• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

যে বনে আত্মহত্যার জন্য যায় মানুষ! (ভিডিও)

  ফিচার ডেস্ক

০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৩:০৪
অওকিগাহারা
ছবি : সংগৃহীত

গাছপালায় ঘেরা শান্ত একটি বন, রোমাঞ্চের স্বাদ নিতে এমন বনে যেতে চান অনেকেই। কিন্তু এই বনে কেউ ঘুরতে বা রোমাঞ্চের স্বাদ গ্রহণ করতে যান না, যান আত্মহত্যা করার উদ্দেশ্যে। শুনতে অবাক লাগলেও এমন একটি বনই সত্যিই রয়েছে এশিয়ার দেশ জাপানে।

প্রায় ৩৫ বর্গ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে ছড়িয়ে থাকা জাপানের এই বন বিশ্বজুড়ে আত্মহত্যার বন নামেই পরিচিত। এই বিশেষ বনটির নাম ‘অওকিগাহারা’। কারো কারো কাছে এটি সি অব ট্রিজ অথবা গাছের সমুদ্র নামেও পরিচিত। অদ্ভুত পাথর আর কোনো প্রাণের অস্তিত্ব না থাকায় নির্জন এই বনটি পর্যটকদের দৃষ্টি কেড়েছে অনেক আগেই।

ফুজি পর্বতমালার উত্তর-পশ্চিম এই বনটির অবস্থান। এখন অব্দি এই বনে কতজন মানুষের মৃত্যু ঘটেছে তার হিসাব অজানা। ধারণা করা হয়, গড়ে প্রতিবছর নির্জন এই বনটিতে ১০০ জন মানুষ আত্মহত্যা করেন। আবার শোনা যায়, আত্মহত্যা করতে আসা অনেকে এই বনে কিছুদিন ক্যাম্প করে থাকেন। এ সময় তারা চিন্তা করেন আত্মহত্যা করবেন কি করবেন না।

প্রতিবছর এই বন থেকে শতাধিক মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। জানা যায়, ১৯৮৮ সালে এই বনে ৭২ জনের মৃতদেহ পাওয়া যায়। ২০০২ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৮ জনে। এর পরের বছর, অর্থাৎ, ২০০৩ সালে তা ১০০ ছোঁয়। ২০০৪ সালে তা গিয়ে দাঁড়ায় ১০৮ জনে।

স্থানীয় প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ১০০ জনেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছে এই বনে। এর পর থেকে স্থানীয় প্রশাসন মৃতের সংখ্যা প্রকাশ করা বন্ধ করে দেয়। মার্চ মাসের দিকে এ বনে আত্মহত্যার প্রবনতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। আত্মহত্যাকারীদের বেশিরভাগই ফাঁসিতে ঝুলে না হয় মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ সেবনে আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যার স্থান হিসেবে অওকিগাহারা বনটি বিশ্বে দ্বিতীয়।

মানুষ কেন এই বনে আত্মহত্যা করতে আসে তা নিয়েও অনেক ধরনের গল্প প্রচলিত রয়েছে। অনেকের মতে, ১৯৬০ সালে সেইকো মাটসুমোটো নামের এক জাপানি লেখকের দুটি উপন্যাস ‘টাওয়ার অফ ওয়েবস’ ও ‘লিট’ প্রকাশের পর থেকেই এই অঞ্চলে এসে আত্মহত্যার ঘটনা বেড়ে যায়। এই উপন্যাসের দুটি চরিত্র তাদের পরিবার ও সন্তানের শুভ কামনায় এই বনে এসে আত্মহত্যা করেছিল।

ধারণা করা হয়, উপন্যাসের সেই চরিত্র দুটি স্থানীয় মানুষকে এত বেশি প্রভাবিত করেছিল যে তারাও পরিবার ও সন্তানের মঙ্গল কামনা এখানে এসে আত্মহত্যা করে।

আবার- ঐতিহাসিকদের মতে, উনবিংশ শতাব্দীতে এই এলাকায় ‘উবাসুতে’ নামে এক বিচিত্র রীতি প্রচলিত ছিল। এই রীতি অনুযায়ী মৃত্যু পথযাত্রী বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের এই জঙ্গলে এসে ছেড়ে চলে যেতেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। তারপর এখানেই তাদের মৃত্যু হতো। অনেকের ধারণা, এই বনে মৃত ব্যক্তির আত্মারা ঘুরে বেড়ায়। আর কোনো জীবিত ব্যক্তি এখানে এলে ওই আত্মারা তাকে আত্মহত্যায় প্রভাবিত করে।

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, যারা এই বনে আত্মহত্যা করতে আসেন তাদের ধারণা এখানে তারা সফলভাবে কাজটি করতে সক্ষম হবেন। কেউ কেউ আবার বলছেন, গণমাধ্যম ও সিনেমাতে এই বনে আত্মহত্যার বিষয়টি এত বেশি প্রচার করার কারণে অনেকে এই বনেই আত্মহত্যা করতে আকৃষ্ট হচ্ছেন।

মানুষ যেন এই বনে এসে আত্মহত্যা না করে তার জন্য স্থানীয় সরকারের উদ্যোগে বনে ঢোকার মুখে একটা সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। যেখানে লেখা আছে, আত্মহত্যা করার আগে নিজের সন্তান এবং পরিবারের কথা ভাবুন। পিতা-মাতার জন্য আপনার জীবন অমূল্য সম্পদ।

বনটির ভিডিও দেখতে-

ওডি/এনএম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড