সৈয়দ মিজান
গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বৃক্ষমেলার গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই চোখ ছানাবড়া। যে দিকে চোখ যায় কেবল সবুজ আর সবুজ। ছোট ছোট গাছে ভরে আছে জায়গাটা। মুহূর্তেই মন ভালো হয়ে যেতে বাধ্য। মেলার ভেতরে ঢুকলে হুট করে বোঝার উপায় নেই ঠিক কত বড় আয়োজনে সেজেছে এবারের বৃক্ষমেলা। একটু ভেতরের দিকে পা বাড়াতেই বাতাসে পাওয়া গেল মিষ্টি ফুলের গন্ধ। মেলায় বিক্রি করতে আনা নানান ফলের গাছেও ঝুলছে পাকা পাকা অনেক ফল। আম, পেয়ারা, আমলকী, করমচা, লেবু, কমলা, জাম্বুরা কোন ফলই বাদ নেই।
এত ফুল আর ফলের সমারোহ নিয়ে মাসব্যাপী চলা বৃক্ষমেলা শেষ সপ্তাহেও বেশ জমজমাট হয়ে ওঠেছে। ২০ জুন থেকে শুরু হওয়া এই মেলা জুলাই মাসের ২০ তারিখ নাগাদ চলবে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বাণিজ্যমেলার মাঠেই প্রতিবছরের মতো এবারও বসেছে প্রকৃতি সাজানোর এই মেলা। এবারের মেলার প্রতিপাদ্য হলো, 'শিক্ষায় বন প্রতিবেশ, আধুনিক বাংলাদেশ'।
নানান জাতের ক্যাকটাস পাওয়া যাচ্ছে মেলায়। (ছবি : দৈনিক অধিকার)
মেলায় প্রবেশ করেই গাছের সমারোহ দেখে বেশ অবাকই হতে হয়। হাজারখানেক প্রজাতির দেশি-বিদেশি গাছ পাওয়া যাচ্ছে এবারের মেলায়। ফলদ, বনজ এবং ভেষজ গাছের ভিড়ে বাগান সাজানোর গাছও পরিমাণে কম নয়। রাজধানীতে গাছ রোপণের খুব বেশি জায়গা না থাকায় বাসা-বাড়ির ছাদে টবে বাগান করে থাকেন অনেকে। বৃক্ষমেলায় এই ধরনের ক্রেতাই সংখ্যায় বেশি। নার্সারি মালিকরাও পসরা সাজিয়েছেন সেই অনুযায়ীই।
গাছের যত্ন নেওয়ার নানা যন্ত্রপাতিও বিক্রি হচ্ছে প্রচুর। (ছবি : দৈনিক অধিকার)
কথা হলো রকিবুল হাসান নামের একজনের সাথে। পেশায় ব্যবসায়ী এই মানুষটি গাছ কিনতে এসেছেন মোহাম্মদপুর থেকে। তিনি জানালেন, 'প্রতিবছরই বৃক্ষমেলায় আসার চেষ্টা করি। এখানে আসলে ভালো লাগে। আমার ছাদ বাগানটা খুব বড় না। কিন্তু মনের মতো কোনো গাছ পেলে কিনে ফেলার চেষ্টা করি।' কথা বলতে তিনি দেখালেন সদ্য কেনা 'বকফুল' এর একটি চারা। জানতে চাইলাম এই গাছটির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে। বললেন,' এটি অনেকদিন থেকেই খুঁজছিলাম। এই গাছের ফুল দিয়ে বড়া বানিয়ে খাওয়া যায়। অনেক সুস্বাদু খেতে।'
শিশুদের নিয়ে মেলায় ঘুরতে আসছেন অনেকে। (ছবি : দৈনিক অধিকার)
কলেজ পড়ুয়া দুই শিক্ষার্থীকে দেখা গেল বিভিন্ন ধরনের ক্যাকটাস দরদাম করতে। তারা জানালো, বন্ধুর জন্মদিনে উপহার দিতেই এখানে ক্যাকটাস কিনতে এসেছে। বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবার পরিজনসহ অনেকেই এসেছেন মেলায়। কেউ এসেছেন নিছকই ঘুরতে। কথা হলো সন্তানশ ঘুরতে আসা এক দম্পতির সাথে। তারা জানালেন, 'আমাদের সন্তানকে গাছের সাথে পরিচয় করাতেই ওকে এখানে নিয়ে এসেছি। শহরে বড় হচ্ছে বলে অনেক গাছই ও সহজে দেখতে পারবে না। এই মেলায় ওকে গাছ চেনানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত করতে চাই না।'
অনেক দুষ্প্রাপ্য গাছেরও দেখা মিলবে মেলায়। (ছবি : দৈনিক অধিকার)
হরেক রকম গাছ রয়েছে মেলায়। ক্যাকটাস থেকে শুরু করে রাবার গাছের চারা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে এই মেলায়। গাছের দাম নির্ধারিত হয় গাছের গুণাগুণ এবং স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে। তবে দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে আছে বলেই জানালেন স্কয়ার নার্সারির দায়িত্বে থাকা মাহবুব সানি। এবারের মেলায় বেচাবিক্রিও মোটামুটি ভালো বলে জানান তিনি। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবারের মেলায় মানুষও আসছেন বেশি।
এমন সৌন্দর্য দেখতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন বৃক্ষমেলা। (ছবি : দৈনিক অধিকার)
মেলা ঘুরে দেখা গেল অনেক গাছেই ধরে আছে পাকা পাকা ফল। টবে থাকা এসব গাছ ক্রেতারা নিয়ে যাচ্ছেন যত্ন করে বাসার ছাদে রাখবেন বলে। মেলায় শুধু গাছের স্টলই যে বসেছে তা কিন্তু নয়। গাছের যত্ন নেওয়ার নানান জিনিসপত্রের পসরাও সাজিয়েছেন কেউ কেউ। গাছের পাশাপাশি এইসব দরকারি জিনিসের বিক্রিও বেশ ভালো।
মেলায় অর্কিড, ক্যাকটাসের পাশাপাশি দেশি বিদেশি অনেক দুষ্প্রাপ্য গাছেরও দেখা মিলবে। ফুরফুরে একটা বিকাল কাটাতে একবার ঢুঁ মেরে আসতে পারেন প্রকৃতিবান্ধব এই মেলা থেকে।
ওডি/এসএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড