সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
নারীদের জন্য জরায়ুর সিস্ট হওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার। প্রতিমাসেই পিরিয়ড চলাকালীন নারীর জরায়ুতে সিস্ট তৈরি হয়। আবার কিছুদিন পর এই সিস্ট দূরও হয়ে যায়। কিন্তু এমনটা কিন্তু সবসময় হয় না। অনেকসময়, এই সিস্ট বড় হয়ে পানি বা রক্ত দিয়ে ভর্তি হয়ে যায়। যেটি পরবর্তী সময়ে বড় সমস্যা তৈরি করে। কী এই সিস্ট, এর সমস্যাগুলো কী এবং কীভাবে সমাধান করা সম্ভব? চলুন জেনে নেওয়া যাক-
সিস্টের রকমভেদ-
সিস্ট সাধারণত হুট করেই দেখা দেয়। এর খুব বেশি লক্ষণ না থাকায় অন্যকোনো সমস্যার কারণে চিকিৎসকের কাছে গেলে সে ক্ষেত্রে স্ক্যান করার সময় সিস্ট ধরা পড়তে পারে। সিস্ট ১০ সেন্টিমিটারের বড় হলে রোগী অসুবিধা বোধ করতে শুরু করেন। সিস্ট নানারকম হয়ে থাকে। ১। ফাংশনাল সিস্ট-
ফাংশনাল সিস্ট মূলত দুই রকমের। ফলিসেল সিস্ট এবং কর্পাস লিউটেয়াম সিস্ট। ডিম্বাণু পূর্ণতা পেয়ে গেলে ফলিসেল সিস্ট দূর হয়ে যায়। কিন্তু যদি এরপরেও এটি থেকে যায় এবং ভেতরে পানি জমাট বাঁধে, সে ক্ষেত্রে সেটিকে কর্পাস লিউটেয়াম সিস্ট বলা হয়।
২। ডারময়েড সিস্ট-
জরায়ুর কোষ থেকেই এই সিস্ট জন্ম নেয়। এতে দাঁত, চুল, এমনকি হাড় পর্যন্ত থাকতে পারে।
৩। এন্ডোমেট্রিওটিক সিস্ট-
গর্ভের টিস্যু জরায়ুতে চলে গেলে সে ক্ষেত্রে এই সিস্ট তৈরি হয়।
৪। সিস্টাডেনোমাস-
জরায়ুর ওপরে জন্ম নেওয়া একটি নন-ক্যানসারাস সিস্ট হলো সিস্টাডেনোমাস।
যদিও এমনটা খুব বেশি দেখা যায় না। তারপরও সিস্ট থেকে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে মেনোপোজের পর নারীদের মধ্যে এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
সিস্ট পরীক্ষার উপায় কী?
চিকিৎসকেরা নানারকম উপায়ে সিস্ট চিহ্নিত করেন। সাধারণত এ ক্ষেত্রে সিটি স্ক্যান, এমআরআই, ম্যামোগ্রাম এবং আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহার করা হয়। তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য বায়োপসিও করে থাকেন তারা। বায়োপসির ক্ষেত্রে সিস্ট সম্পর্কে ভালোভাবে জানার জন্য চিকিৎসকেরা মিলিমালি ইনভেসিভ সার্জারির মাধ্যমে তলপেটে শূন্য দশমিক ৫ থেকে ১ সেন্টিমিটার অংশ কাটেন এবং যন্ত্রের সাহায্যে সিস্টের টিস্যু বা পুরো সিস্টই বের করে আনেন।
এমআইএস সিস্টেকটোমি কেন?
সাধারণত, সিস্টের গঠন ৫ সেন্টিমিটারের বেশি হয়ে গেলে সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা এমআইএস সিস্টেকটোমি ব্যবহার করেন। এর আগ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ এবং বাকি সব পদ্ধতিতে সিস্টকে আয়ত্তে আনার চেষ্টা করেন তারা। এমআইএস সিস্টেকটোমির ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা পেটের খুব অল্প অংশে ছিদ্র তৈরি করেন এবং সেখানে ক্যামেরা ও অন্যান্য যন্ত্র প্রবেশ করান। যেহেতু এটি খুব অল্প অংশজুড়ে করা হয়, তাই এ ক্ষেত্রে রক্তপাতের সম্ভাবনা কম থাকে। তাছাড়া দাগ দীর্ঘমেয়াদী হয় না। রোগী সুস্থও হয়ে যান খুব দ্রুত।
তবে আপনি নিজের জন্য ঠিক কোন পদ্ধতি ব্যবহার করবেন সেটা ঠিক করার সিদ্ধান্তটা চিকিৎসকের হাতেই ছেড়ে দিন। আপনার সিস্ট এবং শারীরিক অবস্থার ওপরে ভিত্তি করে চিকিৎসকেরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তবে চেষ্টা করুন মিনিমাল ইনভেসিভ সার্জারি করতে। এতে করে আপনার স্বাস্থ্যঝুঁকি কমে আসবে। আপনি সেরেও উঠবেন খুব দ্রুত। আর হ্যাঁ, সবচাইতে আগে আপনার সিস্ট হয়েছে এমন কোনো সন্দেহ দেখা দিলেই চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন। এতে করে যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা হবে, তত সহজেই এর মোকাবিলা করা সম্ভবপর হয়ে উঠবে।
সূত্র- মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটাল
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড