ফিচার ডেস্ক
‘ঐ দেখা যায় তালগাছ, ঐ আমাদের গাঁ’, বেশিরভাগ বাংলাদেশির শৈশবে শেখা প্রথম ছড়ার পঙতির একটি। একটা সময় ছিল বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামেই তাল গাছের ছড়াছড়ি ছিল। এসব তালগাছে বাসা বানাতো বাবুই পাখি। তালগাছের মাথায় বাবুই পাখির বাসা ঝুলতে দেখাটা ছিল গ্রামের অতিপরিচিত দৃশ্যগুলোর একটি। দিন বদলের সাথে সাথে গ্রামেও শহরের ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে গত দুই দশক ধরেই। সেই সাথে কমে যাচ্ছে গাছ, পাখির আবাসনও। তবে অবাক করার মতো ব্যাপার হলো সবচেয়ে বেশি কমেছে তালগাছের পরিমাণ। সেই সাথে হারিয়েই গেছে বলা যায় বাবুই পাখি এবং তার অপূর্ব সুন্দর বাসা।
বাবুই পাখি বাসা তৈরি করে অন্যান্য পাখির চেয়ে একদম ভিন্ন উপায়ে। নান্দনিক কারুকাজের মাধ্যমে বাসা বানানোর জন্য বাবুই পাখিকে কারিগর পাখি নামেও ডেকে থাকেন অনেকে। বাসা বানানোর জন্য বাবুই পাখি তালগাছ ছাড়াও নারকেল এবং সুপারি গাছকেও বেছে নেয় মাঝেমাঝে। তবে পছন্দের তালিকায় তালগাছই প্রথম। তালগাছে নিরাপত্তা বেশি। এই গাছ অন্যসব গাছ থেকে মানুষের নাগালের বাইরে থাকে।
গত দুই দশক ধরেই বাবুই পাখি বাসস্থান সংকটে ভুগছে। এটির মাত্রা এতটাই বেশি যে চিরায়ত অভ্যেস পাল্টে ফেলতে বাধ্য হচ্ছে তারা। বাব্যি পাখি এখন আর উঁচু কোন গাছে বাসা না বেঁধে কলা গাছ এবং বিভিন্ন ঝোপ জাতীয় গাছে বাসা বানাচ্ছে এখন। প্রজননের মৌসুমে ঘোর বিপদ জেনেও বাবুই পাখি এইরকঅম স্বভাব বিরুদ্ধ আচরণ করছে বলে ধারণা করছেন পাখি বিশারদরা। কলাগাছের মতো নিচু গাছে বাসা বানানোয় তাদের ডিম এবং বাসা দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে কীইবা করার আছে। মানুষ তার হিংস্র নখর থাবা থেকে বাবুই পাখিকেও রেহাই দেয় নি। ছোট্ট বাবুইয়ের জীবনের মায়া এখানে যেন কিছুই না। তবু বেঁচে থাকার তাগিদে জীবনকে ঠোঁটের ডগায় করেই কলাগাছের মতো চরম অবিরাপদ স্থানে বাসা বেঁধেছে বাইবুই পাখি। ঢাকার কেরানীগঞ্জে এমন কিছু বাসার সন্ধান পেয়েছেন বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সদস্য এম এ তাহের।
তার কাছ থেকে জানা যায়, মানুষের অতি লোভের ফল হচ্ছে এটি। তালগাছ কেটে লাভের আশায় অন্য গাছ লাগাচ্ছি আমরা। আবার কেউ কেউ কুসংস্কার থেকেও তালগাছ কেটে ফেলছেন। তাদের বিশ্বাস এ গাছে ভূত বাস করে। বাবুই পাখি আসলে দেখিয়ে দিয়েছে মানুষ কতটা নিকৃষ্ট রকমের নিষ্ঠুর। বাবুই পাখির এই অবস্থা দেখে আমার চোখের পানি চলে এসেছিল।
তিনি আরও জানান, কলাগাছে এবং কাশবনে বাবুই পাখিকে বাসা বানাতে আর কেউ দেখেছে বলে আমার জানা নেই। তবে ধীরে ধীরে এই পাখিটি যে মহাবিপন্নের দিকে চলে যাচ্ছে এতে কোন সন্দেহ নেই। প্রকৃতি না বাঁচলে মানুষও যে বাচবে না এটা কেউ ভাবে না।
বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম হলো মে থেকে আগস্ট মাস। এই পাখি মাত্র ২ থেকে ৪টি ডিম দেয়। ছানা বের হতে সময় লাগে ১৪ থেকে ১৫ দিন। আর পরবর্তি ১৫-১৬ দিনেই নিজে চলার মতো সক্ষম হয়ে ওঠে ছানাটি।
ওডি/এসএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড