• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মেয়েলি রোগ সনাক্তকরণে পুতুলের সহায়তা!

  মোঃ সাইফুল ইসলাম

১৫ অক্টোবর ২০১৯, ০৮:৫০
চিকিৎসা
ছবি : সংগৃহীত

শত শত বছর ধরে ও বিংশ শতাব্দীর পূর্ব পর্যন্ত চীনা মহিলাদের চিকিৎসা করা খুবই কৌশলপূর্ণ ছিল। সে সময় মহিলারা তাদের সতীত্ব রক্ষার বিষয়ে খুবই সচেতন ছিলেন। সতীত্ব রক্ষা ও শালীনতার বিষয়ে অতি সচেতনতা আজও সেখানকার অনেক সংস্কৃতিতে বিদ্যমান রয়েছে।

সতীত্ব রক্ষার বিষয়টি এতই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে একজন মহিলা তার শরীরের খুব বেশি অংশ স্বামী ছাড়া অন্য কাউকে দেখাত না। এমনকি চিকিৎসার জন্য পুরুষ চিকিৎসককেও তাদের ত্বকের বেশি অংশ দেখাতেন না।

সতীত্ব সচেতন এই মহিলাদের চিকিৎসা করা তাই অনেক কঠিন ছিল। কারণ ১৮৭৯ সাল পর্যন্ত চীনে মেয়েরা চিকিৎসাবিদ্যায় পড়ালেখা করতে পারত না। এজন্যও পুরুষ চিকিৎসকের জন্য মেয়েলি রোগের চিকিৎসা করা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

কারণ সে সময় চিকিৎসকগণ মহিলা রোগীদের পোশাক খুলতে পারতেন না, খুলে পরীক্ষা ও চিকিৎসাও করতে পারতেন না। এমনকি নারীর শরীরের তেমন কোনোই অংশ স্পর্শ করতে পারতেন না। হয়তো মেয়েলি রোগ সম্পর্কে কথা বলতেও লজ্জা পেতেন। ফলে রোগ সনাক্তকরণ এবং চিকিৎসা খুবই কঠিন ছিল।

তাই মহিলাদের রোগ সনাক্তকরণের সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য একটি সমাধান বের করা হয়েছিল। তৎকালে অনেক চীনা চিকিৎসক তাদের টেবিলের ওপর ছোট সাদা বর্ণের পুতুল (Medicine doll) রাখতেন। পুতুলটির ছিল শুয়ে থাকা উলঙ্গ নারীর প্রতিচ্ছবি। যখন কোনো মহিলা চিকিত্সার জন্য আসতেন তখন তিনি পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকতেন। অতঃপর পর্দার বাহিরে ছোট জানালা বা ছিদ্রের মাধ্যমে হাত বের করে দিতেন। চিকিৎসক তখন তার নাড়ি পরীক্ষা করতেন। এর বেশি স্পর্শ করার অধিকার চিকিৎসকের ছিল না। এরপর রোগী পুতুলের শরীরের অংশ চিহ্নিত করে নিজের সমস্যার স্থান ও সমস্যা বোঝাতেন।

যদি কোনো রোগীর শ্বাসকষ্ট থাকে তবে তিনি পুতুলের নাক থেকে বুকের উপর আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করতেন। পিরিয়ডের ব্যথায় কোথায় অস্বস্তি হয় তা পুতুলের তলপেটে দেখাতেন। মাথা ব্যথায় পুতুলের মাথায় আচমকা আঘাত করতেন। রোগী ও চিকিৎসকের এরূপ রহস্যপূর্ণ যোগাযোগ থেকেই চিকিৎসকগণ রোগ নিরূপণ করে প্রেসক্রিপশন তৈরি করতেন।

একটি আদর্শ পুতুল ৭-১২ সেন্টিমিটার লম্বা হতো। সংগৃহীত কিছু কিছু পুতুলে দামি অলঙ্কার, হাতে বালা ও স্যান্ডেল পরিহিত ছিল। পুতুলগুলো সাধারণত এক হাতের কনুইয়ের ওপর ভর দিয়ে শুয়ে থেকে অপর হাত দিয়ে স্তন ঢেকে রাখত। যা শালীনতা প্রকাশ করত। অনেক সময় কোমরের ওপর ওড়না দিয়ে ঢাকা থাকত। পুতুলের ব্যাপারেও ছিল শালীনতার গুরুত্ব। কারণ ঐতিহ্যগতভাবে চীনে বিবস্ত্র নারীর প্রতিকৃতি অঙ্কন করার বিধান নেই।

অনেক ধনী ঘরের মহিলারা নিজস্ব পুতুল রাখত। তারা চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে পুতুলে দাগাঙ্কিত করে ভিন্ন কোনো ব্যক্তিকে দিয়ে তা চিকিৎসকের কাছে পাঠাত। অনেক পুতুলের দেহের আকার-আকৃতি খুবই সূক্ষ্মভাবে তৈরি করা হয়েছিল, যাতে পুতুলটি মালিকের শরীরের অবয়বের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে।

ধারণা করা হয়, পুতুল ব্যবহার করে চিকিৎসার এই পদ্ধতিটি পঞ্চদশ শতকে মিং রাজত্বকালে শুরু হয়েছিল। যা বিংশ শতাব্দীর পূর্ব পর্যন্ত অর্থাৎ কিং রাজত্বকাল পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। এখনও দূরবর্তী গ্রাম এলাকায় যেখানে শহুরে পরিবেশের ছোঁয়া লাগেনি সেখানে এই পুতুলের ব্যবহার আছে বলে জানা যায়।

তথ্যসূত্র : ডেইলি ব্রুইন, অ্যামিউজিং প্লানেট, অ্যাটলাস অবসকিউরা ডট কম।

ওডি/এনএম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড