• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

হলুদে বিষ!

  সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি

২৮ অক্টোবর ২০১৯, ০৯:১১
হলুদ
ছবি : ইন্টারনেট

খাবারে মন ভালো করা রঙ নিয়ে আসতে হলুদ ব্যবহার করি আমরা সবাই। কিন্তু এই নিত্যদিনের উপাদানটি কি আসলেও আমাদের জন্য স্বাস্থ্যকর? বিশেষ করে প্যাকেটজাত হলুদের ক্ষেত্রে এই প্রশ্নটি থেকেই যায়।

সম্প্রতি বাংলাদেশে পরিচালিত একটি গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, হলুদের রঙ আরও উজ্জ্বল করতে এর প্রস্তুতকারকেরা হলুদে সীসা ক্রোমেট মেশাচ্ছেন। তাই, এ ব্যাপারে ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক! কী ভাবছেন? হলুদ খাওয়া বন্ধ করে দেবেন? উঁহু, সেটা কোনো কাজের কথা নয়। বরং চলুন, বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক-

সীসা ক্রোমেট কী?

সীসা ক্রোমেট হলো সীসা এবং ক্রোমোনিয়ামের একটি মিশ্রণ। এই দুটি উপাদানের মিশ্রণ এক রকমের রাসায়নিক উপাদান তৈরি করে সেটি যেকোনো জিনিসকে উজ্জ্বল হলুদ রঙ দিতে সাহায্য করে। মানুষ এটি গ্রহণ করলে বা এতে নিশ্বাস নিলে সেটি তাদের শরীরে বিষাক্ততা ছড়িয়ে দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সীসা যেকোনো অবস্থাতেই মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। সাধারণত, রঙ করার জন্য এবং তেলে হলুদ ও কমলা রঙ আনতে সীসা ক্রোমেটের এই মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে এই সীসা ক্রোমেটের ব্যাপক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। যেটি হলুদের মাধ্যমে এসেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। সাধারণত, শারীরিক প্রদাহ থেকে শুরু করে ক্যানসারের মতো ভয়াবহ রোগ হতে পারে সীসা ক্রোমেট গ্রহণ করলে।

মশলায় এমন বিষাক্ত উপাদান ব্যবহার করা অবশ্য খুব একটা নতুন কিছু নয়। এর আগেও এমনটা হয়েছে। ব্যাপারটি নিয়ে সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড উডস ইন্সটিটিউট ফর দ্যা এনভারনমেন্ট একটি গবেষণা চালান।

আর তাতে দেখা যায় যে, ১৯৮০ সালেই মশলায় বিষাক্ত রঙ মিশ্রণের এই প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। তখনো হলুদে রং মেশাত বিক্রেতারা। মানুষের শরীরে খাবারের মাধ্যমে সীসা সরাসরি প্রবেশ করে। রক্তের সাথে এই উপাদানটি মিশে যায়।

গবেষকেরা বাংলাদেশের নাগরিকদের শরীরে সীসার পরিমাণ পরীক্ষা করেন এবং শরীরে সীসা প্রবেশের সবচাইতে বড় পদ্ধতি হিসেবে তারা হলুদের মাধ্যমে গ্রহণ করাকে দায়ী করেন। হলুদে মিশ্রিত এই উপাদানটিকে অনেকদিন আগেই খাবারে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও এখনো পর্যন্ত অসাধু উপায়ে এর ব্যবহার করছেন অনেকেই।

এই গবেষণায় গবেষকেরা বাংলাদেশের অনেকগুলো হলুদ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নেন। কারখানায় পরীক্ষা চালান। বাজার থেকে হলুদের স্যাম্পল নেন এবং সেটাকে পরীক্ষা করেন। মোট ১৫২ জন কর্মীর কাছে নানারকম তথ্য জানতে চান তারা। পরীক্ষার ক্ষেত্রে ব্যবহার করেন স্পেক্ট্রোমেট্রি এবং এক্স-রে ফ্লুরোসেন্ট।

এতে দেখা যায় যে, হলুদে সীসা এবং ক্রোমিয়ামের সংখ্যা সবচাইতে বেশি ঢাকা ও মুন্সিগঞ্জে। এখানে হলুদ তৈরির কারখানার এবং সেখানকার মাটিতে ২-১০% সীসা ক্রোমেট পান তারা। সেখানকার কর্মীদের কাছ থেকে জানা যায় যে, এই সীসা ক্রোমেট তারা ৩০ বছর আগে হলুদে ব্যবহার করা শুরু করেন এবং এখনো সেটাই করে যাচ্ছেন।

কেন তারা এই উপাদানটি হলুদের সাথে মেশায় সেটা জানতে চাইলে এর প্রাথমিক কারণ হিসেবে ক্রেতাদের চাহিদার কথাই বলা হয়। ক্রেতারা হলুদে রঙ দেখতে পছন্দ করেন বলেই রঙ মেশান তারা। অন্য দিকে, যেসব কৃষক বা ব্যবসায়ীরা নিম্নমানের হলুদ পান, সেগুলোর মান বাড়াতেও সীসা ক্রোমেট ব্যবহার করেন তারা।

বিষাক্ততা এড়ানোর উপায়-

সীসা ক্রোমেট হলুদে ব্যবহার করার ফলে যে খুব বড় কোনো সমস্যা হচ্ছে তার সরাসরি কোনো প্রমাণ এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে এই উপাদান যে দীর্ঘমেয়াদি ও ভয়ঙ্কর সমস্যা তৈরি করতে পারে মানবদেহে সেটাও সত্যি। বর্তমানে হলুদ উৎপাদনে সতর্কতা গ্রহণ করা হচ্ছে। এর মান ঠিক আছে কিনা সেই পরীক্ষাও নিয়মিত চালানো হচ্ছে। তাই এভাবে চলতে থাকলে এই সমস্যা দূর হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

হলুদ ছাড়া যে খাবার তৈরি করা যায় না তা নয়। তাই, সতর্ক থাকুন এবং যতদিন পর্যন্ত হলুদের এই বিষাক্ততা পুরোপুরিও দূর না করা যাচ্ছে ততদিন প্রয়োজনে হলুদ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন।

সূত্র- মেডিকেল নিউজ টুডে

ওডি/এনএম

স্বাস্থ্য-ভোগান্তি, নতুন পরিচিত অসুস্থতার কথা জানাতে অথবা চিকিৎসকের কাছ থেকে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শ পেতেই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব এবং সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যার পরামর্শ দেবার প্রচেষ্টা থাকবে আমাদের।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড