• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

গো-বসন্ত ভাইরাস ব্যবহৃত হবে ক্যানসার চিকিৎসায়!

  মোঃ সাইফুল ইসলাম

১০ নভেম্বর ২০১৯, ১২:২৮
ইউমাঙ্ক ফঙ্গ
ক্যানসার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইউমাঙ্ক ফঙ্গ; (ছবি- ইন্টারনেট)

ক্যানসারের সাথে মানবজাতি প্রাচীনকাল থেকেই পরিচিত ছিল। সাধারণত শরীরের কোনো অংশের কোষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পাওয়াকে ক্যানসার বলা হয়। বহু প্রাচীনকালের মানবদেহের হাড়ের জীবাশ্মে টিউমার তথা ক্যানসারের অস্তিত্বের কথা জানা যায়।

মিশরীয় কিছু পুঁথি-পাণ্ডুলিপিতে ক্যানসারের কথা পাওয়া যায়। মাথার খুলি ভেঙে তার ভেতরেও ক্যানসারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। মিশরের খ্রিস্টপূর্ব ৩ হাজার বছরের অধিক পুরনো ‘এডুইন স্মিথ প্যাপাইরাস’ নামক গ্রন্থেও ৮টি টিউমারের অস্ত্রোপচারের কথা জানা যায়।

বহুকাল ধরে ক্যানসারের অস্তিত্ব থাকলেও ক্যানসার নামটি তখন পরিচিত ছিল না। গ্রিক চিকিৎসক হিপোক্রেটস প্রথম ‘কারসিনোস’ ও ‘কারসিনোমা’ শব্দ দুটি ব্যবহার করেন। পরবর্তীকালে হিপোক্রেটসের দেওয়া শব্দকে রোমের বিজ্ঞানী সেলসাস ল্যাটিন শব্দে রূপান্তর করে ক্যানসার শব্দটি ব্যবহার করেন।

যা-ই হোক, ক্যানসার শুধু আমাদের মতো দেশেই আতঙ্ক নয়। এটি সারাবিশ্বের কাছেই আতঙ্কের নাম। তাই এটি নিয়ে প্রতিনিয়তই গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। আর এই গবেষণায় বিশাল সাফল্যের দেখা পেতে চলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইউমাঙ্ক ফঙ্গ।

অস্ট্রেলিয়ার জৈবপ্রযুক্তি কোম্পানি ‘ইমিউজিন’ এ ইউমাঙ্ক ফঙ্গ ক্যানসার চিকিৎসার নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবনে সাফল্যের দিকে অগ্রসর হয়েছেন।

ইউমাঙ্ক ফঙ্গ গো-বসন্তের ভাইরাসের সাথে অন্যান্য ভাইরাস মিশিয়ে পেট্রিডিশে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। পরীক্ষায় দেখা যায় ফঙ্গের উদ্ভাবিত গো-বসন্ত ভাইরাস ও অন্যান্য ভাইরাসের মিশ্রণে তৈরিকৃত বিশেষ ধরনের ভাইরাসগুলো সব ধরনের ক্যানসার কোষ ধ্বংস করতে পারে।

বর্তমানে ইঁদুরের শরীরে এই বিশেষ ধরনের ভাইরাসের মিশ্রণ প্রবেশ করিয়ে সফলতা পেয়েছেন অধ্যাপক ফঙ্গ। ফঙ্গের এই চিকিৎসার নাম দেওয়া হয়েছে ভ্যাক্সিনিয়া সিএফ৩৩ (Vaxinia CF33)। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের শুরুর দিকে পরীক্ষামূলকভাবে মানব শরীরে বিশেষ ধরনের গো-বসন্ত ভাইরাস প্রবেশ করাবেন গবেষকরা।

স্তন ক্যানসার, মেলানোমা, ফুসফুস ক্যানসার, মূত্রথলি, পাকস্থলী ও আন্ত্রিক ক্যানসারের চিকিৎসায় এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে বলে জানা যায়। সিএফ৩৩ চিকিৎসা পদ্ধতিতে প্রথমে গো-বসন্তের ভাইরাসের সাথে অন্যান্য ভাইরাস মিশিয়ে বিশেষ ধরনের ক্যানসার কোষ ধ্বংসকারী ভাইরাস তৈরি করা হয়। অতঃপর এই ভাইরাস ক্যানসার কোষে প্রবেশ করানো হয়। সেখানে ভাইরাস রেপ্লিকেট বা প্রতিলিপি তৈরি করে। এভাবে ভাইরাসের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে টিউমার বা ক্যানসার কোষকে ভেঙে ফেলে।

টিউমার কোষ ভেঙে যাওয়ার পর হাজার হাজার নতুন ভাইরাস তৈরি হয়। এই নতুন ভাইরাসগুলো পুনরায় অধিক টিউমার কোষকে আক্রমণ করে।

ক্যানসারের চিকিৎসায় ভাইরাসের ব্যবহার নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা সাধারণ সর্দির ভাইরাস ব্যবহার করে মস্তিষ্কের ক্যানসার চিকিৎসা করেন। সেই চিকিৎসায় কয়েক বছর পর্যন্ত ক্যানসার অদৃশ্য হয়ে যায়। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে টিউমার কোষ যথেষ্ট পরিমাণে সংকুচিত হয়ে যায়।

বিশেষ ধরনের হার্পিস ভাইরাস যাকে ইমলিজিক অথবা টি-ভেক বলা হয়, তা দিয়ে মেলানোমার চিকিৎসা করা হয়। টি-ভেক শরীরের ইমিউন সিস্টেম তথা রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাপনাকে টিউমার কোষ চিনতে ও ধ্বংস করতে সহায়তা করে।

ভাইরাস যে ক্যানসার ধ্বংস করতে পারে তা উনিশ শতকের গোড়ার দিকে জলাতঙ্কের টিকা গ্রহণকারীদের পর্যবেক্ষণ করেও জানা গিয়েছিল। সে সময় জলাতঙ্কের টিকা প্রদান করা হলে টিকা গ্রহীতার ক্যানসার অদৃশ্য হয়ে যেত।

তবে পূর্বের গবেষণায় ক্যানসারের চিকিৎসায় ভাইরাসের ব্যবহার ব্যর্থতায় পতিত হতো। কারণ যে ভাইরাসগুলো ব্যবহার করা হতো তা ছিল খুবই বিষাক্ত। তাছাড়াও সেগুলো কেবল ত্বক ও যকৃতের ক্যানসার কোষে কাজ করত।

অধ্যাপক ফঙ্গ বলেন, ক্যানসার কোষ ধ্বংসের জন্য যদি ভাইরাসকে যথেষ্ট পরিমাণ বিষাক্ত করে তোলা হয় তবে তা মানুষকেই মেরে ফেলতে পারে। তার মতে, গো-বসন্তের ভাইরাস মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়। তাই তিনি গো-বসন্তের ভাইরাসের সাথে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস মিশিয়ে পরীক্ষা চালান ও পরীক্ষামূলকভাবে সফলও হন।

আপাতত ফঙ্গ ইঁদুরের দেহের ক্যানসার কোষ ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু ক্যানসার কোষ খুবই চালাক। এই কোষ বেঁচে থাকার জন্য নিজেদের পরিবর্তন ঘটায়। এরা কেমোথেরাপি ও ইমিউনোথেরাপির ওপর প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রদান করতে পারে। তথাপিও নতুন আবিষ্কৃত চিকিৎসা পদ্ধতি মানবদেহের জন্য সফলভাবে প্রয়োগ করা গেলে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিশাল সাফল্য আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।

তথ্যসূত্র : ডেইলি মেইল, নিউজ.কম.এইউ, ফ্রন্টপেইজ ডট কম।

ওডি/এনএম

স্বাস্থ্য-ভোগান্তি, নতুন পরিচিত অসুস্থতার কথা জানাতে অথবা চিকিৎসকের কাছ থেকে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শ পেতেই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব এবং সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যার পরামর্শ দেবার প্রচেষ্টা থাকবে আমাদের।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড