• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

অযত্ন আর অবহেলায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি

  মো. রিয়াদ হোসেন

১৭ জুন ২০১৯, ১৪:১২
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি
অবহেলায় ধ্বংসের পথে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি (ছবি : দৈনিক অধিকার)

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মানবতাবিরোধী অপরাধগুলো বিশ্ববিবেককে জাগ্রত করেছিল, সে কারণে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বজনমত গঠন হয়েছিল। বাংলাদেশের প্রায় সকল গ্রামেই কমবেশি মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এ রকম একটি স্থান হলো নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলার সোনাইমুড়ি রেলস্টেশন সংলগ্ন রেলওয়ে কোয়াটার। ১৯৭১ সালে এটি পাকিস্থানী সেনাবহিনীর নির্যাতন কেন্দ্র বা টর্চার সেলে পরিণত হয়েছিল।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৭১’ এর ২২ এপ্রিলের পর থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত নিয়মিতভাবে এখানে হত্যা, ধর্ষণ, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হতো। এ নির্যাতন কেন্দ্রটিতে পাশাপাশি দুটো রুম ছিল। একটিতে সাধারণ মানুষদের ধরে এনে রাখা হতো, অন্যটিতে নির্যাতন করা হতো। অনেককে আবার বাঁশের লাঠি দিয়ে সারাদিন রাত গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হতো, আবার কাউকে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সূর্যের দিকে তাকিয়ে রাখানো হতো। তাদের নির্যাতনের ধরন ছিল বহুমাত্রিক।

রহিম মিয়া নামে একজন স্থানীয় বাসিন্দাকে তার পিতাসহ এ নির্যাতন কেন্দ্রে ধরে আনা হয়। রহিম মিয়াকে বাঁশের চাটাইয়ে বেঁধে রেখে তার পিতাকে নির্যাতন সেলে নিয়ে মারধর করা হয়। রহিম মিয়া প্রাণ ভয়ে বাঁশের চাটাই ভেঙ্গে পালিয়ে যায়।

মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে এখানে বিভিন্ন এলাকা থেকে নারীদের ধরে এনে নির্যাতন করা হয়। এলাকাবাসী জানায়, মুক্তিযুদ্ধ শেষে তারা এ নির্যাতন সেলে রক্তের ২ ইঞ্চি পুরো জটলা দেখতে পেয়েছিল, এছাড়া দেওয়ালে রক্তের দাগ ও নারীদের অনেক চুল দেখতে পেয়েছিল।

সোনাইমুড়ি উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার গোলাম মাওলা বলেন, এটি ছিল মূলত পাকিস্তানী সেনাবহিনীর বিচারকাজ পরিচালনার স্থান। এ স্থানে নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন মানুষকে হত্যা করেছে, ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেছে পাঞ্জাবীরা।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এই স্থানটি খুবই মর্মস্পর্শী একটি স্থান। অথচ মুক্তিযুদ্ধের ৪৭ বছরেও এ স্থানটিতে তৈরি হয়নি কোনো স্মৃতিফলক। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এটি যে, বর্তমানে এ স্থানটি গোয়ালঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অধিকাংশই জানেন মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে এখানে সংঘটিত হওয়া অপকর্মের কথা। অযত্নে আর সংরক্ষণের অভাবে আমরা হারিয়ে ফেলেছি সোনাইমুড়ি রেলস্টেশন সংলগ্ন নির্যাতনকেন্দ্রের মতো এমন কত শত শত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহ। যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে একটাই আবেদন, যেন রেলওয়ে কোয়ার্টারসহ উপজেলায় আরও যত গণহত্যার স্মৃতি বিজড়িত স্থান রয়েছে সেগুলো যাতে সংরক্ষণ করা হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা টিনা পালের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা খুবই গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করব। এবং স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আলোচনা করে স্থানটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে তিনি আশ্বাস প্রদান করেন।

ওডি/আরএআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড