• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ক্যাম্পাসে ইফতার

  সৈয়দ মিজান

১৮ মে ২০১৯, ২০:২৯
ইফতার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে এভাবেই শিক্ষার্থীরা আয়োজন করেন ইফতারের (ছবি: সৈয়দ মিজান)

ইফতার শুরু হতে বাকি আরও ঘন্টাখানেক, এরই মধ্যে তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে ইফতার আয়োজনের। পত্রিকা বিছিয়ে বারান্দা, মাঠের ঘাসে সবাই গোল হয়ে বসছেন দল বেঁধে। বাচ্চা থেকে বুড়ো সবার দেখা মিলবে এই আয়োজনে। জায়গাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র বা টিএসসি। রমজানের সময় প্রতিদিন এখানে যেন বসে ইফতার করার উৎসব। বিভিন্ন সংগঠনের আয়োজন থাকে ক্যাফেটেরিয়া, গেমস রুম আর শহীদ মুনির চৌধুরী মিলনায়তনে। এর বাইরে মাঠের ঘাস আর বারান্দা জুড়ে শত শত মানুষের মিলন মেলা বসে ইফতারকে ঘিরে। টিএসসি মিলনায়তনের সামনের বারান্দায় গোল হয়ে বসেছে এমন একটি দলের সঙ্গে কথা হলো। শাকিল আহমেদ, স্নাতকোত্তর পড়ছেন। সমাজবিজ্ঞান বিভাগে। তিনি জানালেন, প্রতিবছর রমজানে বাড়ির ইফতারের কথা মনে পড়লে মন খারাপ হয়। বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে ইফতার করে সে দুঃখ কিছুটা ভোলা যায়। এজন্য টিএসসির চেয়ে ভালো জায়গা আর নেই।

দেখা গেল টিএসসির মাঠে স্থানে স্থানে ময়লা ফেলার ঝুড়ি রাখা আছে অনেক। মাঠের মাঝখানে বড় একটি নোটিশে উচ্ছিষ্ট ময়লা আবর্জনা ঝুড়িতে ফেলতে বলা হয়েছে। মোটামুটি সবাই ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, খেজুর এসব দিয়েই ইফতার বানাচ্ছেন। টিএসসির বাইরেই কিনতে পাওয়া যাচ্ছে এসব। সারা বছর যারা চা বিক্রি করেন, তারাই এই সময়ে ইফতারির দোকানি হয়ে যান। কেউ কেউ বাসা থেকে ইফতারি নিয়ে এসেছেন বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে। সবার সঙ্গে সময়টাকে স্মৃতি করে রাখতে সেলফি তুলছেন কেউ কেউ।

স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী মেহেরিন প্রভা বলছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবন প্রায় শেষ হতে চলল। এরপর এমন করে ইফতার করা হবে কিনা জানি না। তাই সময়টাকে বন্দি করে রাখছি ছবিতে। দিন শেষে এগুলোই একটি শান্তি দেবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে ইফতারের এই আয়োজন শুধু টিএসসি কেন্দ্রিক নয়। ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, কার্জন হল, কলা ভবন, ডাকসু, মল চত্বর, সিনেট ভবন, ভিসি চত্বরসহ বেশকিছু জায়গায় এমন ইফতারের আয়োজন চলে।

কার্জন হলের সবুজ প্রাঙ্গণেও চলে একই রকম আয়োজন। আবাসিক হলগুলোতেও বন্ধু আর সহপাঠীদের সঙ্গে ইফতার করে থাকেন অনেকে। বিজয় একাত্তর হলের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কামরুল আহসান বললেন, হলের বাগানে বসে বন্ধুরা মিলেই ইফতার করি। এখানে ভাগাভাগির যে আনন্দ, তা অন্য কোথাও পাই না। ইফতার তো একটা ইবাদত। এভাবে ইফতার করলে ভালোবাসাও বাড়ে, ভ্রাতৃত্বও বাড়ে।

একই কথা শোনা গেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ট্যুরিষ্ট সোসাইটির সভাপতি আসিফ আলমের কণ্ঠে, টিএসসি কেন্দ্রিক ইফতারের যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে তা একদিন ঐতিহ্য হয়ে যাবে। এখানে শিক্ষার্থী ছাড়াও অনেক মানুষ আসেন। সবাই প্রাণের টানেই আসেন। ইফতারের আয়োজন এখানে উপলক্ষ্য করে দেয়। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক- সাংস্কৃতিক-স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, জেলা ও অঞ্চলভিত্তিক সংগঠন এবং বিভিন্ন বিভাগের পক্ষ থেকে ইফতারের আয়োজন তো আছেই।

এভাবে পুরো রমজান মাসেই একের পর এক সংগঠনের ইফতারের আয়োজন চলতেই থাকে। ক্যাম্পাসে ইফতারের এই রীতি কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই নয়, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই মিলবে এমন চিত্র।

অন্যদিকে আবাসিক হলগুলোতে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ইফতার পার্টির আয়োজন করেন। এসব অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে থাকেন। ফলে এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নবীন- প্রবীণের মিলনমেলায় পরিণত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের মুয়াজ্জিনের আজানের সঙ্গে সঙ্গে সবাই যখন একসঙ্গে ইফতার শুরু করেন, তখন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দেখা যায় অন্যরকম এক আবহ।

ওডি/এএন

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড