মোঃ সাইফুল ইসলাম
কবুতরের হাঁটাচলা ও খাদ্য সংগ্রহ করার দৃশ্যটা নিশ্চয়ই সকলেই দেখেছেন। কিন্তু কখনো কি লক্ষ্য করেছেন এরা হাঁটার সময় মাথাটা দ্রুত উপর-নিচে দোলায়? যদি লক্ষ্য করে থাকেন তবে ভেবেছেন কি কেন কবুতর হাঁটার সময় তাদের মাথা এভাবে দোলায়?
এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য ১৯৭৮ সালে কানাডার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক গবেষণা করেছিলেন। গবেষকদের প্রধান ছিলেন ড. বারি জে ফ্রোস্ট। গবেষকরা স্বচ্ছ কাঁচের বাক্স দিয়ে ঢেকে রাখা ট্রেডমিলের ফিতার উপর কবুতরকে হাঁটান ও পর্যবেক্ষণ করেন।
সেই গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। গবেষণার শুরুতে ধারণা করা হয়েছিল কবুতর মাথা দোলায় না। বরং কবুতর তাদের মাথা সামনের দিকে ঠেলে নেয়।
যখন গবেষকরা কবুতরের চলার ছবি ধীরগতিতে পর্যবেক্ষণ করেন তখন তারা কবুতরের মাথা দোলানোর দুটি পর্ব দেখতে পান। দুটি পর্বের প্রথমটিতে মাথা সম্মুখদিকে প্রায় ৫ সেন্টিমিটার ঠেলে দেয় এবং দ্বিতীয়টিতে মাথা স্থির করে ধরে রাখে। এভাবে সহজেই শরীরটিও সম্মুখদিকে নিয়ে যায়।
তবে ট্রেডমিলের সেই পরীক্ষা থেকে জানা যায়, যদি কবুতরের পারিপার্শ্বিক বস্তু নিশ্চল থাকে অর্থাৎ চলন্ত ফিতার ওপর কবুতর হাঁটতে থাকে তবে তা মাথা দোলায় না। বিপরীত যুক্তির মাধ্যমে, এটি সঠিক আবিষ্কারের দিকে নিয়ে যায়। মাথা দোলানোর মাধ্যমে কবুতর তার পারিপার্শ্বিকে থাকা বস্তুগুলোকে স্থির দেখে।
পশুপাখি ও মানুষের চোখের নাড়াচাড়া নিয়ে নিয়মিত অধ্যয়ন করেন যুক্তরাজ্যের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী মাইকেল ল্যান্ড। তার মতে, যখন কবুতর দ্বিতীয় পর্বে মাথা স্থির করে তখন আশপাশের বস্তু ঝাপসা হয় না। যদি কবুতরের মাথা ও শরীর একইভাবে চলত তবে কবুতরের রেটিনায় স্থির ছবি তৈরি হতো না।
প্রাণীদের জ্ঞান নিয়ে অধ্যয়ন করেন অধ্যাপক ব্লেইসডেল। তিনি তার গবেষণাগারে কবুতরকে হাতে নিয়ে সামনের দিকে হাঁটেন। তিনি দেখেন কবুতর তখন মাথা দোলায়। ব্লেইসডেল জানান, যেহেতু কবুতরের আশপাশের বস্তু তখন চলন্তাবস্থায় থাকে তাই কবুতর মাথা দোলায়।
দৃষ্টির এই কৌশল শুধুমাত্র কবুতরের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়। মহাকাশচারীরা যখন মহাকাশে চলতে থাকে তখন চক্ষুগোলক দ্রুত নাড়ায়। তবে মাথা নাড়াতে হয় না। চোখের একটি নড়াচড়াকে বলা হয় স্যাকেড। এই নড়াচড়া খুবই দ্রুত ঘটে এবং স্বল্প সময়ের জন্য স্থির হয়ে যায়। এরফলে মানুষ রেটিনায় স্থির ছবি পায়। দ্রুতগতিতে চলমান ট্রেনের জানালা দিয়ে তাকানো কারও চোখের দিকে তাকালে এই ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে।
কবুতরের ক্ষেত্রে মাথা দোলানোর বিষয়টি খুবই সুন্দর উদাহরণ হলেও মাটি থেকে ঠোঁকর দিয়ে খাবার খায় এমন অধিকাংশই পাখিই মাথা দোলায়। মুরগি, বক, সারস ইত্যাদি পাখিও শিকার ধরতে, খাবার সংগ্রহ করতে মাথায় দোলায়। আর এই দোলানোর ঘটনাটা ঘটে প্রকৃতপক্ষে বস্তুকে সুন্দরভাবে দেখার জন্য।
তবে বিজ্ঞান এখানেই থেমে নেই। বর্তমানে এই বিষয়টি নিয়ে আরও গবেষণা চলছে। বিজ্ঞান জানার চেষ্টা করছে কেন কিছু পাখি মাথা দোলায় আবার কিছু পাখি মাথা দোলায় না? হয়তো একদিন এই প্রশ্নের উত্তরও বেরিয়ে আসবে। তবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষায় থাকতে হবে।
তথ্যসূত্র- লাইফ সায়েন্স, লাইব্রেরি অফ কংগ্রেস এর ওয়েবসাইট।
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড