স্বাস্থ্য ডেস্ক
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের ভয়াল থাবার মাঝে ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইউনিসেফের বরাত দিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে এক কথিত পরামর্শ। তাতে বলা হয়েছে, ঘন ঘন পানি খেলে করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর জীবাণু সরাসরি পেটে পৌঁছে যাবে, তারপর পাকস্থলির অম্লরস একে ধ্বংস করে ফেলবে।
এই পরামর্শ কতটুকু বিজ্ঞানসম্মত?
বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি চুলচেরা বিশ্লেষণ করে বিবিসি জানিয়েছে, এটা নিছকই একটি গুজব। ঘন ঘন পানি পান করলেই করোনা ভাইরাস মরছে না।
কী করলে কোভিড-১৯ থেকে রেহাই মিলবে তা নিয়েও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে নানা টোটকা-ফোটকা। কোথাও বলা হয়েছে- আইসক্রিম খাওয়া যাবে না কোনোভাবেই।
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক তহবিল ইউনিসেফ থেকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে- এমন কথা কোথাও কোথাও বলা হলেও তা মোটেও সত্যি নয় বলে জানিয়েছে বিবিসি। এর মধ্যে বিবিসির ওই প্রতিবেদনে ব্লিচিং পাউডার পানিতে গুলে খাওয়ার গুজবটিকে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
প্রায় তিন মাস ধরে বিশ্বব্যাপী দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাস ইতোমধ্যেই কেড়ে নিয়েছে ১৩ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণ। মহামারিতে রূপ নেওয়া এই ভাইরাসে আক্রান্ত তিন লাখেরও বেশি মানুষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা ভাইরাস নিয়ে নানা গুজব আর আতঙ্ক এর ক্ষতির ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দিচ্ছে। ঘন ঘন পানি পানে কোভিড-১৯ রোগের ভাইরাস পেটে গিয়ে মরে যাবে বলে যে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে, সেটি বিজ্ঞানসম্মত দেখাতে একটি যুক্তিও তুলে ধরা হয়েছে।
তাতে বলা হয়েছে, আমাদের মুখ ও গলা সবসময় আর্দ্র রাখা জরুরি। তাই প্রতি ১৫ মিনিট পর পর পানি পান করতে হবে। এর ফলে মুখে বা গলায় থাকা ভাইরাস পানির সঙ্গে খাদ্যনালী বেয়ে পাকস্থলিতে নেমে যাবে। পরে পাকস্থলির এসিড সেই ভাইরাসকে ধ্বংস করে ফেলবে। তবে অনলাইনের এই তথ্যকে নাকচ করে দিয়েছেন লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিনের ক্লিনিকাল অ্যাপিডেমিওলজিস্ট কল্পনা সাবাপাঠী।
বিষয়টির ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, সংক্রমণ যখন শুরু হয় তখন হাজার হাজার বা লাখ লাখ ভাইরাস শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। তাই পানি খেয়ে সামান্য কিছু ভাইরাস পেটে চালান করে দিলেই এ থেকে মুক্তি মিলছে না।
তাছাড়া এই ভাইরাস ততক্ষণে নাকের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আর ভাইরাস যদি তখন শ্বাসনালীকে সংক্রমিত না করেও থাকে, তবুও এই শঙ্কা থেকেই যায় যে, অন্য কোনোভাবে তা শরীরে প্রবেশ করবে। কেউ কেউ ভাইরাস লেগে থাকা আঙ্গুল দিয়ে নাক-মুখ-চোখ স্পর্শ করলেও আক্রান্ত হবেন।
তবে মূল ঝুঁকিটা এখানে নয়। ঝুঁকির বিষয়টি হলো- কেউ হাঁচি দিলে বাতাসে যে কফের কণা ছড়িয়ে পড়ে তাতে হাজারো ভাইরাস থাকতে পারে। নিঃশ্বাস নিতে গিয়ে অন্য কেউ তা থেকে সংক্রমিত হতে পারেন সহজেই। আর পাকস্থালিতে থাকা এসিডের পিএইচ মাত্রা থাকে এক থেকে তিন, যা কি না একটি ব্যাটারিতে থাকা এসিডের মতো শক্তিশালী এবং স্টিলকেও দ্রবীভূত করতে সক্ষম।
এ দিকে, গবেষকরা জানিয়েছেন- নতুন করোনা ভাইরাস দ্রবীভূত এসিডে খুব একটা কাবু হয় না। ভাইরাসটি পাকস্থলিতে শুধু যে টিকে থাকে তাই নয়, বরং অন্ত্রে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এভাবেও একজন ব্যক্তি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হতে পারেন।
এর মধ্যে আক্রান্তদের কারও কারও বমি ও ডায়রিয়ার খবর জানার পর চীনা বিশেষজ্ঞরা নতুন করে হুঁশিয়ারি দেন, তাদের পরিপাকতন্ত্রও সংক্রমিত হয়েছে।
তাদের দাবি, এখন পর্যন্ত কোনো গবেষণাতেই প্রমাণ হয়নি যে পানি পানে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঠেকানো যায়। মানুষকে আতঙ্কিত করা ছাড়া ওই গুজব আর কোনো কাজে আসবে না।
আরও পড়ুন : করোনার ভয়াল থাবা থেকে বাঁচাবে ঘুম!
তবে ১৫ বছর আগের একটি গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বিবিসি লিখেছে, জাপানে পানি দিয়ে কুলকুচি করা একটি জনপ্রিয় চর্চা এবং এর মধ্যে দিয়ে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ রোধ করা যায় বলে মনে করা হয়।
ওই গবেষণায় দেখা যায়, টানা দুই মাস যারা প্রতিদিন তিন বেলা পানি দিয়ে কুলকুচি করেছেন, তাদের মধ্যে শ্বাসতন্ত্রে জটিলতা দেখা দিয়েছে অন্যদের চেয়ে কম। তবে এই পদ্ধতি করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রেও পুরোপুরি কার্যকর হবে এমনটা জোর গলায় বলতে চান না বিশেষজ্ঞরা।
ওডি
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড