সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
যিশু খ্রিস্ট পৃথিবীর কোথায়, কখন ভ্রমণ করেছিলেন তা নিয়ে গসপেলে নানা উল্লেখ আছে। ইসরায়েল, ফিলিস্তিন, মিশর- এমন নানা স্থানের কথা বলা হয়েছে সেখানে। কিন্তু এই কথাগুলো কতটা সত্য? চলুন, এই সত্যতা কিছুটা হলেও জেনে নেওয়া যাক প্রত্নতাত্ত্বিকদের গবেষণা থেকে-
জেরিকো-
গসপেলে বলা আছে যে, যিশু জেরিকোতে গিয়েছিলেন এবং জাদুবলে একজন অন্ধ মানুষের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। এ সময় পুরো শহরের মানুষ যিশু খ্রিস্টকে অনুসরণ করেন। কর সংগ্রাহক জাখাইউসের বাড়িতে এ সময় অবস্থান করেন যিশু।
সী অব গ্যালিলী-
গসপেলের অনেক গল্পই গড়ে উঠে সী অব গ্যালিলী বা ইয়াম (জাম) লেককে ঘিরে। এখানেই যিশু পানির ওপর হেঁটেছিলেন, এমনটা মনে করা হয়। যদিও এর সত্যতা সম্পর্কে জানা যায় না। তবে এই সমুদ্রে ৪,০০০ বছরেরও বেশি পুরনো, ৬০ হাজার টন ওজনের পাথর খুঁজে পাওয়া যায়।
এখানে সমুদ্রের একেবারে নিচে অবস্থিত কোণাকৃতির কিছু পাথরকে সমাধিস্থলের চিহ্ন বলেও মনে করা হয়। এছাড়া, ১৯৮৬ সালে ২,০০০ বছর পুরনো মাছ ধরার নৌকাও এখানে মাটির নিচে খুঁজে পাওয়া যায়। এই নৌকার মাধ্যমে যিশুর সময়ে নৌকা কেমন হতো সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
পুল অব বেথেসডা-
গসপেল অব জনে বলা আছে যে, জেরুজালেমে থাকাকালীন সময়ে যিশু বেথেসডাতে ভ্রমণ করেন। এই স্থানটির মানুষের রোগ সারিয়ে দেওয়ার অসাধারণ ক্ষমতা আছে বলে মনে করা হয়। এখানে এসে একজন পক্ষপাতগ্রস্ত মানুষকে উঠে দাঁড়াতে বলেন যিশু। আর তার কথা শুনে এতদিন ধরে চলৎশক্তিহীন মানুষটি উঠে দাঁড়ান এবং স্বাভাবিক মানুষের মতো চলাফেরা করা শুরু করেন।
নাজারেথ-
গসপেল অনুসারে, যিশুর জন্ম বেথেলহামে হলেও তিনি নিজের প্রথম জীবনের বেশিরভাগ সময়ই কাটিয়েছেন উত্তর ইসরায়েলের নাজারেথে। সম্প্রতি পাওয়া এক গবেষণানুসারে, নাজারেথে ইহুদীবসতি ছিল। আর এই বসতির বাসিন্দারা রোমান সংস্কৃতিকে গ্রহণ করতে চাননি। বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের পক্ষ থেকে নাজারেথে অবস্থিত যিশুর ঘরকে নিরাপত্তা দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে।
ছবি- ইন্টারনেট
বেথেলহাম-
গসপেলে বলা হয়েছে যে, প্রথম খ্রিস্টাব্দে বেথেলহামের শহরে যিশু জন্ম নেন। বেথেলহামে করা গবেষণার মাধ্যমে পাওয়া যায় যে, এখানে হাজার বছর ধরে মানুষ বাস করেছে। ২০১৬ সালে পাওয়া এক তথ্যানুসারে, ৪,০০০ বছর পুরনো সমাধিও এখানে খুঁজে পাওয়া যায়। যিশুখ্রিস্টের জন্মস্থান হওয়ায় এটি খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান।
৬ষ্ঠ শতাব্দীতে এখানে চার্চ অব নেটিভিটি তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে এটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
ক্যাপেরনাম-
সী অব গ্যালিলীর পাশেই অবস্থির ক্যাপারনাম শহরে যিশু নিজের অনেকটা সময় কাটিয়েছিলেন বলে মনে করা হয়। এখানে তিনি বেশ কিছু অসাধারণ কাজ করেছিলেন। এক রোমান প্যারালাইজড সামরিক শাসকের শরীর ঠিক করে দিয়েছিলেন তিনি।
এছাড়া তিনি ক্যাপারনামের সিনাগগে শিক্ষাপ্রদানের কাজেও কিছুদিন নিয়োজিত ছিলেন বলে বর্ণিত আছে। প্রত্নতাত্ত্বিকেরা ২,০০০ বছর আগে, যিশুর সময়ের কিছু ধ্বংসাবশেষ ক্যাপারনামে খুঁজে পেয়েছেন।
টেম্পল মাউন্ট-
যিশুর সময়ে মাউন্ট টেম্পল ছিল ইহুদীদের কাছে সবচাইতে পবিত্র স্থান। গসপেল অব ম্যাথিউ অনুসারে, টেম্পল মাউন্টে ব্যবসায়ী এবং টাকা বিনিময়কারীদের উপস্থিতির কথা জানতে পেরে যিশু অসম্ভব রেগে যান। তিনি সেখানে গিয়ে ব্যবসায়ীদের টেবিল সরিয়ে নেন এবং পবিত্র এই স্থানটিকে ডাকাতি করার জায়গায় বদলে ফেলার জন্য তাদের নিন্দা করেন।
আনুমানিক ৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে করা এক ইহুদি বিপ্লবের সময় রোমানরা এই টেম্পল ভেঙে ফেলে। এটি সেকেন্ড টেম্পল নামেও পরিচিত ছিল। এই টেম্পলের পশ্চিমের একটি দেয়াল এখনো টিকে আছে।
যিশুখ্রিস্টকে নিয়ে এই তথ্যগুলো সত্যি কি না তা নিয়ে সন্দেহ থাকতেই পারে। তবে একটু ভেবে দেখলে বুঝতে পারবেন যে, তথ্যগুলো হয়তো ইতিহাসের কয়েকটি পাতা হিসেবে একেবারে মিথ্যেও নয়!
সূত্র- লাইভসায়েন্স
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড