• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সৃজনশীলতা বাড়াতে আশপাশ ভরিয়ে রাখুন নীলে!

  নাবিলা বুশরা

২০ আগস্ট ২০১৯, ১৪:৩৬
নীল
সৃজনী শক্তি বাড়াতে চারপাশ ভরিয়ে রাখতে পারেন নীল রঙে

চিন্তাকে নতুন নতুন রূপ দিতে সবাই ব্যস্ত। অন্যের চাইতে আলাদা হয়ে কিছু করাতেই সবার ভাবনা। তবে এই ভাবনাতেও কখনো কখনো ছেদ পড়ে। যখন দেখা যায় আর কোনো নতুন চিন্তা মাথায় আসছে না, কাজ এগোচ্ছে না, আশেপাশের পরিবেশ কেমন গুমোট হয়ে যাচ্ছে। আর নিজেকে এই কর্মব্যস্ত সময়ে টিকিয়ে রাখতে হলে নতুন ভাবনা না আসলে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। মন খারাপ থাকলেও,নতুন চিন্তা হুট করে মাথায় না আসলেও কিছুটা সময় আলাদা করে নিতে হয় সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। চলুন জেনে নিই এমনই কিছু পরামর্শ যা আপনার সৃজনশীল কাজগুলোকে সামনে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে অনেকখানি-

হাঁটাহাঁটি করুন

প্রতিদিন অফিস, ডেস্কে বসে কাজ। আবার নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে কাজ করছেন সেটিও ওই ডেস্কে বসেই। যা করছেন, যা ভাবছেন তার সবটুকুই টেবিলে রাখা কম্পিউটারের সামনে বসে। ভাবছেন অনেক আইডিয়া তো এখানে বসে বসেই বের করে ফেলা যায়, নতুন নতুন কাজের বিষয়ে জানা যায়। কথাটা আসলে কতটুকু ঠিক?

walking

সৃজনশীলতা বাড়াতে হাঁটাহাঁটিও জরুরি (ছবি: দ্য নিউ সোস্যাল ওয়ার্কার অনলাইন)

২০১৪ সালের এক গবেষণায় উঠে এসেছিল এই বিষয়েই একটি তথ্য। সেখানে বলা হয়েছিল, যারা বেশি বসে থাকেন তাদের চাইতে যারা হাঁটাহাঁটি করেন তাদের সৃজনশীলতা বেশি। পূর্বের গবেষণাও একই তথ্য জানান দেয়। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম জ্ঞান দক্ষতাকে বৃদ্ধি করার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে এই গবেষণায় আরও উঠে আসে যে, শুধুমাত্র হাঁটাহাঁটিও চিন্তাশক্তিকে প্রখরতা দান করতে সক্ষম। তাই শুধুমাত্র ডেস্কে বসে কাজ না করে একটু বাইরে যান, হাঁটুন। দেখবেন ভাবনায় আসছে নানা ধরনের নতুন নতুন আইডিয়া!

নিজেকে পুরস্কৃত করুন

ছোটবেলার কথা মনে আছে আপনাদের? ওই যে হোমওয়ার্ক নিয়মিত করে নিয়ে গেলে শিক্ষক হয়ত একটা চকলেট দিতেন, অথবা পরীক্ষায় প্রথম সারিতে থাকলে মিলত গল্পের বই অথবা পেন্সিল বক্স। সেই ছোট ছোট ব্যাপারগুলো কিন্তু পরবর্তীতে বেশ উৎসাহ দিত ছোট্ট মনে। প্রতিদিন পড়া শিখে আসা, ভালো রেজাল্টের প্রতি একটা আগ্রহ কাজ করত। এই ব্যাপারটিও ঠিক তেমন। যে কোনো একটি কাজ শেষে, সেটি ভালোভাবে সম্পন্ন হলে নিজেকে পুরস্কৃত করুন। হতে পারে সেটা কোনো খাবার, ঘড়ি, চশমা, বই অথবা পোশাক যে কোনো কিছু। আপনার যদি রঙ করতে ভালো লাগে তবে কাজ শেষে কিনে ফেলুন এক বক্স রঙ।

গিফট

কাজ শেষে পুরস্কৃত করুন নিজেকে (ছবি: প্যারেড)

নিজেকে এই পুরস্কার দেওয়ার অর্থ কী জানেন? নিজের কাজকে প্রশংসিত করা আর পরের কাজের জন্য উৎসাহ পাওয়া। এতে করে আপনার নতুন চিন্তার দুয়ার খুলে যায় আর উদ্দামতা বাড়ে। গবেষণাতেও এই তথ্যগুলো উঠে এসেছে বারবার।

নিত্য দিনের কাজের মাঝে অনেক সময় ক্লান্তি চলে আসে, পাশে কাউকে না পেলে মন খারাপ হয়। এমন সময়গুলোতে নিজেকে সময় দেওয়া, হুটহাট নিজেকেই সারপ্রাইজ করা কিন্তু দারুণ কাজে দেয়। চেষ্টা করে দেখতে পারেন কিন্তু!

তৈরি করুন মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব

বেশিরভাগ সময়েই অনেকে বলেন, সৃজনশীল কাজে ক্লান্তি চলে আসলে বা করতে না পারলে একটা বিরতি নেয়া জরুরি। এক গবেষণায় জানা যায়, নিজের এবং সমস্যার মাঝে একটা মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব তৈরি করতে পারলে সেটিও বেশ কাজে দেয়।

ধরুন, আপনি এই মুহূর্তে দুটি সমস্যার মাঝে আছেন। এখন এই দুই সমস্যা নিয়ে ভাবুন। ভেবে দেখুন কোন সমস্যটার অবস্থান দূর থেকে হচ্ছে আর কোনটি কাছে। যেটি দূরে সেটির ভাবনা কমিয়ে দিন। ভাববেন, 'সমস্যা আমার থেকে দূরে। তার মানে আমি এখনো ভালো আছি। চাইলে ভালো থাকতে পারি। এবং খুব দ্রুত আমি সমস্যাটির সমাধান করে ফেলব।'

গবেষকরা বলেন, এটা আসলে একটা মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব। সমস্যা থেকে নিজেকে দূরে রাখার একটা প্রক্রিয়া মাত্র। এতে যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এমন নয়। তবে আপনি ভাবার কিছুটা সময় পাবেন। নতুন ভাবনা মাথায় আসবে। তখন কাজ করা আরও সহজ হবে।

তাই জেনে রাখুন এরপর থেকে সমস্যা সৃষ্টির অবস্থান যত দূরে হবে আপনার সৃজনশীলতাও তত বৃদ্ধি পাবে!

নিজেকে ঘিরে রাখুন অনুপ্রেরণায়

সাইকোলজিস্ট মিহালি বলেন, আপনার আশেপাশের পরিবেশ যদি অনুপ্রেরণা দিয়ে ঘিরে থাকে তবে আপনি অবশ্যই সৃজনশীল হবেন। নিজেকে উৎসাহ দিতে, উদ্দীপনা তৈরি করতে অনুপ্রেরণামূলক পরিবেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদিও সবাই সেটা পায় না। তবে যারা পায়, তাদের কাজ, তাদের ভাবনা অন্য সবার চাইতে অবশ্যই আলাদা হয়।

ঘর

ঘর বা অফিসের যে কোনো জায়গাই হতে পারে আপনার জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক (ছবি: অপো ইনোভা)

অনুপ্রেরণামূলক পরিবেশ মানেই যে মানুষ থাকতে হবে এমন নয়। সেটা হতে পারে কোনো নিরিবিলি জায়গা। আপনি যে ঘরে থাকেন তার একটা ছোট্ট কোণ, অথবা অফিসের কোনো একটা কাজের জায়গা যেখানে আপনি চুপচাপ কিছুটা সময় একাই কাটিয়ে দিতে পারবেন। নিরিবিলি এই সময়ে নতুন নতুন নানা ভাবনার জন্ম হয়। এই সময়ে আপনি আপনার কাজ নিয়ে, অভিজ্ঞতা নিয়ে, পরিকল্পনা নিয়ে ভাবুন।

দিবাস্বপ্ন বাড়ায় সৃজনী শক্তি

বসে বসে অলস সময় পার করছেন, বলতে গেলে কোনো কাজই নেই এমন মানুষেরা কিন্তু সৃজনশীল হোন! এক গবেষণায় এই মজার তথ্যটি উঠে এসেছে। এর কারণ হিসেবে গবেষকরা জানান, অলসভাবে বসে থাকলে নতুন নতুন ভাবনা মাথায় আসে। কারণ সে সময় ব্রেন সিগনাল দেয় যে বর্তমান সময়ে আর অবস্থানে কিছু করার নেই। নতুন ভাবনা ভাবতে হবে। ঠিক তখনই কিছু না কিছু করার উদ্দামতা তৈরি হয়ে যায়।

ভাবতে অবাক লাগে না, দিবাস্বপ্ন কীভাবে সৃজনশীলতা বাড়িয়ে দিচ্ছে? তবে হ্যাঁ, গবেষকদল এটাও বলেন, এই দিবাস্বপ্ন যেন দীর্ঘ না হয়ে ওঠে। এমনটি হলে কিন্তু কাজেও ব্যাঘাত ঘটবে, কাজও আর এগোবে না!

ভাবনা হোক না-বোধক

গবেষকদলের সকল প্রতিবেদনে সব সময় উঠে এসেছে স্বাভাবিক (পজিটিভ) ধারার চিন্তাগুলো থেকেই বরাবর সৃজনশীলতা আসে। কিন্তু ২০০৭ সালের এক গবেষণায় জানানো হয়েছিল ঠিক এর বিপরীত তথ্য। অর্থাৎ না-বোধক ভাবনাও নতুন চিন্তার উদয় ঘটাতে সক্ষম। এর কারণ হচ্ছে, মন খারাপ করা কোনো সময় সামনে আসলে তখন সেই অবস্থা থেকে বের হয়ে যাবার একটা চেষ্টা থাকে। পরিশ্রম করতে হয়। আর ঠিক তখনই নতুন চিন্তা আসে কীভাবে সকল সমস্যা দূর করা যায়। পরিস্থিতি সামলে নেয়ার জন্য এমন অবস্থাও বেশ জরুরি।

এর মানে কিন্তু এই নয় যে সব সময় ভালো কিছু পাওয়ার জন্য মন খারাপ করে বসে থাকবেন!

নীলে ভরে থাকুক চারপাশ

রঙ নিয়ে কাজ করা সাইক্রিয়াটিস্টদের মতে, বিভিন্ন রঙের উপর নির্ভর করে আপনার মেজাজ, আবেগ আর ব্যবহার। ২০০৯ সালে এ বিষয়ের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নীল রঙ সৃজনশীলতাকে বাড়িয়ে দিতে সক্ষম। কিন্তু কেন?

গবেষকদের মতে, নীল রঙ মানুষকে এক ধরনের চিন্তা থেকে নতুনভাবে ভাবতে শেখায়। নীল মূলত প্রকৃতি, শান্তি আর প্রশান্তির সাথে জড়িয়ে থাকে। এই রঙে মানুষ নিজেকে নিরাপদ ভাবে আর আগের চাইতেও বেশি সৃজনশীল হয়।

তাহলে পরেরবার থেকে যখনই কোনো নতুন ভাবনা ভাবতে যাবেন নীল রংকে কিন্তু অবশ্যই প্রাধান্য দেবেন!

তথ্যসূত্র: ভেরি ওয়েল মাইন্ড

ওডি/এএন

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড