• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

প্রাচীন ভূমিকম্প সনাক্তকরণ যন্ত্রটিই আধুনিক বিজ্ঞানের বিস্ময়!

  মোঃ সাইফুল ইসলাম

১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৬:১১
ভূমিকম্প
ছবি : সংগৃহীত

ভূমিকম্পের সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। এর প্রভাবে মানব জীবন ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। তাই এই ভূমিকম্প নিয়ে বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত গবেষণা করছেন। এই গবেষণা প্রাচীনকালেও প্রচলিত ছিল।

তাইতো, ১৩২ সালে চীনা জ্যোতির্বিদ, গণিতজ্ঞ ও প্রকৌশলী ঝাং হ্যাং ভূমিকম্পের পূর্বাভাস প্রাপ্তির যন্ত্র উদ্ভাবন করেছিলেন। যন্ত্রটির নাম ছিল সিসমোস্কোপ। সিসমোস্কোপ হচ্ছে এমন একটি যন্ত্র যা ভূমিকম্পের সময় ভূমির ঝাঁকুনি নির্দেশ করে। এটিই ছিল পৃথিবীর প্রথম ভূমিকম্প সনাক্তকরণ যন্ত্র। মনে রাখবেন, সিসমোস্কোপ কিন্তু সিসমোমিটার বা সিসমোগ্রাফ নয়।

এক কথায়, একটা ঝুলন্ত দোলকের প্রভাবে সামান্য ঝাঁকুনিতে কোনো বস্তুর পতন হওয়ার প্রক্রিয়াই হচ্ছে সিসমোস্কোপ। এই যন্ত্র ঝাং হ্যাংয়ের আবিষ্কারের পূর্বে ছিল না। হ্যাংয়ের যন্ত্রের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল যে, সেটি খুবই সংবেদনশীল ও ভূমিকম্পের দিক নির্ণয় করতে পারত।

ঝাং হ্যাংয়ের যন্ত্রটি দেখতে একটি বিশালাকার মদের পাত্রের ন্যায় ছিল। ব্রোঞ্জ নির্মিত পাত্রটির ব্যাস ছিল ছয় ফুট। পাত্রের বাইরে আটটি ড্রাগনের মাথা ছিল। প্রতিটি ড্রাগনের মুখে একটি করে বল ছিল। ড্রাগনের মাথাগুলো কম্পাসের আটটি দিক নির্দেশ করে। ড্রাগনের মাথার নিচে আটটি ব্যাঙ ঊর্ধ্বমুখী হয়ে মুখ খুলে বসানো ছিল। তবে পাত্রের ভিতর কী ছিল তা জানা যায়নি। ধারণা করা হয়, পাত্রের ভেতরে এমন কিছু ছিল যা দোলকের ক্রিয়াকৌশল অনুসারে চলত।

যখন কোনো ভূমিকম্প শুরু হতো দোলকে ভূমির কম্পনে ঝাঁকুনি লাগত। ঝাঁকুনির ফলে ড্রাগনের মুখের বল ব্যাঙের মুখে পড়ে জোরালো আওয়াজ হতো। সাধারণত যেদিক থেকে ভূমিকম্প হতো সেদিকের বলটাই পড়ে যেত। এই বল পতনের আওয়াজের ফলেই ভূমিকম্পের সূচনা বোঝা যেত। সিসমোস্কোপের বিশেষত্ব ছিল, খুবই মৃদু কম্পন যা স্বাভাবিকভাবে অনুভূত হতো না সেক্ষেত্রেও সঠিক সঙ্কেত দিতে পারত। ঝাং হ্যাং তার আবিষ্কারটিকে তার ভাষায় ‘হুফেং দিডং ইই’ বা ‘ভূমিকম্পের আবহাওয়া" বলে অভিহিত করেছিলেন।’

যে কোনো নতুন আবিষ্কারের শুরুতে সমালোচকরা সমালোচনা করবেই। ঝাং হ্যাংয়ের আবিষ্কারের পরও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। কারণ হ্যাংয়ের যন্ত্রটি জনগণের সামনে উন্মোচন করা হলে দীর্ঘদিন কোনো বল পড়েনি। এরপর একদিন বল পড়ে যায়। তবে সেদিনের ভূমিকম্পের তীব্রতা এতই কম ছিল যে লোকজন কম্পন অনুভবই করতে পারেনি। তাই তারা যন্ত্রটির কার্যকারিতা সম্পর্কে আরও বেশি সমালোচনা করতে থাকে।

একদিন একজন আগন্তুক এসে জানান, সত্যিই তাদের ওদিকে ঐদিন ভূমিকম্প হয়েছিল। এই তথ্যের ভিত্তিতে হ্যাংয়ের আবিষ্কৃত সিসমোস্কোপের কার্যকারীতার সত্যতা মিলে যায় এবং সমালোকদের মুখ বন্ধ হয়ে যায়।

ভূমিকম্প

যন্ত্রটির অভ্যন্তরীণ গঠন

হ্যাংয়ের মৃত্যুর পর শত বছর পেরিয়ে গেলে একজন চীনা বুদ্ধিজীবী হ্যাংয়ের সিসমোস্কোপের অনুলিপি পুনরায় তৈরি করার দাবি করেন। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে বর্তমানে কোনো সিসমোস্কোপ দেখা যায় না। অনেক সমকালীন লেখকদের লেখায় সিসমোস্কোপের বর্ণনা পাওয়া যায়। কিন্তু তারা কেউই পাত্রের ভেতরে গঠনের বর্ণনা দিতে পারেননি। তাছাড়াও যদি ভেতরে দোলক থাকেই তবে প্রাচীন একটি দোলক কীভাবে এতটা সংবেদী ছিল, যা অতি মৃদু কম্পনেই কাজ করত তা আজও রহস্যই রয়ে গেছে।

ঝাং হ্যাংয়ের সিসমোস্কোপ শত শত মাইল দূরে উৎপন্ন হওয়া ভূমিকম্পের সঙ্কেত দিতে পারত। উনিশ ও বিশ শতকে চীনে হ্যাংয়ের যন্ত্রের অনুরূপ যন্ত্র তৈরির দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু এই যন্ত্রটি পূর্বের যন্ত্রের মতো সঠিকভাবে সঙ্কেত দিতে ব্যর্থ হয়। ২০০৫ সালে চীনা বিজ্ঞান একাডেমির ভূমিকম্পবিদ ও প্রত্নতত্ত্ববিদদের একটি দল ঘোষণা দেয় যে তারা হ্যাংয়ের সিসমোস্কোপের প্রতিলিপি তৈরি করেছে।

এই ভূমিকম্পবিদ ও প্রত্নতত্ত্ববিদরা তাদের যন্ত্রটিতে ৮টি বলের পরিবর্তে মাত্র একটি বল ব্যবহার করেছিলেন। ফলে এটি শুধুমাত্র যেদিকে বল ব্যবহার করা হয়েছিল সেদিকে উৎপন্ন ভূমিকম্পের দিক নির্দেশ করতে পারত।

ঝাং হ্যাংয়ের সিসমোস্কোপ ১৮০০ বছরের পুরনো হতে পারে। কিন্তু তার মূলনীতি আজও বিজ্ঞানীরা অপরিবর্তিত রেখে সিসমোগ্রাফ তৈরি করেছেন। তবে ২০১৬-১৭ সালের দিকে একদল গবেষক দাবি করেন, সমুদ্রতলদেশে থাকা অপটিক্যাল ফাইবারের তরঙ্গের উত্থান-পতনের দ্বারা ভূমিকম্পের সঙ্কেত প্রাপ্তির জন্য আরও উন্নত যন্ত্র তৈরি করা সম্ভব।

হয়তো সম্ভব। কিন্তু প্রাচীনকালে তৈরিকৃত ঝাং হ্যাংয়ের উদ্ভাবিত সিসমোস্কোপের কথা কোনোভাবে ভুলতে পারবে কী আধুনিক বিজ্ঞান?

তথ্যসূত্র : জেডএমই সায়েন্স।

ওডি/এনএম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড