নিশীতা মিতু
সকালের আলো ঠিকমতো ফুটতেই আবার আঁধার নেমে এলো। ঈশান কোণ থেকে কালো মেঘ দলের নৃত্য শুরু হলো, এলোমেলো বাতাস গাছের পাতায় নাড়া দিলো আর তারপরই নেমে এলো বৃষ্টি। সঙ্গে রয়েছে মেঘের ডাক।
আজকের সকালটা এভাবেই শুরু করেছেন ঢাকাসহ পুরো দেশ। সকালবেলার বৃষ্টি জানান দিতে এসেছে, প্রকৃতিতে আগমন ঘটেছে বর্ষা ঋতুর। আজ আষাঢ়ের প্রথম দিন, বর্ষা ঋতুরও। প্রকৃতির ঋতুচক্রে কাগজে কলমে আগামী দু’মাস থাকবে বর্ষা। প্রকৃতিতে সবুজ আর সতেজ করার মূলমন্ত্র নিয়ে চালাবে নিজের রাজত্ব।
বর্ষার রূপে মুগ্ধ হননি এমন কবি বা লেখক মেলা ভার। প্রেম আর দ্রোহের কবি প্রেমে পড়েছিলেন বর্ষার সৌন্দর্যে। লিখেছেন- রিমঝিম রিমঝিম ঘন দেয়া বরষে/ কাজরি নাচিয়া চল, পুর-নারী হরষে/ কদম তমাল ডালে দোলনা দোলে/ কুহু পাপিয়া ময়ুর বোলে/ মনের বনের মুকুল খোলে/ নট-শ্যাম সুন্দর মেঘ পরশে।
বর্ষার ফুল কদম; (ছবি- সৈয়দ মিজান)
কবি যেন তার কবিতার ছন্দে পুরো বর্ষার প্রকৃতি আর জনজীবনের চিত্র তুলে ধরেছেন অক্ষরের বাঁধনে। বর্ষার সঙ্গে কদমের প্রেম বেশ পুরোনো। আষাঢ়ের আগমনের আগেই যদিও গাছে গাছে কদম ফুটেছে তবে তার রূপ ও সৌন্দর্য মূল বহিঃপ্রকাশ ঘটে এই বর্ষাতেই। বৃষ্টির জল কদমের শরীর ভিজিয়ে দেয় পরম যত্নে। কদমের পাতাকে করে আরও সবুজ, আরও সতেজ।
আষাঢ় আর শ্রাবণ দুই মাস মিলে বর্ষাকাল। কালো মেঘে ঢাকা আকাশ, রিমঝিম বৃষ্টি, কর্দমাক্ত পথ-ঘাট আর নতুন পানিতে পূর্ণ নদী-নালা, পুকুর— এই হলো বর্ষার বৈশিষ্ট্য। গ্রীষ্মের তাপদাহে তৃষ্ণায় কাতর বৃক্ষরাজি অপেক্ষায় থাকে বর্ষার। বৃষ্টির জলে ধুয়ে যায় পুরোনো সব ধুলো, নতুন জীবন স্পন্দনে জেগে ওঠে তারা।
বর্ষা একটু গ্রাম্য ঋতু। গ্রাম বাংলার জনজীবনের সঙ্গে এ ঋতু মিশে থাকে আড়ষ্ট হয়ে। দস্যি ছেলের দল বৃষ্টি জলে ভিজে, কাদা পানিতে খেলে ফুটবল। পুকুরের নতুন পানিতে লাফ দেওয়ার প্রতিযোগিতায় মত্ত হয় দামাল ছেলেরা। কেউবা আবার মাছ ধরতে ছুটে দূরের বিলে।
বর্ষার কর্দমাক্ত প্রকৃতি; (ছবি- নিশীতা মিতু)
কর্দমাক্ত মাটি বলে এসময় গ্রাম্য নারীরা ঘরেই বেশি সময় কাটায়। তবে নানা আয়োজনে অন্দরমহলেও সৃষ্টি হয় উৎসবের আমেজ। বিকেলে সবজির পাকোড়া, চা কিংবা মুড়ি ভাজায় জমে উঠে আড্ডা। নকশি কাঁথায় বাহারি সুতার ফোড় তোলার সময়ও এই বর্ষা।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও ভালোবেসেছেন বর্ষার রূপ। কদমের সরলতা ছুঁয়ে গেছে তার মন। তাইতো লিখেছেন- ‘বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল করেছো দান, আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান, মেঘের ছায়ায় অন্ধকারে রেখেছি ঢেকে তারে, এই-যে আমার সুরের ক্ষেতের প্রথম সোনার ধান।’
বর্ষার সঙ্গে রয়েছে কদমের প্রেম
বর্ষার সঙ্গে কদমের এ প্রেমে মোহিত হন সবাই। তবে এসময় কেবল কদম নয়, বকুল, কলমি ফুল, স্পাইডার লিলি, কামিনীর উপস্থিতিও নজর কাড়ে সবার। জাতীয় ফুল শাপলা ফোটার সময়ও বর্ষা। এসময়ের ফলের তালিকায় রয়েছে করমচা, জামরুল, পেয়ারা। পাওয়া যায় ডেওয়া, কাউ, গাবের মতো গ্রাম বাংলার ফলগুলোও।
শহরের বুকে বর্ষা আসে কিছুটা অস্বস্তি নিয়েই। রাস্তাঘাটে কাদা, জলাবদ্ধতা আর জ্যাম মিলিয়ে বর্ষার সৌন্দর্য উপভোগ করার অবসর মেলে না খুব একটা। তবুও গানের ভাষায় সবাই বলে যায়, ‘বরষার প্রথম দিনে, ঘন কালো মেঘ দেখে, আনন্দে যদি কাঁপে তোমার হৃদয়... সেদিন তাহার সাথে করো পরিচয়।’
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড