• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

যখন প্রেগনেন্সি কিট ছিল না

  নিশীতা মিতু

২০ অক্টোবর ২০১৯, ১২:০২
গম
ছবি : প্রতীকী

বর্তমানে একজন নারী খুব সহজেই জানতে পারেন গর্ভবতী হয়েছেন কিনা। বাসার কাছের ফার্মেসি থেকে প্রেগনেন্সি কিট কিনে এনে সহজেই পরীক্ষা করা যায়। এই নিয়ম আমাদের সবারই জানা। কিন্তু একটু অতীতের কথা ভাবুন তো।

বলছিলাম সেই সময়ের কথা যখন বাজারে ছিল না কোনো প্রেগনেন্সি কিট। তখন একজন নারী কী করে বুঝতেন তিনি গর্ভবতী কি না? কী করে পরীক্ষা করতেন নিজের গর্ভাবস্থা?

আজ থেকে প্রায় ৬০০০ বছর আগের কথা। চিকিৎসকগণ সে সময়ই মানুষের প্রস্রাব বা মূত্রের জৈবিক প্রক্রিয়া নিয়ে সূক্ষ্মদৃষ্টিসম্পন্ন গবেষণা করেছেন। ধারণা করা হয় এ কাজের সূচনা হয়েছিল মিশর থেকে। প্রাচীন মিশরের চিকিৎসকগণ সর্বপ্রথম মূত্র পরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভাবস্থা শনাক্ত করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন।

শুরুর দিকের গল্প-

নারীর গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে প্রাচীন মিশরে অদ্ভুত এক নিয়ম মানা হতো। সাধারণত কোনো নারীর মাসিক ঋতুস্রাব না হলে ধারণা করা হতো তিনি গর্ভবতী। এরপর নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাকে খেজুর ও অ্যালকোহল খাওয়ানো হতো। এই কাজটি ততক্ষণ অব্দি করা হতো যতক্ষণ না বমি করে। যদি কোনো নারী দ্রুত বার বার বমি করতেন তবে ধারণা করা হতো তিনি গর্ভবতী।

গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করার কষ্টকর এই পদ্ধতি অবশ্য খুব বেশিদিন টিকেনি। তখন শুরু হয় মূত্র পরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভাবস্থা নির্ণয়ের পদ্ধতি।

গম-বার্লি পদ্ধতি-

পূর্বের পদ্ধতির তুলনায় এটি কম কষ্টের ছিল। এই পদ্ধতিতে, একটি গম-বার্লিতে পূর্ণ গাদার ওপর নারী মূত্র ত্যাগ করত। মূত্রে থাকা ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বাড়ার কারণে যদি বীজ অঙ্কুরিত হতো তবে বোঝা যেত সেই নারী সন্তানসম্ভবা। অপেক্ষাকৃত সহজ হওয়ায় এ পদ্ধতি টিকেছিল বেশ অনেক বছর।

ইতিহাসে নতুন মোড়-

১৮৯০ সালের শেষের দিকে হরমোনের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানীরা। ১৯২০ সালে তারা মানবদেহে হিউম্যান ক্ররিওনিক গোনাডোট্রপিন (HCG) নামে একটি নির্দিষ্ট হরমোন খুঁজে পান। সাধারণত, গর্ভবতী নারীদের মূত্রেই কেবল এই হরমোনের উপস্থিতি পাওয়া যায় যা ভ্রুণ দেহ গঠনে বড় ভূমিকা পালন করে।

পরবর্তী সময়ে জার্মানি রসায়নবিদ Selmar Aschheim এবং স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ Bernhand Zondek মিলে HCG পরীক্ষার একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। তারা একটি স্ত্রী ইঁদুরের দেহে একজন গর্ভবতী নারীর মূত্র প্রবেশ করিয়ে দেখেন কদিনের মাঝে ইঁদুরের ডিম্বাশন বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের দুজনের নামের অদ্যাক্ষর অনুসারে এই পরীক্ষার নাম দেওয়া হয় A-Z টেস্ট।

এখানেই শেষ নয়!

১৯৩০ সালের কথা। বিজ্ঞানীরা ব্যাঙ ও খরগোশের ওপরও এই A-Z টেস্ট করেন। ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভিয়া ম্যাডিকেল স্কুলের বিজ্ঞানী ডা. মরিস ফ্রেডম্যান গবেষণা করে আবিষ্কার করেন যে একজন নারী সন্তানসম্ভবা কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যেতে পারে একটি স্ত্রী খরগোশের দেহে সেই নারীর মূত্র প্রবেশ করানোর মাধ্যমে। যদি মূত্র প্রবেশ করানোর কিছুদিনের মধ্যে তার ডিম্বাশয় বৃদ্ধি পায় তবে সেই নারী গর্ভবতী। আর না হলে নয়।

শেষ কথা-

সে সময় খরগোশ হত্যা পাপ বলা হলেও ডিম্বাশয় পরীক্ষা করার জন্য দ্রুততম উপায় ছিল প্রাণী ব্যবচ্ছেদ। রোগীর জন্য এটি ইতিবাচক হলেও খরগোশের জন্য ছিল বেশ নেতিবাচক। ভাগ্যিস ১৯৬০ সালে গর্ভাবস্থা পরীক্ষার নতুন নিয়ম আবিষ্কার হয়েছিল। নাহয় কত না অসহায় খরগোশকে জীবন দিতে হতো একবার ভাবুন।

ও হ্যাঁ, আধুনিক বিশ্বে গর্ভাবস্থা পরীক্ষার জন্য প্রেগনেন্সি কিট ব্যবহার করা হলেও মিশরের কিছু অঞ্চলে এখনও সেই গম-বার্লি পদ্ধতিই চালু রয়েছে।

ওডি/এনএম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড