• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

করোনা ভাইরাসে শিশুরা কম আক্রান্ত হচ্ছে কেন?

  মো. সাইফুল ইসলাম

১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১১:০৩
করোনা ভাইরাস
ছবি : সংগৃহীত

সম্প্রতি ছড়ানো নোভেল করোনা ভাইরাস-২০১৯ এর (2019-nCov) প্রকোপ নিয়ে গবেষক, চিকিৎসক ও বিশ্বের প্রায় সব দেশই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। চীনের উহান প্রদেশ থেকে ছড়ানো করোনা ভাইরাসের কারণে ইতোমধ্যেই ১ হাজার ১০৮ জন লোক মারা গিয়েছেন। এছাড়াও প্রায় ৪৪ হাজার ১৩৮ জন ব্যক্তি এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন। এই সংখ্যা প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এত সংখ্যক লোক মারা গেলেও এবং প্রতিদিন নতুন নতুন লোক নোভেল করোনা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলেও শিশুরা এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে না। যুবকরাও হরহামেশাই আক্রান্ত হচ্ছে। তবে শিশুদের মধ্যে মাত্র দুটি সদ্যপ্রসূত শিশু আক্রান্ত হয়েছিল। এছাড়াও সামান্য কিছু শিশু আছে যাদের মধ্যে করোনা ভাইরাস থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়।

৫ ফেব্রুয়ারি ‘জার্নাল অব দ্য আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনে’ প্রকাশিত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানা যায়, নোভেল করোনা ভাইরাসে মাঝবয়সী থেকে অধিকতর বয়স্করা আক্রান্ত হচ্ছেন, যাদের বয়স সাধারণত ৪৯ থেকে ৫৬ বছর।

নোভেল করোনা ভাইরাস কেন শিশুদের মধ্যে তার ভয়ংকর প্রভাব ফেলছে না তা নিয়ে চিকিৎসক ও গবেষকরা হয়তো সম্পূর্ণ স্বচ্ছ কারণ বলতে পারছেন না। কিন্তু তারা দেখছেন অধিকাংশ সংক্রামক রোগই শিশুদের ক্ষেত্রে কম প্রভাব ফেলে। জলবসন্ত, হাম থেকে শুরু করে সিভিয়ার একিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) ও মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (মার্স) রোগও শিশুদের মধ্যে কম ছড়ায়।

উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. এন্ড্রিউ পাভিয়া বলেন, শিশুদের আক্রান্ত না হওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে তারা পুরোপুরি নিশ্চিত নন। তবে তার মতে, ইমিউনো প্রতিক্রিয়া অর্থাৎ রোগ-জীবাণুর বিরুদ্ধে সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা বয়স্কদের তুলনায় শিশুদের বেশি হওয়ায় সমস্যা কম হচ্ছে। তিনি অনুমান করছেন শিশুদের জন্মগতভাবে প্রাপ্ত ইমিউনো প্রতিক্রিয়া (Innate immunity) থাকে যা বিভিন্ন ধরনের রোগ ছড়ানোর মাধ্যমকে রোগ ছড়াতে দেয় না।

শরীরে রোগ-জীবাণু প্রবেশ করলে প্রথমেই জন্মগতভাবে প্রাপ্ত ইমিউনো সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধক পদ্ধতি সেগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করে। অপর দিকে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর মাধ্যমে যে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা (Adaptive immune system) গড়ে ওঠে তা অনেক পরে জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নেয়। যদি জন্মগতভাবে প্রাপ্ত প্রতিরোধ ক্ষমতা শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি শক্তিশালী হয়, তবে বয়স্কদের চেয়ে শিশুরা নোভেল করোনা ভাইরাস দ্বারা কম আক্রান্ত হবে।

শিশুরা করোনা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত না হলেও অনেকেই মনে করেন তাদের মধ্যেও সামান্য লক্ষণ প্রকাশ পায়। তবে ফিলাডেলফিয়ায় অবস্থিত টেম্পল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের জনস্বাস্থ্য বিভাগের রোগতত্ত্ববিদ ক্রিস জনসন মতে, শিশুদের মধ্যে করোনা ভাইরাসের কোনো লক্ষণই প্রকাশ পায় না। যা প্রকাশ পায় তা হচ্ছে ভাইরাসজনিত নিউমোনিয়া। করোনা ভাইরাস আক্রান্ত করতে না পারার কারণ হচ্ছে তাদের শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা।

একইভাবে জলবসন্তে শিশুদের চেয়ে বয়স্করা ২৫ গুণ বেশি মারা যান। এছাড়াও ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ভাইরাসজনিত এক ধরনের সর্দিজ্বরে ছোট শিশুদের চেয়ে একটু বেশি বয়সী শিশুরাই সহজে আক্রান্ত হয়। আবার মৌসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জাতে শিশুদের চেয়ে বয়স্করা ১০ গুণ বেশি মারা যায়।

ড. এন্ড্রিউ পাভিয়ার মতে, রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ছাড়াও শিশুদের শ্বাসনালির রোগ ঘটায় এমনকিছুর সংস্পর্শে কম থাকে। শিশুরা বয়স্কদের মতো সিগারেটের ধোঁয়ায় ডুবে থাকে না। এছাড়াও দূষিত বায়ুর সংস্পর্শ কম পায়। আবার শিশুরা বয়স্কদের মতো ক্রনিক বা দীর্ঘকালীন রোগ, ডায়াবেটিস ইত্যাদিতে আক্রান্ত থাকে না।

আরও পড়ুন : এপ্রিলেই দূর হচ্ছে করোনা, ভবিষ্যৎ বাণী ট্রাম্পের

এসব সমস্যা শিশুদের বাবা-মা ও দাদা-দাদীর ক্ষেত্রে বেশি থাকে। তাই শিশুদের চেয়ে তারাই বেশি আক্রান্ত হয়। শিশুদের মধ্যে করোনা ভাইরাস না ছড়ানোর উপযুক্ত কারণ প্রকাশিত হলে সেটিও হয়তো করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় গবেষকদের অনেক বেশি সহায়তা করতে পারবে।

উল্লেখ্য, প্রাণঘাতী নোভেল করোনা ভাইরাস-২০১৯ এর নাম গতকাল (১১ ফেব্রুয়ারি) পরিবর্তন করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বর্তমানে ভাইরাসটির নাম দিয়েছে COVID-19। যেখানে CO দিয়ে করোনা, VI দিয়ে ভাইরাস, D দিয়ে ডিডিজ বা রোগ বোঝানো হয়েছে। আর 19 দিয়ে ২০১৯ সালকে নির্দেশ করা হয়েছে।

সূত্র- লাইভ সায়েন্স

ওডি/এনএম