সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
মানুষ ধূমপান কেন করে? ধূমপান শুরু করার নানারকম কারণ রয়েছে। আর এর মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হলো মানসিক হতাশাকে সরিয়ে রাখা। আমাদের মধ্যে অনেকেই মানসিকভাবে ভালো থাকতে ধূমপান করে থাকেন। মজার ব্যাপারটি হলো, সম্প্রতি এক গবেষণায় পাওয়া গেছে যে, ধূমপান করলে মানুষ আরও বেশি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
'প্লাস ওয়ান' জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণাটি পরিচালনা করেন ইসরায়েলের হিব্রু ইউনিভার্সিটি-হাদাসাহ বারুন স্কুল অব পাবলিক হেলথ এন্ড কমিউনিটি মেডিসিন অব জেরুজালেমের অধ্যাপক হ্যাগাই লেভিন। তার গবেষণায় দেখা যায় যে, যেসব মানুষ ধূমপান করেন তাদের মধ্যে হতাশা বেশি দেখা যায়। অন্য দিকে, ধূমপান করেন না এমন ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। আর তারা মানসিকভাবেও হতাশা ও উদ্বিগ্নতায় কম ভুগে থাকেন।
এই পুরো ব্যাপারটিকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য সার্বিয়ার একদল শিক্ষার্থীর মধ্যে গবেষণা চালান অধ্যাপক। স্বল্প আয় এবং মধ্যম আয়ের কিছু দেশের মধ্যেও এই গবেষণা চালানো হয়। গবেষণাটি ইউনিভার্সিটি অব বেলগ্রেড এবং ইউনিভার্সিটি অব প্রিস্টিনা- এই দুইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপরে চালানো হয়। এর মধ্যে, প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী সংখ্যা ৯০,০০০ জন এবং দ্বিতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮,০০০ জন। এদের মধ্যে গবেষণায় মোট ২,১৩৮ জন শিক্ষার্থী গবেষণাটিতে অংশ নেন।
বছরের মাঝামাঝি সময়ে তারা একটি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। এসময় তাদের পারিবারিক অবস্থা, আর্থিক অবস্থা, শখ, জীবন পদ্ধতি, বাবা-মায়ের সম্পর্ক, বাবা-মায়ের পড়াশোনা কতটুকু- এমন অনেকগুলো প্রশ্ন করা হয়। যারা প্রতিদিন অন্তত একটি বা মোট মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১০০টি সিগারেট পান করেছেন, তাদেরকে এই পরীক্ষায় রাখা হয়। স্বাস্থ্যের মোট আটটি দিকে খেয়াল রেখে এই গবেষণায় মোট ৩৬ টি প্রশ্ন রাখা হয়। স্বাস্থ্যের এই আটটি দিক হলো- মানসিক স্বাস্থ্য, শারীরিক কার্যক্রম, কোনো দায়িত্ব পালনে শারীরিক অবস্থা, শারীরিক ব্যথা, উদ্দীপনা, সামাজিক অবস্থান, সাধারণ স্বাস্থ্য, মানসিক নানারকম কাজে স্বাস্থ্যগত অবস্থা।
এই সবগুলো দিক খেয়াল রেখে ভালো বা খারাপ থাকার মাত্রাকে ০ থেকে ১০০ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া অংশগ্রহণকারীদের মানসিক স্বাস্থ্য ও হতাশার পরিমাণ সম্পর্কে জানার জন্য তাদেরকে বেক ডিপ্রেশন ইনভেন্টরি নামক একটি পরীক্ষার মধ্যে দিয়েও পরিচালনা করা হয়।
এতে করে দেখা যায় যে-
০-১৩ মাত্রার মানুষেরা হতাশায় খুব একটা ভোগেন না ১৪-১৯ মাত্রার মানুষেরা কিছুটা হতাশায় ভোগেন ২০-২৮ মাত্রার মানুষেরা মধ্যম মানের হতাশায় ভোগেন ২৯-৬৩ মাত্রার মানুষেরা অনেক বেশি হতাশায় ভোগেন
এই পরীক্ষাটির মাধ্যমেই জানা যায় যে, যারা অনেক বেশি তামাক পান করেন তাদের মধ্যে হতাশার পরিমাণও বেশি দেখতে পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে, প্রিস্টিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা ধূমপান করছেন তাদের মধ্যে ১৪ শতাংশ ব্যক্তির হতাশা রয়েছে বলে দেখা যায়। অন্য দিকে, যারা ধূমপান করেননি তাদের মাত্র ৪ শতাংশের মধ্যে হতাশা দেখতে পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন- ধূমপান ত্যাগের সহজ কিছু উপায়
ধূমপান করার ফলে একটা সময় ধীরে ধীরে মানুষ নিজের মধ্যে থেকে উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলে এবং হতাশায় ভুগতে থাকে বলে মনে করেন তারা। এখানে প্রশ্ন থেকে যায় যে, ব্যাপারটি উল্টো নয় তো? এমনটাও তো হতে পারে যে, একজন মানুষ হতাশায় আক্রান্ত হলেই ধূমপানের দিকে বেশি আগ্রহ বোধ করে?
এদিক দিয়ে দেখতে গেলে এই গবেষণাটিকে অসম্পূর্ণ বলা যায়। তবে হ্যাঁ, ধূমপান ও হতাশার মধ্যে একটা সংযোগ যে রয়েছে সেটা যেমন গবেষকেরা দাবী করছেন, তেমনই বাকিরাও না মেনে পারবেন না। তবে এই সংযোগটা ঠিক কেমন তা নিয়ে এখনো গবেষণা করার সুযোগ ও প্রয়োজন রয়েছে।
সূত্র- মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটাল
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড