নিশীতা মিতু
ঠিক সন্ধ্যা নামার মুখে সূর্য যখন তেজ ছেড়ে নরম আলো বিলায়, রাতের আঁধার যখন আসবে বলে উঁকিঝুঁকি দেয়, তখনই নিজের সবটুকু রূপ ছড়িয়ে ফোটে এক ফুল। নাম তার সন্ধ্যামালতী। কেউ কেউ ভালোবেসে তার নাম দিয়েছে সন্ধ্যামণি, কেউ বা ডাকে কৃষ্ণকলি। নামগুলো শুনেই আপনার মনে হবে এ তো আমাদের ফুল, বাঙালির ফুল। সে ভাবনা ভুল প্রমাণিত হবে যখন জানবেন সুদূর পেরু থেকে আগমন তার।
বসতবাড়ির আঙিনা বা শখের বাগানের অলংকার সন্ধ্যামালতী নিয়ে চলুন আজ আলোচনা হয়ে যাক-
পেরুতে আদি নিবাস হলেও নিজ সৌন্দর্য গুণে সন্ধ্যামালতী ছড়িয়ে পড়ে পুরো বিশ্বে। একেক দেশে, একেক অঞ্চলে অবশ্য ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকা হয় তাকে। ইংরেজিতে এ ফুলের নাম ‘ফোর ও ক্লক’ বা চারটার ফুল। অনেকে আবার চেনেন ‘বিউটি অব নাইট’ বা রাতের সৌন্দর্য নামে।
বাংলায় সন্ধ্যামালতী নামের সঙ্গে যেমন সন্ধ্যার সম্পর্ক রয়েছে তেমনি ইংরেজি ফোর ও ক্লক নামটির সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে সময়। দুপুর গড়িয়ে চারটে নাগাদ যখন সন্ধ্যার আগমনী প্রহর শুরু হয়, তখনই ফোটে এই ফুল। অবশ্য শীতের সকালেও এর খোঁজ পাওয়া যায়।
নানা রঙের সন্ধ্যামালতী
রঙের বাহারে পরিপূর্ণ এক ফুল সন্ধ্যা মালতী। সবচেয়ে বেশি দেখা যায় গাঢ় গোলাপী রঙের। হলুদ রঙেরও হয় এ ফুল। আবার কখনো দেখা যায় ধবধবে সাদা কিংবা টকটকে লাল রঙে। নিজের ইচ্ছে হলে এক ফুলেই দুই রঙে নিজেকে সাজায় সন্ধ্যামালতী। কিছু সন্ধ্যামালতী বাতাসে ছড়িয়ে দেয় হালকা মিষ্টি সুগন্ধ।
সাধারণত ২ থেকে ৩ ফুট উচ্চতা হয়ে থাকে এর গাছের। কান্ড নরম হয়। সারাবছরই সন্ধ্যামালতী গাছে ফুল ফোটে, তবে তা বেড়ে যায় বর্ষা আর শরতে। কিছুটা আদুরে স্বভাবের গাছ সন্ধ্যামালতী। অতিরিক্ত রোদ তার সহ্য হয় না। আবার, একদম স্যাঁতস্যাঁতে জায়গাও পছন্দ নয়। মূলত, আবছা আলো-ছায়াযুক্ত স্থানই সন্ধ্যামালতীর জন্য উপযুক্ত।
সন্ধ্যামালতী ফুলের বীজ
ডালিয়ার মতো এ গাছের শিকড় থেকে স্ফীত কন্দ জন্মায়। এ কন্দ থেকে পরবর্তী বছর গাছ জন্মানো সম্ভব। বীজ থেকেও চারা জন্মে। মনের মতো জায়গা পেলে সন্ধ্যামালতী বেশ আয়েশ করেই ডালপালা ছড়িয়ে দেয়।
পূজা পার্বণে এ ফুল ব্যবহার করা হয়। তবে এই ফুলের ব্যবহারও কিন্তু কম নয়। সন্ধ্যামালতী থেকে এক ধরনের খাবার উপযোগী রং পাওয়া যায় যা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে ব্যবহার করা হয়। এই রং কেক ও জেলিতে ব্যবহৃত হয়। সন্ধ্যামালতীর পাতাও সেদ্ধ করে খাওয়া যায়। তবে তা কেবল খাদ্য সংকটের সময়।
সন্ধ্যামালতীর ঝাড়
এর পাতার নির্যাস ব্যবহৃত হয় ত্বকের প্রদাহ, শুষ্ক ত্বক, আবসিস, ক্ষত নিরাময় ও ব্যাথা নিরসনে। দক্ষিণ ব্রাজিলে এসব রোগের ভেষজ চিকিৎসায় এখনও সন্ধ্যামালতী পাতার নির্যাস ব্যবহৃত হয়।
বাগানের জন্য কিন্তু সন্ধ্যামালতী বেশ উপকারী। কারণ এটি মাটির দূষণ প্রশমন করে। অর্থাৎ, আপনার বাগানে এ গাছ থাকলে তা বাগানের জন্য ভালো ফলাফলই বয়ে আনবে। তাই বাগানে সন্ধ্যামালতী না থাকলে আজই কারও কাছ সংগ্রহ করুন বীজ।
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড