ফিচার ডেস্ক
টক আর মিষ্টি স্বাদের মিশেল এক ফলের নাম বৈঁচি। এখনকার শিশু কিশোরদের কাছে এই নামটি অপরিচিত লাগলেও একটা সময় দুরন্ত কৈশরের অংশ ছিল এই ফল। আর তা হবে নাই বা কেন? এই ফল তো তখন বাজারের ফলের দোকানে সাজিয়ে বিক্রি করা হতো না।
ঝোপে ঝাড়ে জন্মানো এক ফল বৈঁচি। দস্যি ছেলের দল খুঁজে বের করত গাছ। সূচালো কাঁটা পেরিয়ে জাম আর বাদামি রঙের মিশেল বৈঁচি মুখে পুরেই সুখ। সবকিছু মিলিয়ে দুরন্ত কৈশরের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল এই ফলটি।
বাংলাদেশের বিলুপ্তপ্রায় একটি উদ্ভিদ বৈঁচি। লম্বা কাঁটা আর সবুজ পাতার মাঝে উঁকি দেয় লাল রঙা ছোট ফল, যা বৈঁচি ফল নামে পরিচিত। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় এই ফল বেশি হয়ে থাকে। কেউ কেউ একে চেনে বুঁজ নামে। আবার অনেকে ডাকে ডুঙ্কার বলে।
বৈঁচির বৈজ্ঞানিক নাম Flacourtia indica। ইংরেজিতে এটি ইন্ডিয়ান প্লাম, গভেনর্স প্লাম, ব্যাটোকো প্লাম ইত্যাদি নামে পরিচিত।
ঘন ডালপালা আর ঝোঁপালো গাছ বৈঁচির। এর কাণ্ড আর ডাল বেশ শক্ত। কাণ্ডের একেবারে গোড়া থেকে ডাল পালা বের হয় বলে এই গাছ বেশি ঝোপ সৃষ্টি করে। বৈঁচির পাতার রং হালকা সবুজ, দেখতে ডিম্বাকৃতির। দেখতে অনেকটা বড়ই পাতার মতো।
কাঁটাযুক্ত গাছ বৈঁচি। এর প্রতি পাতার গোড়ায় একটি করে বড় কাঁটা থাকে। কাঁটা ৩-৪ ইঞ্চি লম্বা হয়। এই কাঁটা কিন্তু বেশ সূঁচালো, সে সঙ্গে বিষাক্ত। শরীরের কোথাও কাঁটা বিঁধলে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। আর এ জন্যই কিছু অঞ্চলে এটি কাঁটাবহরী নামে পরিচিত।
বসন্তে বৈঁচি গাছে ফুল ধরে। পাঁচ পাপড়ির এই ফুল ক্ষুদ্রাকৃতির। ফল পাকতে শুরু করে জ্যৈষ্ঠ মাসে। এই ফল হয় গোলাকার ও ছোট, দেখতে অনেকটা বরইয়ের মতো। ভেতরে একটি শক্ত বিচি থাকে। কাঁচা ফল সবুজ থাকে আর পাকা ফল হয় জাম বা রক্ত বেগুনি রঙা।
বৈঁচি কিন্তু চাষ করা হয় না। অযত্ন, অবহেলাতেই এটি ঝোপেঝাড়ে কিংবা ক্ষেতের পাশে বেড়ে ওঠে। বাঁশবন, উঁইঢিবি, নদীর পাড় কিংবা ফসলের ক্ষেতের ঘন বেড়ায়ও খোঁজ মেলে এদের। লোকালয়ে এ গাছ কমই থাকে। বীজ থেকে নতুন গাছ জন্মায়। তবে শেকড় থেকেও নতুন চারা জন্মাতে পারে।
অবহেলিত এই ফলটির কিন্তু পুষ্টিগুণও রয়েছে বেশ। ক্যালসিয়াম আর ফসফরাসের উৎস এটি। দাঁতের গোড়া ফোলা সমস্যা, জণ্ডিস রোগের চিকিৎসায় বৈঁচি ব্যবহৃত হয়। এর পাতার নির্যাস ব্যবহার করা হয় জ্বর, কফ ও ডায়রিয়া নিরাময়ে।
বর্তমানে ফার্মগেট, কাওরান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা মেলে এই ফলের। বিশেষত যারা আমলকি, তেঁতুল, হলুদ, অড়বরইয়ের মতো ফল বিক্রি করেন তাদের কাছে মিলবে বৈঁচি। ঝটপট কিনে ফেলুন আর মুখে পুরে হারিয়ে যান দুরন্ত সেই কৈশরের দিনগুলোতে।
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড