সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
বোন ক্যানসার বা হাড়ের ক্যানসার এখন কিন্তু খুব দুর্লভ কোনো রোগ নয়। অন্যান্য ক্যানসারের মতোই এটাও আক্রান্ত রোগীকে পুরোপুরি ভোগায়। তবে চিকিৎসকদের মতে, আগে থেকেই এ ব্যাপারে সচেতন থাকলে এবং কিছু লক্ষণ দেখার মাধ্যমে প্রাথমিক অবস্থাতেই এ ব্যাপারে জানতে পারলে সমাধানটা অনেক সহজ হয়ে পড়ে। চলুন এ ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক-
বোন ক্যানসার বা হাড়ের ক্যানসার কী?
আমাদের প্রত্যেকের শরীরেই নির্দিষ্ট পরিমাণ কোষ থাকে। এই কোষগুলো নিজ থেকেই জন্ম নেয়, বিভক্ত হয়, নষ্ট হয়। আবার নতুন কোষ এসে পুরনো কোষের জায়গা দখল করে। শরীরের ঠিক যতটা প্রয়োজন ততটাই কোষ উৎপন্ন হয়। কিন্তু কখনো কখনো কোষ উৎপন্ন হওয়ার এই পরিমাণটাকে আমাদের শরীর আটকাতে পারে না। ফলে দরকারের চাইতে অনেক বেশি পরিমাণে কোষ তৈরি হয়। এতে করে যে সমস্যাগুলো জন্ম নেয় সেগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো বোন ক্যানসার। এটি কয়েকভাগে হতে পারে।
সরাসরি হাড়ের ওপরে টিউমারের মতো জন্ম হয়ে ক্যানসার হতে পারে। শরীরের অন্যান্য অংশ থেকেও হাড়ে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়তে পারে। হাড়ে সরাসরি হওয়া ক্যান্সারকে সারকোমা বলা হয়। আর পরোক্ষভাবে হাড়ে ক্যানসার হলে সেটাকে সেকেন্ডারি ক্যানসার বলা হয়। যে কোনো বয়সে, যে কোনো স্থানের মানুষের শরীরেই হাড়ের ক্যানসার দেখা দিতে পারে।
বোন ক্যানসারের লক্ষণগুলো-
বোন ক্যানসারের ক্ষেত্রে সবচাইতে ভালো হয় যদি এ সম্পর্কে আগে থেকেই জানা যায়। যদিও অনেকেই সাধারণ লক্ষণগুলোকে আমলে আনেন না এবং পরবর্তীকালে সমস্যা বড় আকার ধারণ করে। বোন ক্যানসারের লক্ষণগুলো হলো- ● জ্বর ● হাড়ের গিরায় ব্যথা ● ত্বক লাল হয়ে যাওয়া ● ক্ষুধাবোধ কমে যাওয়া এবং খুব দ্রুত কোনো কারণ ছাড়াই ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি
আপনার বা আপনার কাছের মানুষের মধ্যে উক্ত সমস্যাগুলো দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন এবং পরীক্ষা করুন যে তার বোন ক্যানসার আছে কি না।
প্রাথমিক অবস্থায় বোন ক্যানসার শনাক্ত করা কেন দরকার?
খুব সহজভাবে বলতে গেলে, যে কোনো অসুখ যত দ্রুত শনাক্ত করা হবে, সেটার ফলাফলটাও ততটাই ভালো হবে। পুরো হাড়ে ছড়িয়ে যাওয়ার আগে যদি শুধু টিউমার থাকা অবস্থাতেই বোন ক্যানসার শনাক্ত করা যায়, সে ক্ষেত্রে সমাধান খুব দ্রুত করা সম্ভব হয়। আগে মাস্কুলোস্কেটাল অনকোলজি খুব একটা প্রসারিত ছিল না। শুধু আর্থোপেডিক চিকিৎসক বিভাগটি দেখতেন। তবে এখন এর যথেষ্ট উন্নতি ঘটেছে। এখন এই পুরো চিকিৎসা প্রক্রিয়াটি একজন জেনারেল সার্জন, রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট, প্ল্যাস্টিক সার্জন, রেডিওলজিস্টসহ আরও বেশ কিছু বিভাগের বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরিচালিত হয়। তাই প্রক্রিয়াটি যত দ্রুত শুরু হবে এর সমাধানও তত দ্রুতই চলে আসবে।
বোন ক্যানসারের চিকিৎসা কী?
নানা রকমভাবেই বোন ক্যানসারের চিকিৎসা করা সম্ভব। পূর্বে এই সমস্যার ব্যাপারে চিকিৎসকদের প্রধান কাজ ছিল রোগীর জীবন বাঁচানো। তবে সেটি এখন আর এত প্রাথমিক পর্যায়ে নেই। বর্তমানে একজন মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনকে কোনরকম না বদলে কীভাবে তাকে সুস্থ করে তোলা যায় সেটার ওপরে এ ক্ষেত্রে সবচাইতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। চিকিৎসার নানারকম পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে-
কেমোথেরাপি, যেটি শরীরের নির্দিষ্ট স্থানে ক্যানসারের জীবাণু দূর করতে সাহায্য করে।
রেডিয়েশন থেরাপি, যেটি শরীরের ক্যানসারের কোষকে দূর করতে বা টিউমারকে ছোট করে তুলতে সাহায্য করে।
লিম্ব স্যালভেজ সার্জারি, যেখানে শরীরের কোনো একটি অঙ্গকে প্রভাবিত না করেই টিউমার বা ক্যানসার আক্রান্ত অংশটিকে শরীর থেকে বাদ দেওয়া হয়।
অ্যাম্পুটেশন অব দ্য লিম্ব, যেখানে আক্রান্ত অংশটিকে শরীর থেকে বাদ দিয়ে ফেলা হয়। তবে একেবারে অন্য কোনো উপায় না থাকলে তারপর এমন কোনো সিদ্ধান্তে আসেন চিকিৎসকেরা।
বোন ক্যানসারের লক্ষণগুলো দেখা দিলেই চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন। সাধারণত, দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসাকে এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হলেও অনেকসময় দেরি হয়ে যাওয়ায় এবং ক্যানসার শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে যাওয়ায় এই প্রক্রিয়ায় যাওয়া সম্ভব হয় না।
তবে হ্যাঁ, চেষ্টা করুন যতটা দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নেওয়ার। এতে করে খুব সহজে সুস্থ হওয়া সম্ভব না হলেও সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাটি আরও বেড়ে যায়। হেরে না গিয়ে তাই লড়াই করুন। মানসিকভাবে শক্ত থাকুন, সুস্থ রাখুন নিজেকে।
সূত্র- মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটাল।
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড