সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
কিছুদিন আগেও স্পোর্টস ইনজুরি মানেই ছিল একজন খেলোয়াড়ের খেলাধুলা জীবনের সমাপ্তি। খুব কম ক্ষেত্রেই সরাসরি সংস্পর্শে আসা খেলা, এই যেমন- কুস্তি, ফুটবল ইত্যাদিতে শরীরের হাড়ের সংযোগস্থলে সমস্যা তৈরি হলে সেটাকে সারিয়ে তোলা যেত। তবে দিন যত পেরিয়েছে, প্রযুক্তি তত বেশি উন্নত হয়েছে। এখন খেলাধুলার সময়ে চোট পেলেও সেটাকে খুব ছোট কিছু সার্জারির মাধ্যমে সারিয়ে তোলা যায়।
সাধারণত, আমাদের শরীরের অন্যান্য অংশের চাইতে সংযোগস্থলই সবচাইতে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। এতে যেমন টিস্যুর পরিমাণ কম, তেমনই চর্বিও এই অংশগুলোতে কম থাকে। ফলে খুব সহজেই আঘাত পেয়ে ভয়াবহ রকম আক্রান্ত হতে পারে এই অংশগুলো। চলুন এমন কিছু ইনজুরি এবং এর সমাধান সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
কাঁধের সংযোগস্থলে ইনজুরি-
কাঁধ আপনার শরীরের সে অংশ, যেখানে বাহুর উপরিভাগের হাড় এসে শোল্ডার ব্লেড বা স্ক্যাপুলাতে মিলে যায়। এগুলো ছাড়াও সেখানে পুরো ব্যাপারটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য রোটেটর কাফ এবং টেন্ডন থাকে। শুধু তাই নয়, রোটেটর কাফকে কাজ চালিয়ে যেতে দেওয়ার জন্য থাকে তরলে ভর্তি কিছু অংশও। এই কাঁধের সংযোগস্থলে সাধারণত যে ইনজুরিগুলো হয় সেগুলো হলো-
● পেশি এবং টেন্ডন ছিঁড়ে গিয়ে রোটেটর কাফ ইনজুরি ● হাড় স্থানান্তরিত হওয়া ● কার্টিলেজ ছিঁড়ে যাওয়া ● প্রদাহ বা টান পড়ার মতো সহজ ইনজুরি ইত্যাদি।
বাহুর সংযোগস্থলে ইনজুরি-
আমাদের কনুইয়ে মূলত তিন ধরনের হাড় থাকে। বাহুর নিচ থেকে উলনা এবং রেডিয়াস। উপরিভাগের বাহু থেকে আসে হিউমেরাস। কার্টিলেজ ও অতরল বাহুর সঠিক চলাচল নিশ্চিত করে। অন্যদিকে টেন্ডন বাহুর হাড় এবং পেশিগুলোকে ধরে রাখে। কনুইয়ে সাধারণ নিচের ইনজুরিগুলো হয়ে থাকে-
● হাড়ের স্থানান্তর ● হাড় ফেটে বা ভেঙ্গে যাওয়া ● টেনিস এলবোর মতো প্রদাহ হওয়া ● লিগামেন্ট ভেঙ্গে বা ছিঁড়ে যাওয়া ইত্যাদি।
এ ক্ষেত্রে কোন কোন সার্জারি করা হয়?
এক গবেষণানুসারে, মার্শাল আর্টে ২৫ শতাংশ সম্ভাবনা থাকে ইনজুরি হওয়ার। এছাড়া আইস হকি, ফুটবল এবং আরও অনেক খেলাতেই এই সম্ভাবনা থাকে। এ ক্ষেত্রে কেমন ইনজুরি হচ্ছে তার ওপরে ভিত্তি করে সার্জারির পদ্ধতি ভিন্ন হয়ে থাকে। চিকিৎসকরা সাধারণত যে সার্জারিগুলো এ ক্ষেত্রে করে থাকে সেগুলো হলো-
ট্রেডিশনাল ওপেন সার্জারি-
এই পদ্ধতিতে আক্রান্ত স্থানটিকে পুরোটা খুলে ভালোভাবে দেখা হয় এবং চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে এতে করে বেশি রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। একই সঙ্গে, বাসায় ফেরার পরেও সুস্থ হতে অনেকগুলো দিন লাগতে পারে।
মিনিমালি ইনভেসিভ সার্জারি-
মিনিমালি ইনভেসিভ সার্জারিকে আর্থ্রোস্কোপিও বলা হয়। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসক আক্রান্ত স্থানে ছোট্ট একটি অংশ কাটেন, আর্থ্রোস্কোপ এবং একটি এন্ডোস্কোপ ব্যবহার করে ক্যামেরার মাধ্যমে সেই কাটা অংশ দিয়ে ভেতরটা ভালোভাবে দেখেন এবং যথাযথ চিকিৎসা প্রদান করেন। এই অপারেশনের ক্ষেত্রে হাসপাতালে বেশিক্ষণ থাকার দরকার পড়ে না। লোকাল অ্যানেস্থেসিয়া ব্যবহারের মাধ্যমে খুব ছোট্ট করে সেলাই করা হয়। ফলে ত্বকে খুব একটা দাগ থাকে না। শুধু যে রক্তপাতের পরিমাণ এতে কমে তাই নয়, একই সঙ্গে রোগী সুস্থও হন খুব দ্রুত।
কোন সার্জারিটি আপনি বাছবেন?
চিকিৎসকেরা সাধারণত মিনিমালি ইনভেসিভ সার্জারিটাই করে থাকেন রোগীর সুবিধার কথা ভেবে। তবে এমন অনেক ইনজুরি আছে যে ক্ষেত্রে ওপেন সার্জারি করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। সে ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে চিকিৎসকের সাথে কথা বলে এগোনোই সবচাইতে ভালো।
যে কোনো স্পোর্টস ইনজুরিতে বসে না থেকে আক্রান্ত স্থানটিকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসার আওতায় আনুন। এতে করে সমাধান দ্রুত হবে আর নেতিবাচক প্রভাবও কম পড়বে। আর অবশ্যই, আঘাত পেয়েছেন বলে একেবারে বসে থাকবেন না। মনে রাখবেন, শরীরকে সুস্থ রাখার অন্যতম বড় উপায় হচ্ছে একে সচল রাখা। তাই সচল থাকুন, শরীরকে সুস্থ রাখুন।
সূত্র- মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটাল
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড