ফিচার ডেস্ক
রাজনীতিবিদ হলে বেশ ভালো অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়া যায়— এমন ধারণা অনেকেরই রয়েছে। অনেক দেশেই রাজনীতিবিদ হিসেবে পেশাটিতে অর্থনৈতিকভাবে বেশ সুবিধা মেলে। তবে সুইডেনেরর ক্ষেত্রে ব্যাপারটি পুরোই ভিন্ন।
এই দেশটিতে রাজনীতিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। তাদের কাছে রাজনীতিবিদ হলো জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করার একটি সাধারণ চাকরি। ভালো অঙ্কের বেতন কিংবা গাড়ি, বাড়ির মতো বাড়তি সুবিধা পাওয়া তো দূরের কথা, জনগণ থেকে পাওয়া করের টাকা খরচের ব্যাপারেও সে দেশের সংসদ সদস্যদের ওপরে রয়েছে কড়াকড়ি নিয়ম।
চলুন সুইডেনের রাজনীতিবিদদের সম্পর্কে কিছু তথ্য চলুন জেনে নিই-
তারা সাধারণ নাগরিক-
সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির একজন সংসদ সদস্য প্রি-অর্নে হাকানসন। তিনি বলেন, ‘আমরা হচ্ছি দেশের সাধারণ নাগরিক। সংসদ সদস্যের জন্য অতিরিক্ত সুবিধা পাবার বিষয়টি কোনোভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়, কারণ আমাদের কাজ হচ্ছে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করা, তারা যে অবস্থায় বা যেভাবে বসবাস করছেন, সেটাকেই তুলে ধরা।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমরা শুধু এটা বলতে পারি, আমাদের সুবিধা এটাই যে, আমরা এই কাজটি করতে পারছি আর দেশ পরিচালনায় প্রভাব রাখতে পারছি।
বাড়তি সুবিধা বলতে সুইডেনের সংসদ সদস্যরা যে সুবিধা পান তা হলো পাবলিক পরিবহনে বিনা মূল্যে যাতায়াত করতে পারা। অনেক দেশের মতো তারা নিজেদের জন্য কোনো গাড়ি পান না, পান না কোনো চালকও।
এমনকি সুইডেনের পার্লামেন্টের ভলভো এস-এইটটি গাড়িই মাছে কেবল তিনটি। যা কেবল ব্যবহার করতে পারবেন পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট এবং তিনজন ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং তা শুধুমাত্র সরকারি অনুষ্ঠানের কাজে।
পুরো সুইডেনে একজন মাত্র রাজনীতিবিদকে সরকারিভাবে গাড়ি দেয়া হয়েছে, আর তিনি হচ্ছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী।
কেমন মজুরি পান?
সুইডেনের সংসদ সদস্যরা মাসে আয় করেন গড়ে ৬৯০০ ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্রের একজন কংগ্রেসম্যানের মাসিক বেতনের অর্ধেক। সুইডেনের কর্মীদের গড় মাসিক আয় প্রায় ২৮০০ ডলারের মতো।
অর্থনৈতিকভাবে আকর্ষণীয়-
যেসব সংসদ সদস্যের নির্বাচনী এলাকা স্টকহোমের বাইরে, তারা 'ট্রাটামেন্ট' নামের একটি বিশেষ ভাতা দাবি করতে পারেন। অর্থাৎ তারা যে কদিন রাজধানীতে অবস্থান করবেন ততদিনের জন্যই কেবল পাবেন দৈনিক ভাতা। কিন্তু সেটা কত?
একজন রাজনীতিবিদ প্রতিদিনের ভাতা হিসেবে পান কেবল ১২ ডলার। যা দিয়ে স্টকহোমে একবেলার জন্য খুব ভালো কোনো খাবারও কেনা সম্ভব হবে না। নিজেদের কফির বিলও তাদের নিজেদের পকেট থেকেই দিতে হয়।
তবে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত সুইডেনের সংসদ সদস্যরা কোন মজুরিও পেতেন না। তার বদলে দলের কর্মীরা এই সংসদ সদস্যদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতেন। পার্লামেন্টের নথিপত্রে দেখা যায়, বেতন দেয়ার বিষয়টি এজন্য চালু করা হয়েছে যাতে কোনো নাগরিকের জন্য রাজনীতি করা কঠিন হয়ে না পড়ে। কিন্তু সুইডিশরা এটাও চান না যেন এই বেতন আবার তাদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।
বিশ্বের অনেক দেশের মতো সুইডেনের সংসদ সদস্যরা ভর্তুকি মূল্যের আবাসন পেতে পারেন। তবে এই সুযোগ কেবল তাদেরই মিলবে যারা স্টকহোমের বাইরে অবস্থান করেন।
থাকার জায়গাও অতি সাধারণ-
যারা থাকার জায়গা পান, সেটিও খুব আহামরি কোনো বিলাসবহুল স্থান নয়। সংসদ সদস্য প্রি-অর্নে হাকানসন জানান, তিনি থাকেন মাত্র ৪৬ বর্গমিটারের একটি অ্যাপার্টমেন্টে।
সরকারি পরিচালনার অনেক স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টের আকার মাত্র ১৬ বর্গমিটার। আর এসব ফ্ল্যাটে ওয়াশিং মেশিন বা ডিসওয়াশারের মতো আসবাবপত্রও থাকে না। আসবাব বলতে সেখানে শুধুমাত্র একজনের থাকার মতো একটি সিঙ্গেল বেড রয়েছে।
কারণ জনগণের অর্থ শুধুমাত্র একজন সংসদ সদস্যের খরচের জন্য। কারও সঙ্গী বা পরিবারের সদস্য এসব অ্যাপার্টমেন্টে থাকতে চাইলে অর্থ ব্যয় করতে হবে। কোন সংসদ সদস্য যদি তার সঙ্গীর সঙ্গে থাকতে চান, তাহলে ভাড়ার অর্ধেক তাকে সরকারি কোষাগারে ফেরত দিতে হবে।
রাখা যায় না ব্যক্তিগত সহকারী-
সুইডিশ সংসদ সদস্যরা নিজেদের ব্যক্তিগত সহকারী বা উপদেষ্টা নিয়োগ দিতে পারেন না। বরং যে রাজনৈতিক দল থেকে এমপিরা আসেন, সেই দল একটি বিশেষ ভাতা পায়, যা দিয়ে তারা একটি কর্মী বাহিনী নিয়োগ করতে পারে, যারা সব দলের এমপিদের জন্যই কাজ করবে।
সূত্র- বিবিসি
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড