• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘শিল্পচর্চা’ শিশুদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

  বাপ্পি লিংকন রায়

১৪ অক্টোবর ২০১৯, ১৬:০৩
শিল্পচর্চা
ছবি : ইন্টারনেট

‘সকল শিশুই শিল্পী।’ জগৎ বিখ্যাত চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসো এটি বলেন। এক জরিপে দেখা গেছে ২-৭ বছর বয়সি শিশুদের মধ্যে ৯৮ দশমিক ৫ শতাংশরই অসম্ভব শিল্প জ্ঞান থাকে। সময়ের সঙ্গে, সামাজিক ও পারিবারিক অবস্থানের কারণে ধীরে ধীরে তা হ্রাস পায়। অবশেষে আমরা তৈরি হই একটি যন্ত্র মানবে।

কাদা মাটির মতো স্বাধীনভাবে আমরা শিশুদের গড়ে তুলতে পারি। তবে হ্যাঁ যখনই আমরা তাদের ওপরে কোনো বিষয় চাপিয়ে দিচ্ছি তখনই সৃষ্টি হচ্ছে মূল সমস্যা। আমরা হয়তো অভিভাবকরা শিশুদের সঙ্গে তাদের ভালো লাগা-মন্দ লাগা, তাদের স্বপ্ন কিংবা তাদের লক্ষ্য নিয়ে কোনো আলোচনাই করি না। আবার নতুন কোনো বিষয়ে তাদের উৎসাহ না দিয়ে সন্তানের কানের কাছে বলতে থাকি ডাক্তার হবে, ইঞ্জিনিয়ার হবে, বিজ্ঞানী হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা যদি শিশুদের আস্থা, মনোবল কিংবা লক্ষ্যকে বিশ্বাস করি, তবেই তার আনন্দময় শৈশবের সঙ্গে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ হবে।

ছবি আঁকা, গান করা, নৃত্য, লেখালেখি, বিজ্ঞান চর্চা, কবিতা আবৃত্তি ইত্যাদি শিল্প কর্মকাণ্ডের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে শিশুর সৃষ্টিশীল মনোভাবকে জাগরিত করতে হবে। শিশুরা বারো থেকে আঠারো মাস বয়স থেকে পেন্সিল বা রং দিয়ে অসংখ্য হিজিবিজি লাইন দিয়ে ছবি আঁকার চেষ্টা করে।

তাদের ছবি হয় সৃজনাত্মিক, বাস্তবধর্মী নয়। রং নিয়ে খেলা করে সে নিজেকে নানা ভাবে আবিষ্কার করে। তার অবচেতন মনের ভাবনা ও স্বপ্ন রঙের মাধ্যমে সামনে এসে নতুন জগৎ সৃষ্টি করে। এভাবে সে আনন্দের সঙ্গে নতুন সব পথের সন্ধান করে।

আমরা সকলে অবগত যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান শিল্প- সাহিত্যের সমঝদার ছিলেন। তিনি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও কবি জসিমউদ্দিনকে অনেক সম্মান করতেন। শিশুদের অত্যাধিক ভালোবাসতেন। শিশুদের সান্নিধ্য পেতে চাইতেন সবসময়। তাই তার জন্মদিনে বাংলাদেশে শিশু দিবস পালিত হয়। আর সেই শিশু দিবসে সারাদেশে শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা হয়। শিশুরা সেখানে ছবি আঁকে।

এমনকি তিনি যখন রাষ্ট্রীয় সফরে সোভিয়েত ইউনিয়নে যান, তখন তিনি উপহার হিসেবে নিয়ে যান এ দেশের শিশুদের আঁকা তার স্বপ্নের বাংলাদেশের ছবি, সোনার বাংলার ছবি। সে দেশের রাষ্ট্রনায়করা সেসব ছবি পেয়ে প্রশংসা করেন। জগৎখ্যাত শিল্পী এস এম সুলতান, যার বাড়ি নড়াইলে। তিনি শিশুদের ও পশু-পাখিদের অনেক ভালোবাসতেন। নিজ গ্রামে তিনি শিশুদের জন্য তৈরি করেন শিশুস্বর্গ।

তিনি একটি বড় নৌকা তৈরি করেছিলেন। আর শিশুরা শিল্পীর সঙ্গে নৌকায় করে আনন্দঘন পরিবেশে ছবি আঁকত। নড়াইলে ঘুরতে গেলে এই নৌকাটা দেখতে পাবেন। শিল্পী সুলতান বলেছিলেন, “যে শিশু একবার তুলি ধরে সে শিশু কখনো অস্ত্র ধরতে পারে না।”

অনেকে হয়তো ভাববে আমার সন্তান তো চিত্রশিল্পী হবে না কিংবা গায়ক হবে না, তাহলে শিল্প চর্চা বা ছবি আঁকলে কী উপকার হবে? যেসব শিশু শিল্প চর্চা বা ছবি আঁকে তাদের-

১। সৌন্দর্যবোধ বাড়ে ২। রুচিবোধ ও নান্দনিক বোধ তৈরি হয় ৩। পরিমিতিবোধ বাড়ে ৪। চোখ ও মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্র কার্যকর ও শক্তিশালী হয় ৫। নিয়ম-শৃঙ্খলা শেখে ৬। পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা বাড়ে ৭। কল্পনাশক্তির প্রসার ঘটে ৮। মানবিক মূল্যবোধ গড়ে ওঠে ৯। সময়জ্ঞান বাড়ে ১০। দেশপ্রেম জাগ্রত হয়

তাই আমরা আমাদের শিশুদের এমন ক্রিয়া-কলাপে নিযুক্ত করি যা কেবল তাদের ডিজিটাল গেজেটের দক্ষ তাই নয়; সামাজিক, মানবিক এবং উত্তম শিক্ষাগত দক্ষতারও বিকাশ ঘটে। শিল্পচর্চা এর সহায়ক হতে পারে বলে আমি মনে করি। আসুন আমরা সন্তানদের নিয়ে দেশটি মননশীল শিল্পী ও সুন্দর মানুষে ভরে তুলি।

ওডি/এনএম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড