• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সমৃদ্ধির স্বর্ণশিখর সন্দ্বীপ

  মনিরুল কবির বাধন

০৮ জুলাই ২০১৯, ১২:৫৮
সন্দ্বীপ
সন্দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য; (ছবি- লেখক)

সন্দ্বীপ নামটি বর্তমান বাংলায় প্রায় পরিচিতই বলা যায়। সমসাময়িক কর্ম-কীর্তি বাদ দিলেও সেই মানিক বন্দ্যোপাধ্যয়ের ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ হতে উঠে আসা শব্দটি ঐতিহাসিক ভাবে পুরোনো। তবে বর্তমানে তা অধিক আলোচিত।

চট্টগ্রামের নদী শাসিত দ্বীপ সন্দ্বীপ। বঙ্গোপসাগরে মোহনায় যুদ্ধ করে শতাব্দীর পর শতাব্দী তাই দাঁড়িয়ে নিজের গৌরব উজ্জ্বল উপস্থিতি জানান দিয়ে যাচ্ছে এই দ্বীপ। ইতিহাস, ঐতিহ্যে ভরপুর ক্ষুদ্র দ্বীপাঞ্চলটি প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্যের অপার লীলাভুমি।

উর্বর দ্বীপ সন্দ্বীপ, জন্ম দিয়েছে অসংখ্য গর্বের সন্তান। মেধা আর কর্মে যারা কেবল সন্দ্বীপের নামই উজ্জ্বল করেনি, বিশ্ব আঙ্গিনায় লিখেছেন বাংলাদেশের নামও। কমরেড মুজাফফর আহাম্মদ, কবি আবদুল হাকিম, স্বাধীনতার পদকধারী কবি বেলাল মোহাম্মদ, সর্বপ্রথমে স্বাধীনতার ঘোষনার পাঠক ও স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক আবুল কাসেম সন্দ্বীপ, ডক্টর সুলায়মানুল মেহেদী, ডাক্তার সামসুল আলম এফ.সি.পি.এইচ, প্রকৌশলী আবদুল মালেক, অধ্যাপক রাজকুমার চক্রবর্ত্তী, মোহাম্মদ ওয়ালীউল্লাহ (ওয়ালীগান্ধী), আবুল খায়ের খাঁন বি.এ, বি.টি, আলি আকবর বি.এ, বি.টি সহ আরও অনেক নন্দিত সন্তান এ দ্বীপে জন্ম গ্রহন করেছেন। জনাব এ.বি.এম. সিদ্দিক চৌধুরী তাঁদেরই এক জন। তিনি লেখক, গবেষক, ইতিহাসবেত্তা, সর্বোপরি সন্দ্বীপপ্রেমিক একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে পরিচিত। স্বমহিমায় ইনারা প্রত্যেকে ছিলেন উজ্জ্বল ও প্রতিভায় দীপ্তিময়।

সন্দ্বীপ

দিগন্তজোড়া মাঠ; (ছবি- ইন্টারনেট)

রাজনৈতিক পটভূমিকায় সন্দ্বীপ গুরুত্বপূর্ণ একটা চরিত্র। ১৭৬৭ সালে আবু তোরাবের নেতৃত্বে বাংলার প্রথম কৃষক-বিদ্রোহ, ১৯৩০ সালে কংগ্রেস সভাপতি কালী কেশব ঘোষের নেতৃত্বে আইন অমান্য-আন্দোলন সংঘটিত হয় সন্দ্বীপের মাটিতে। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এখান থেকে বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফার প্রচারণা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেন।

১৯৭১ সালে এ উপজেলা ১নং সেক্টরের অধীন ছিল। ১০মে পাকবাহিনী সন্দ্বীপ শহরে আইনজীবী জাহেদুর রহমানসহ অনেক নিরীহ বাঙালিকে গুলি করে হত্যা করে এবং অনেক ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয় ও লুটপাট করে। ৭ ডিসেম্বর সন্দ্বীপ শত্রুমুক্ত হয়।

স্বাধীনতার পর থেকে সন্দ্বীপ বাংলাদের অর্থনীতিতে অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছে। দ্বীপের অসংখ্য মানুষ বহির্বিশ্বে শ্রম বিক্রি করে যোগান দিচ্ছে দেশের রেমিট্যান্স এর সিংহভাগ। পাশাপাশি চাপ কমাচ্ছেন দেশের বর্ধিত বেকার সমস্যার।

সন্দ্বীপ

তাজা মাছের স্বাদ মিলবে সহজেই; (ছবি- লেখক)

ক্রমবর্ধমান ভাঙ্গনের ফলে সন্দ্বীপ হারিয়েছে তার অনেক মূল্যবান অলংকার। ফুলবিবি সাহেবেনি মসজিদ, পুরানো টাউন, আবহাওয়া অফিস, টিএন্ডটি ভবন, প্রধান ডাকঘর সহ অসংখ্য ঐতিহাসিক সম্পদ চলে গেছে নদী গর্ভে।

নদীর এ করালগ্রাসের পরও এখন বেশ সমৃদ্ধি পসরা সাজাতে পারে সন্দ্বীপ। মরিয়ম বিবি মসজিদ (তাজমহলের আদলে নির্মিত), ম্যানগ্রোভের দৃষ্টিনন্দন বেষ্টনি, বিশাল সবুজ চর, ঐতিহাসিক শুকনা দিঘী, গুপ্তছড়া ঘাটের বিশাল জেটি রাস্তা সহ সবুজের অসংখ্য পটে আঁকা দৃশ্য।

দৃষ্টি জুড়ে সবুজ আর সবুজ, অসংখ্য পাখির কলতান, মিষ্টি বাতাস, সুবিশাল নীল আকাশ আর মাটির টান আপনাকে আবেগে ফেলে বাস্তবতার কষাঘাত থেকে মুক্তি দিবে নিমেষেই। ভালো লাগার এক অনন্য দৃশ্যপট তুলে ধরবে আপনার দৃষ্টিজুড়ে। ইচ্ছে হবে খোলা আকাশের নিচে প্রকৃতির সাথে মিতালি বেঁধে সবুজ স্নানে স্বপ্ন আঁকতে।

সন্দ্বীপ

সন্দ্বীপের প্রাকৃতিক দৃশ্য; (ছবি- লেখক)

বিশেষ কিছু তথ্য প্রবাহ-

বর্তমানে পর্যটক পছন্দের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে এই দ্বীপটি। দল বেঁধে ক্যাম্পেইন করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন পর্যটকরা। আপনিও স্বদলবলে ঘুরে আসতে পারেন দ্বীপের বুকে।

যাতায়াত-

ঢাকা থেকে যেকোনো চট্টগ্রামগামী বাসে উঠে চলে আসবেন কুমিরা (ভাড়া-৪৮০)। তারপর অটো ধরে কুমিরা ঘাটে এসে স্পিডবোট, স্টিমার বা বোটে করে পাড়ি দিবেন সন্দ্বীপ চ্যানেল। ভাড়া বোট বেধে তারতম্য রয়েছে। ১০০-৩০০ পর্যন্ত পড়বে।

থাকা ও খাওয়া-

সন্দ্বীপ শহরে বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল রয়েছে। তাছাড়া সন্দ্বীপের খাবারের হোটেল গুলোর মান বেশ ভালো ও সাশ্রয়ী। ও হ্যাঁ, সন্দ্বীপ গেলে বিনয় শাহের মিষ্টি খেতে কিন্তু ভুলেও ভুলবেন না।

সন্দ্বীপ

সূর্য ডোবার বেলা; (ছবি- লেখক)

নদী পথের যাতায়াত যেহেতু তাই শীতের মৌসুমে যাতায়াত বেশি ভালো। সাথে শীত জু্ড়ে পিঠা-পুলির ভান্ডারে মধু তো আপনি পান করতে পারবেনই।

যদি কোনো সন্দ্বীপ্পার সাথে ভাব হয়ে যায় তবে আপনি শুধু বাবু হয়েই যাবেন, বাকিরা ওরাই করবে আপনার জন্য। ঐতিহাসিক ভাবে সন্দ্বীপ্পারা অথিতিপরায়ণ।

প্রকৃতি মানুষের সবচেয়ে উপকারি ঔষধ। তাই সময় পেলে ঘুরে আসুন প্রকৃতির অপার বিস্ময় সন্দ্বীপ। ভালোবেসে উজাড় করে দিবে ইতিহাসের ক্রমধারা দ্বীপটি।

ওডি/এনএম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড