নিশীতা মিতু
বেলাশেষে সবার ভাবনা যেন কোথাও গিয়ে মিলে যায়, ভাবনাগুলো মূলত একইরকম হয়। আর যাদের ভাবনা হয় ভিন্ন তাদের বলা হয় “আউট অফ বক্স”। অর্থাৎ তাদের অবস্থান, ভাবনা আর কল্পনা থাকে বাক্সের বাইরে। এই ধরুন, যদি প্রশ্ন করা হয়, টি ব্যাগ দিয়ে কী করা যায়? আপনি সোজাসাপ্টা জবাব থাকবে চা বানানো যায়। এরপর প্যাকেট ফেলে দেওয়া হয়।
কেউ কেউ একটু ভিন্ন উত্তর দেবেন টি ব্যাগ ব্যবহারের পর সেটা রূপচর্চায় কিংবা সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু সাদিতকে প্রশ্ন করলে তিনি মুখের ওপর জবাব দেবেন ছবি আঁকা যায়। কী একটু অবাক হচ্ছেন? টি ব্যাগের মতো ফেলনা জিনিসে আবার ছবি? অত ছোট জায়গায়? আপনার অবাক হওয়ার পাল্লা আরও খানিকটা ভারি হবে টি ব্যাগের গায়ে আঁকা সাদিতের ছবিগুলো দেখলে।
বলছিলাম রাজশাহীর ছেলে মো. সাদিতউজজামানের কথা। পেশায় তরুণ এই ব্যবসায়ীর পড়াশোনাও ব্যবসা নিয়েই। কিন্তু বাক্স থেকে খানিকটা বাইরে থাকতেই হয়তো ভালোবাসেন তিনি। আর তাইতো টি ব্যাগের ছোট দেহকেই বানিয়ে ফেলেন ক্যানভাস। আঁকেন মনের মতো ছবি। রং আর তুলির ছোঁয়ায় যে ছবিগুলো হয়ে ওঠে জীবন্ত।
সাদিতকে অনেকেই ডাকেন “টি ব্যাগ ভাই” বলে আর তার কারণ তার নিজ হাতে গড়া “টি ব্যাগ স্টোরিস”। ২০১৫ সালে শুরুটা হলেও ২০১৬ থেকেই সবার কাছে পরিচিতি পেতে থাকে সাদিতের এই ভিন্নধর্মী কাজ। নিজের অনুভূতি, চাওয়া-পাওয়া, কষ্ট, আনন্দ সবকিছুই প্রকাশ করেন টি ব্যাগে ছবি এঁকে। কখনো চলতি ইস্যু, কখনো বিশিষ্ট ব্যক্তি আবার কখনো প্রকৃতি— একের পর এক গল্প জমতে থাকে টি ব্যাগের গায়ে।
বৃষ্টি ভালোবাসেন সাদিত। আকাশ মেঘলা হলেই মনটা খিচুড়ির জন্য আঁকুপাঁকু করে ওঠে। কখনো ইচ্ছে করে কফি মগে চুমুক তুলে ময়ূরের নাচ দেখতে। আবার কখনো ইচ্ছে হয় বৃষ্টি ভেজা কৃষ্ণচূড়ায় মন রাঙাতে। ইচ্ছে সবসময় পূরণ না হলেও ইচ্ছেটাকে তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলতে তো আর বাঁধা নেই। তাই সাদিত বসে যান রং তুলি নিয়ে। এঁকে ফেলেন নিজের ইচ্ছা, পছন্দ।
টি ব্যাগের গায়ে সাদিতের আঁকা ছবিগুলোর মাঝে বেশ কিছু ছবি রয়েছে বৃষ্টি কিংবা বর্ষা নিয়ে। এই বর্ষার দিনে নাহয় সেই ছবিগুলোর সৌন্দর্যই উপভোগ করা যাক-
মেঘলা আকাশ আর তার সঙ্গে একগুচ্ছ ভেজা কৃষ্ণচূড়া। মন ভালো করতে আর কী চাই? ভাবুন তো এমন দৃশ্য দেখছেন আর হেডফোন কানে শুনছেন- ‘তবু ঝড়ের আলো আকাশে,বেজে ওঠে ওই নীল মেঘ মাসে, কৃষ্ণচূড়া...’
সাদিত এই ছবির ক্যাপশন দিয়েছেন- ‘আমি বৃষ্টি দেখেছি, বৃষ্টির ছবি এঁকেছি’। এ যেন মেঘ আর বৃষ্টির এক প্রেমকাহিনী।
বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল। প্রিয়জনকে বর্ষার প্রথমদিনে কদম দিয়েছেন কখন?
বৃষ্টির সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক বহু পুরোনো। প্রিয় মানুষকে সঙ্গী করে বৃষ্টিতে ভিজতে তাই হয়তো প্রেমিক বলে ওঠেন- ‘শুধু তোমার আমার হৃদয়ে, ভিজে মাটির সোঁদা গন্ধ’।
বর্ষাকে ভালোবাসে ময়ূর। মেঘের ডাক শুনেই তাই বর্ষারানি পেখম মেলে নেচে ওঠেন।
বৃষ্টি ভালোবাসতেন হুমায়ূন আহমেদ। বইয়ের নামেও রেখেছেন বৃষ্টি আর শ্রাবণকে। সেই বইগুলোর প্রচ্ছদই টি ব্যাগের গায়ে এঁকেছেন সাদিত।
সেই জলে যেন পদ্মপুকুর, মেঘলা আকাশে মধ্য দুপুর।
বাইরে বৃষ্টি হবে আর খাবার পাতে খিচুড়ি থাকবে না, তা আবার হয় নাকি? সঙ্গে ইলিশের টুকরো থাকলে তো কথাই নেই।
এই দৃশ্য সম্পর্কে আলাদা করে কিছু বলার প্রয়োজন নেই। নিশ্চয়ই এতক্ষণে আপনি গেয়ে উঠছেন- ‘বরষার প্রথম দিনে, ঘন কালো মেঘ দেখে’।
সত্যিই অসাধারণ একজন শিল্পী সাদিত। কোন ছবিটি সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে আপনার?
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড