মোঃ সাইফুল ইসলাম
যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন ১৬ হাজার ৫০০ লিটার রক্তের প্রয়োজন পড়ে। এই রক্ত জরুরি সার্জারি, বিভিন্ন ধরনের অপারেশন ও নিয়মিত রক্ত গ্রহণ করেন এমন রোগীর জন্য প্রয়োজন হয়। কিন্তু রক্তগ্রহীতা চাইলেই যেকোনো রক্ত গ্রহণ করতে পারেন না। রক্ত ট্রান্সফিউশনের জন্য দাতা ও গ্রহীতা উভয়ের রক্তই উপযুক্ত হতে হয়। মিলতে হয় উভয়ের রক্তের গ্রুপ।
এই গ্রুপ মিলিয়ে রক্ত সংগ্রহ করাটা কঠিন কাজই বটে। তাছাড়াও সবধরনের রক্ত সমভাবে পাওয়া যায় না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ‘এ’ গ্রুপের রক্ত সহজেই পাওয়া যায়। কিন্তু গত বছরের জুলাই মাসে রেড ক্রস রক্তদাতার সংকটের কথা ঘোষণা করেছিল।
বর্তমানে গবেষকরা মানুষের অন্ত্রে থাকা ব্যাকটেরিয়া থেকে দুইধরনের এনজাইম সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। যেগুলো অতি সাধারণভাবে প্রাপ্ত এ গ্রুপের রক্তকে ‘ও’ গ্রুপের রক্তে পরিবর্তন করতে পারে! ‘ও’ গ্রুপের রক্ত হচ্ছে সার্বজনীন দাতা গ্রুপ। অর্থাৎ এই রক্ত যেকোনো গ্রুপের রক্তধারীকে দেওয়া যাবে।
মানুষ সাধারণত চার ধরনের রক্তের গ্রুপ বিশিষ্ট হয়। লোহিত রক্তকণিকার ওপর বিশেষ ধরনের সুগার বা চিনির উপস্থিতির জন্য এই চার ধরনের গ্রুপ সৃষ্টি হয়। সুগার অণুকে বলা হয় এন্টিজেন। এই এন্টিজেনের উপস্থিতির কারণেই ‘ও’ গ্রুপের রক্ত ব্যতিত বাকি সব রক্তই ট্রান্সফিউশনের জন্য গ্রুপ মেলাতে হয়। কারণ ভিন্ন এন্টিজেন শরীরে প্রবেশ করালে রক্ত জমাট বেঁধে গ্রহীতার মৃত্যু হতে পারে। তবে ‘ও’ গ্রুপে কোনো এন্টিজেন না থাকায় সকলেই এটি গ্রহণ করতে পারে।
সাধারণত জরুরি চিকিৎসার কক্ষে যখন চিকিৎসক ও নার্সদের রক্ত পরীক্ষার সময় থাকে না, রোগীর অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন হয় সে সময় দ্রুত রক্ত ট্রান্সফিউশনের জন্য ‘ও’ গ্রুপের রক্ত দেয়।
তাই যদি রক্তের গ্রুপকে পরিবর্তন করে ‘ও’ গ্রুপ তৈরি করা যায় তবে রক্তের সংকট মোকাবেলা করা অনেক সহজ হবে। এসব ভেবে ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল বায়োলজিস্ট স্টিফেন উইদার্স চার বছর ধরে গবেষণা করেন। উইদার্স মানুষের অন্ত্রে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পান যেগুলো অন্ত্র থেকে মিউসিন নামক সুগার ভক্ষণ করে। এই মিউসিন সুগার লোহিত রক্ত কণিকায় থাকা মিউসিন সুগারের অনুরূপ।
এই তথ্য জানার পর ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্টডক গবেষক পিটার রাফেল্ড মানুষের মল থেকে নমুনা নিয়ে ডিএনএ সংগ্রহ করেন। পরবর্তীকালে এই ডিএনএ ইশ্রেকিয়া কোলাই (Escherichia coli) নামক ব্যাকটেরিয়ায় প্রবেশ করান। তখন এমন এক ধরনের প্রোটিন উৎপন্ন হয় যা রক্তের এ গ্রুপ নির্দেশক সুগারকে অপসারণ করতে পারে।
আমাদের শরীরের মোট ওজনের শতকরা দুই ভাগ ব্যাকটেরিয়া থাকে। এর মধ্যে ১৩০ প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া অন্ত্রে পাওয়া যায়। এসব আন্ত্রিক ব্যাকটেরিয়া থেকে প্রাপ্ত এক ধরনের এনজাইম হচ্ছে ফ্লাভিনোফ্রাক্টর প্লাটিই (Flavonifractor plautii)। এই এনজাইমের সামান্য পরিমাণ যদি এ গ্রুপের রক্তে প্রয়োগ করা যায় তবে তা ও গ্রুপের রক্তে পরিণত হয়।
যেহেতু এ গ্রুপের রক্তের সরবরাহ প্রচুর তাই গবেষকরা এটিকে পরিবর্তন করে ও গ্রুপে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এখনও অনেক কাজ বাকি রয়ে গেছে। এই এনজাইম সুগার সরানোর পাশাপাশি রক্তের অনাকাঙ্খিত কোনো পরিবর্তন করে কিনা সেটিও দেখছেন। তবে এই গবেষণা পুরোপুরি সফল হলে রক্ত সরবরাহ অনেকটা সহজ হয়ে যাবে ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে আরেকটি বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে।
তথ্যসূত্র : সায়েন্স ম্যাগাজিন, ফিউচারিজম ডট কম, রেডক্রস.অর্গ।
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড