মোঃ সাইফুল ইসলাম
সাধারণত মাছ ধরতে আমরা বড়শিতে টোপ হিসেবে ছোট ছোট মাছ, ময়দা, কেঁচো কিংবা বিভিন্ন ধরনের পতঙ্গের লার্ভা ব্যবহার করে থাকি। আবার বাঘ, কুমির শিকারে টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হয় মাংস। কিন্তু কুমির শিকারের জন্য টোপ হিসেবে মাংসের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছিল জীবন্ত মানব শিশু! হ্যাঁ, অবিশ্বাস্য হলেও এটিই সত্য।
আফ্রিকা মহাদেশ ইতিহাসে খুবই সমৃদ্ধ একটি মহাদেশ। এই মহাদেশে ব্যাপকহারে দাস প্রথা প্রচলিত ছিল। নানা ঐতিহাসিক দলিল থেকে জানা যায়, সেই আফ্রিকাতে সাদা বর্ণের আমেরিকানরা দাসদের কালো বর্ণের শিশুদের কুমির ধরার টোপ হিসেবে ব্যবহার করত!
১৮০০-১৯০০ সালে কুমির শিকার খুবই লাভজনক ব্যবসা ছিল। কুমিরের চামড়া ব্যাগ, বেল্ট, জুতাসহ বিভিন্ন রকমের জিনিস তৈরিতে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু সাদা বর্ণের আমেরিকানরা নিয়মিতই কুমির শিকার করতে গিয়ে দুর্ঘটনাবশত তাদের বাহু এমন কী জীবন হারিয়ে ফেলত। কারণ তারা কুমির ধরার জন্য পানিতে নামত।
এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য তারা কালো বর্ণের দাস শিশুদের টোপ হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ৩ জুন, ১৯০৮ সালে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ থেকে জানা যায়, ‘নিউইয়র্ক জুলজিলক্যাল গার্ডেন’ এর কর্তৃপক্ষ দুটি কালো শিশুকে চিড়িয়াখানার খাঁচার ভেতর নিক্ষেপ করে। সেই খাঁচার ভেতর ২৫টি কুমির নিমজ্জ্বিত অবস্থায় ছিল। শিশুদের খাঁচায় নিক্ষেপ করার পরপরই কুমিরগুলো শিশু দুটিকে তাড়া করতে থাকে। এভাবে কুমিরগুলো বেরিয়ে আসে ও দর্শনার্থীরা দেখতে সক্ষম হয়।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ মনে করেন কুমির কালো শিশুকে খুবই পছন্দ করে। ১৯২৩ সালে টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায় চিপলি, ফ্লোরিডাতেও কালো শিশুদের কুমিরের টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।
নৃশংস এই কাজে ব্যবহারের জন্য শিশুদের গলা ও কোমরে দঁড়ি বাঁধা হতো। এমনভাবে বাঁধা হতো যাতে শিশুরা কান্না করে। এছাড়াও কেউ কেউ বলেন তাদের শুধু স্বল্প পানিতে ছেড়ে দেওয়া হতো। অতঃপর কুমির শিশুদের খাওয়ার লোভে কাছে আসলে প্রশিক্ষিত বন্ধুকধারীরা গুলি করে কুমিরটিকে মেরে ফেলত। অনেক সময় শিশুদের মুখে নেওয়ার পর গুলি করত। সেই দৃশ্য আবার শিকারীরা পোস্টকার্ড, স্থির ছবি অথবা স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে রেখে দিত।
জীবন্ত শিশুদের টোপ হিসেবে ব্যবহারের কথা শুনেই যে কোনো স্বাভাবিক মানুষের বিবেক নাড়া দিতেই পারে। কিন্তু ঘটনা এখানেই শেষ নয়। শিকারীরা অনেক সময় জীবিত কালো শিশুর চামড়া ছাড়িয়ে টোপ তৈরি করত!
মিশিগানের ‘বর্ণবাদী মেমোরাবিলিয়ার জিম ক্রো যাদুঘর’ এর মধ্যে এমন কয়েকটি বিরক্তিকর ক্রিয়াকলাপ দেখতে পাওয়া যায়। তবে টোপ হিসেবে ব্যবহৃত শিশু মারা গেলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাকে মাত্র দুই ডলার অর্থ সহায়তাও দেওয়া হতো।
পূর্বে ফ্লোরিডার অনেক লোকই এই নৃশংসা ঘটনাকে গুজব হিসেবে প্রচার করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কালো শিশুদের কুমিরের টোপ হিসেবে ব্যবহারের অনেকগুলো দলিল পাওয়া যায়। এছাড়াও অনেক ঘুমপাড়ানি গানেও দাস শিশুদের টোপ হিসেবে ব্যবহারের সেই নৃশংস ঘটনার কথা স্থান পেয়েছে।
তথ্যসূত্র : ফেসটুফেস আফ্রিকা ডট কম, লিবার্টি রাইটার্স আফ্রিকা ডট কম।
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড