• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ডিপথেরিয়া রোগ : লক্ষণ, প্রতিকার ও চিকিৎসা

  ডা. মোঃ সাইফুল ইসলাম

০৬ অক্টোবর ২০১৮, ১৫:৪৬
ডিপথেরিয়া
ডিপথেরিয়া

ডিপথেরিয়া ব্যাকটেরিয়া ঘটিত মারাত্মক রোগ যা গলা ও নাকের মিউকাস মেমব্রেন বা শ্লেষ্মা ঝিল্লিতে প্রদাহ সৃষ্টি করে। Corynebacterium diphtheriae নামক ব্যাকটেরিয়া ডিপথেরিয়ার জন্য দায়ী। এই রোগে গলার নিম্নাংশে পুরু পর্দার আচ্ছাদন (ডিপথেরিক মেমব্রেন) পড়ে। ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এই রোগে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়া, প্যারালাইসিস, কিডনি নষ্ট হতে পারে এবং রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। আরেক ধরনের ডিপথেরিয়ার প্রদাহে শরীরের ত্বক আক্রান্ত হতে পারে। যদিও এই রোগ সহজেই একজন থেকে অন্যজনে ছড়াতে পারে তথাপিও এটি টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়।

ডিপথেরিয়া রোগটি প্রায় সকল বয়সেই হতে পারে। তবে শিশুরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। সাধারণত পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু ও ৬০ বছরের অধিক বয়সী মানুষ এ রোগে বেশি আকান্ত হয়ে থাকে।

লক্ষণ :

ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ২-৫ দিনের মধ্যে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। অনেকের মাঝে আবার লক্ষণ নাও প্রকাশ পেতে পারে। আবার অনেকের কাছে সাধারণ সর্দির মতো লক্ষণ প্রকাশ পায়।

তবে ডিপথেরিয়ার দৃশ্যমান অতি সাধারণ উপসর্গ হচ্ছে গলা ও টনসিলে ধূসর পর্দা পড়া। এগুলো ছাড়াও জ্বর, শরীর ঠাণ্ডা হওয়া, ঘাড়ের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া, ভীষণ কাশি, গলা ব্যথা, নীলচে ত্বক, লালা ঝরা ইত্যাদি লক্ষণও প্রকাশ পায়।

এই ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের পর মারাত্মক টক্সিন নির্গত করে। এই টক্সিন রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন অঙ্গ যেমন- হৃদপিণ্ড, মস্তিষ্ক, কিডনি ইত্যাদি অঙ্গের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। ফলে হৃদপিণ্ডের পেশি প্রদাহ বা মায়োকার্ডাইটিস, প্যারালাইস ও কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।

ঝুঁকির কারণ :

কিছু কারণে এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। কারণগুলো হচ্ছে –

• টিকার বুস্টার ডোজ না নেওয়া। • ঝুঁকিপূর্ণ দেশে ভ্রমণ করা। • যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম আছে। যেমন - এইডস আক্রান্ত রোগী। • অস্বাস্থ্যকর ও ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীরা এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার জন্য অধিক ঝুঁকিতে থাকেন।

প্রতিকার :

টিকা প্রদানের মাধ্যমে ডিপথেরিয়া প্রতিরোধ করা যায়। ডিপথেরিয়ার টিকাকে বলে DTaP। এই টিকা প্রদান করলে বাচ্চার ডিপথেরিয়া, ধনুষ্টঙ্কার ও হুপিংকাশি রোগেরও প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মাবে। এই টিকা ২ মাস, ৪ মাস, ৬ মাস, ১৫-১৯ মাস ও ৪-৬ বছর বয়সে দিতে হয়।

এই টিকার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকবে ১০ বছর পর্যন্ত। তাই ১২ বছর বয়সের কাছাকাছি আবারও টিকার বুস্টার ডোজ দিতে হবে। তবে এ সময় ধনুষ্টঙ্কার-ডিপথেরিয়ার (Td) টিকা নিতে হয় যা, প্রতি ১০ বছর অন্তর অন্তর পুনরায় নেওয়া লাগবে।

চিকিৎসা :

এই রোগে আক্রান্ত রোগীকে এন্টি-টক্সিন দিতে হয়। এই এন্টি-টক্সিন মাংসপেশীতে প্রয়োগ করতে হয়। এন্টি-টক্সিন দেওয়ার পূর্বে চিকিৎসকরা এলার্জি টেস্ট করতে পারেন। কারণ রোগী সংশ্লিষ্ট টক্সিনের প্রতি সংবেদনশীল কিনা তা জানার প্রয়োজন পড়ে। এজন্য প্রথমে কম মাত্রায় এন্টি-টক্সিন ব্যবহার করতে হয়। পরে ধীরে ধীরে মাত্রা বৃদ্ধি করতে হয়।

রোগ সন্দেহ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায়, না বুঝে ওষুধ প্রয়োগের কারণে রোগ ভাল না হয়ে ভিন্ন কোনো রোগ ডেকে আনতে পারেন।

চিকিৎসার জন্য এন্টি-টক্সিন ছাড়াও এন্টিবায়োটিকও দেওয়া হয়। এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হলে ডিপথেরিয়ার জীবাণু মারা যায়। ডিপথেরিয়া আক্রান্ত হলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো জরুরি হতে পারে। গলায় ধূসর পর্দা থাকলে চিকিৎসকরা তা সরানোরও ব্যবস্থা করতে পারেন।

তথ্যসূত্র : হেলথ লাইন ডট কম, সিডিসি।

স্বাস্থ্য-ভোগান্তি, নতুন পরিচিত অসুস্থতার কথা জানাতে অথবা চিকিৎসকের কাছ থেকে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শ পেতেই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব এবং সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যার পরামর্শ দেবার প্রচেষ্টা থাকবে আমাদের।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড