সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
ভাইরাস কিন্তু আমাদের শরীরের জন্য শুধু ক্ষতিকর কাজই করে না, অনেকসময় শারীরিক সুস্থতার জন্যেও কাজ করে থাকে। যদিও এখন অব্দি ভাইরাস কীভাবে আমাদের সুস্থ থাকার পেছনে কাজ করে তা নিয়ে সঠিক বলতে পারেননি চিকিৎসকরা, এ নিয়ে জানার চেষ্টাও কম করছেন না তারা। চলুন আজ ‘ভালো’ ভাইরাসের মধ্যে অন্যতম একটি ‘ভাইরোম’ নিয়ে জেনে আসা যাক।
ভাইরোম কী?
ইতোমধ্যে চিকিৎসকরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পেরেছেন যে, ভাইরাস আমাদের শরীরে ভালো প্রভাব রাখে। তবে সবরকমের ভাইরাস এই ইতিবাচক প্রভাবটি ফেলে না। স্বাস্থ্য এবং ভাইরাসের মধ্যকার সংযোগ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে মাইক্রোবায়োমের একটি দিক ভাইরোম নিয়ে জেনেছেন বিজ্ঞানীরা।
মূলত, মাইক্রোবায়োমের কথা শুনলেই আমরা সবাই ব্যাকটেরিয়ার কথা ভেবে থাকি। কিন্তু মাইক্রোবায়োম বলতে মূলত একটি নির্দিষ্ট পরিবেশের যতগুলো মাইক্রোঅর্গানিজম রয়েছে সেগুলোর জেনেটিক ম্যাটেরিয়ালকে বোঝায়। তাই সোজা ভাষায় বলতে গেলে, মাইক্রোবায়োমে ব্যাকটেরিয়া ছাড়াও ফাঙ্গাস (মাইকোবায়োক), ভাইরাস (ভাইরোম) এবং অন্যান্য অনেক কিছু থাকে। বিজ্ঞানীরা ভাইরোম ও ম্মাইকোবায়োম নিয়ে এতদিন তুলনামূলকভাবে কম ভেবেছেন।
মানবদেহে ভাইরাসের বসতি বেশ অনেকটা অংশ জুড়ে। বিশেষ করে, আমাদের মুখ, নাক এবং এর পার্শ্ববর্তী স্থানগুলোতে ভাইরোম দেখা যায় প্রচুর পরিমাণে। ভাইরাসকে নানারকম অসুখ, এই যেমন- হেপাটাইটিস, এইচআইভি, জলবসন্ত ইত্যাদির কারণ হিসেবে মনে করা হলেও এর অন্য একটি দিকও রয়েছে। আর সেই দিকটি নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা।
বিজ্ঞানীরা ভাইরোমকে আমাদের শরীরের সবচাইতে বড় অংশ জুড়ে থাকা, গতিশীল এবং ভিন্নরকমের মাইক্রোবায়োম বলে মনে করেন। ব্যাকটেরিয়া কোথাও থাকলেই সেখানে ব্যাক্টেরিওফেজ থাকবেই। আর বিজ্ঞানীদের মতে বিশুদ্ধ পানির প্রতি ১০ মিলিলিটারেও এই ফেজের পরিমাণ প্রায় ১০ বিলিয়ন থাকে।
এই ব্যাক্টেরিওফেজ ব্যাকটেরিয়াকে সংক্রমিত করে এবং একটা সময় এর জেনেটিক ম্যাটেরিয়ালকে বদলে দেয়। আর ব্যাকটেরিয়া যেহেতু আমাদের অন্ত্রকে প্রভাবিত করে, তাই ভাইরোম যে আমাদেরকে ইতিবাচকভাবে অনেকসময় প্রভাবিত করে সেটা আর আলাদা করে বলে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
ফেজ থেরাপি
১৯২০ থেকে ১৯৫০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে ব্যাক্টেরিওফেজ মানব শরীরে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণকে দূর করতে কার্যকরী কি না, তা নিয়ে গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীরা। এতে করে দেখা যায় যে, এই ফেজ শুধু মানব শরীরের কোনো ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণকে দূরই করে না, একই সঙ্গে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনাকেও কমিয়ে দেয়।
অ্যান্টিবায়োটিক উদ্ভাবিত হলে ফেজ থেরাপির দরকার কমে যায়। তবে হ্যাঁ, একটা সময়ে এসে মানুষ অবশেষে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে শুরু করেছে। অ্যান্টিবায়োটিক যে আমাদের শরীরে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে তাই নয়, একই সঙ্গে এটি আমাদের অন্ত্রে থাকা ভালো ও খারাপ- দুই প্রকারের ব্যাকটেরিয়াকেই কমিয়ে আনে। এর ফলে আবার ফেজ থেরাপির দিকে আগ্রহ বাড়তে শুরু করেছে সবার।
একজন সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুর মলে ব্যাকটেরিওফেজ পাওয়া যায় না। তবে জন্মের এক সপ্তাহ পরেই এই পরিমাণ ১০০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়। আর এগুলোর বেশিরভাগই ইতিবাচক ব্যাকটেরিয়া। ভাইরোমকে তাই আমাদের জীবনের পুরনো বন্ধু বলা চলে।
তাই, খুব সহজেই বলা যায় যে, আমাদের জীবনের শুরু থেকেই ব্যাকটেরিয়া আমাদের সাথে জুড়ে থাকে। প্রতিনিয়ত এর পরিমাণ যেমন বাড়তে থাকে, তেমনই ইতিবাচক ফলাফলটাও আমরা বেশি পেয়ে থাকি ব্যাকটেরিয়ার কাছ থেকে।
তাই, অ্যান্টিবায়োটিকের বদলে ব্যাক্টেরিওফেজকে চিকিৎসার পদ্ধতি হিসেবে আবার ব্যবহার করতে শুরু করব আমরা। সেই সময়টা হয়তো খুব একটা দূরে নেই।
সূত্র- মেডিকেল নিউজ টুডে
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড