। মধ্যম শ্রবণশক্তিজনিত সমস্যা-
এতে করে শিশু তখনই কথা শুনতে পাবে যখন বক্তা তার খুব কাছে থাকবেন।
৩। বড় রকমের শ্রবণশক্তিজনিত সমস্যা-
এক্ষেত্রে শিশুর কথা শুনতে হলে যন্ত্রের সাহায্য নিতে হবে।
৪। দীর্ঘস্থায়ী শ্রবণশক্তিজনিত সমস্যা-
এই সমস্যায় শিশু কিছুই শুনতে পাবে না। এই অবস্থায় তাকে প্রায় বধির বলে দেওয়া যায়।
কীভাবে বুঝবেন আপনার শিশুর শ্রবণশক্তিজনিত সমস্যা আছে?
সাধারণত, শিশু জন্মের পর তার শ্রবণশক্তিজনিত কোনো সমস্যা আছে কিনা তা দেখার জন্য চিকিৎসকেরা পদক্ষেপ নেন। এই পরীক্ষায় উৎরে গেলে তো কোনো কথাই নেই। তবে যদি কোনো সমস্যা দেখতে পান চিকিৎসকেরা, সেক্ষেত্রে শুরু থেকেই যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে।
অন্যদিকে, এমন না যে কোনো শিশু জন্মের পর ঠিকঠাকভাবে শুনতে পাচ্ছে বলেই পরবর্তী সময়ে তার শ্রবণজনিত কোনো সমস্যা হবে না। এক্ষেত্রে আপনার সন্তানের কথা শুনতে সমস্যা হচ্ছে কিনা সেটা আপনি বুঝতে পারবেন-
১। সে আপনার কোনো কথার জবাব না দিলে বা প্রতিক্রিয়া না দেখালে। ২। সে নিজে নিজে কথা না বললে। ৩। বজ্রপাত বা বড় রকমের কোনো শব্দে আপনার শিশু কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখালে।
এছাড়াও-
৩ মাস বয়সে আপনার শিশু ঘাড় ঘুরাতে পারবে এবং আপনার কথার উত্তরে হাসতে পারবে।
৬ মাস বয়সের মধ্যে আপনার শিশু শব্দ হয় এমন খেলনা দিয়ে খেলবে এবং একই আওয়াজ বারবার করতে থাকবে।
৬-১২ মাসের মধ্যে আপনার শিশু ভাঙা ভাঙাভাবে তার কথা বলতে শুরু করবে।
১৫-১৮ মাসের মধ্যে আপনার শিশু সহজ কয়েকটি কথা বলতে পারবে।
এগুলো যদি না হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে আপনি একটু চিন্তিত হয়ে পড়েতেই পারেন। এছাড়া কানে কম শুনলে আপনার শিশুও হতাশ, মনমরা হয়ে পড়বে। তার শরীরে জ্বর দেখা দিতে পারে। নিজের কানে বারবার সে হাত দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে।
এমন সমস্যা হলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করুন। অপারেশন, ওষুধ বা যন্ত্র হতে পারে আপনার শিশুর কানের সমস্যা দূর করার উপায়। যে পদ্ধতিতেই কাজ হোক না কেন, সেটা যেন খুব দেরী করে শুরু না হয় সেই চেষ্টা করুন।
মূল লেখক- ডক্টর লো ওং কেইন, ইএনটি বিশেষজ্ঞ, মাউন্ট এলিজাবেথ নোভেনা হসপিটাল।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড