নাবিলা বুশরা
আচ্ছা ভাবুন তো আপনি একটা নিরিবিলি শহরে রয়েছেন। সেটি আবার সাধারণ কোনো শহর নয়, বইয়ের শহর। আপনি যেদিকেই যাচ্ছেন দেখতে পাচ্ছেন শুধু বইয়ের দোকান। শহরের কোথাও কোনো কোলাহল নেই, ছুটোছুটি করে কেউ কাজে চলে যাচ্ছে না, এমনকি সেখানে যানবাহনের অতিরিক্ত শব্দও নেই। বরং সবার হাতে বই। যে যেখানে যেভাবে আছে বই পড়ছে, বই নিয়ে কথা বলছে। আবার বছরের একটা নির্দিষ্ট সময় সে শহরে বই নিয়ে উৎসবও হচ্ছে। সেখানে আসছেন হাজার হাজার গ্রন্থানুরাগী।
কী অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন এমন নিরিবিলি একটা শহর পেলে কিন্তু মন্দ হত না! যতক্ষণ খুশি বই পড়া যায়, আবার খুঁজে পাওয়া যায় প্রচুর দুর্লভ বইও। কথাগুলো গল্পের মত শোনালেও এমন শহর কিন্তু সত্যিই আছে। এ শহরগুলোকে বলা হয় 'বইয়ের শহর'।
চলুন জেনে আসি এমন কিছু 'বইয়ের শহর' সম্পর্কে:
স্পেনের উরুয়েনা
স্পেনের মাদ্রিদের ক্যাস্টিলা ই লিওন অঞ্চলে অবস্থিত ছোট্ট একটি শহরের নাম উরুয়েনা। গত কয়েক বছরের মাঝে এই শহরটি পরিণত হয়েছে ‘ভিলা ডেল লিব্রো’ বা বইয়ের নগরীতে।
২০০জন অধিবাসীর এই শহরে রয়েছে ১২টি বইয়ের দোকান। অর্থাৎ প্রতি ১৬ জন মানুষের জন্য ১টি করে দোকান! এ সকল দোকানে পাওয়া যায় নানা ধরনের পুরনো আর দুর্লভ বই।
স্পেনের উরুয়েনার একটি বইয়ের দোকান (ছবি: অল দ্যাট ইজ ইন্টারেস্টিং)
২০০৭ সালে উরুয়েনাকে 'বইয়ের নগরী'তে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। স্পেনের 'বইয়ের শহর' বলতে এই শহরকেই জানা হয়।
এপ্রিলে বিশ্ব বই দিবসে এই শহরে প্রচুর মানুষের ভিড় হয়। এছাড়াও মার্চে উরুয়েনার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে অনুষ্ঠিত হয় বই উৎসব। আর সেখানেও প্রচুর গ্রন্থানুরাগীরা আসেন।
শুধু বইয়ের জন্য নয়, এ শহর পরিচিত তাদের আদিম সময়ের জন্যেও। বারশ', তেরশ' সালের পুরনো পাথরের কাজ এখনো শোভা পায় এ শহরে।
ফ্রান্সের বিচরেল
ফ্রান্সের বিট্টলির বিচরেল এলাকাটি পরিচিত ফ্রান্সের 'বইয়ের নগরী' হিসেবে। ৭০০ জন অধিবাসীর এ শহরে বইয়ের দোকান আছে ১৫টি। শুধু বইয়ের দোকানই নয়, এখানে আছে আর্ট গ্যালারি আর বইয়ের ক্যাফে।
ফ্রান্সের বিচরেলের একটি বইয়ের দোকানের চিত্র (ছবি: ই-বুক ফ্রেন্ডলি)
বইয়ের এ শহরে বই উৎসব শুরু হয় ১৯৮৯ সালে। এরপর থেকে প্রতি বছরের বসন্তে ও ইস্টারের সময় এখানে নিয়মিত বই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বইয়ের নগরী হওয়ার পাশাপাশি এখন শহরটি ঝুঁকেছে নিজেদের পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য।
ওয়েলসের হে-অন-ওয়ে
পৃথিবীর সর্বপ্রথম এবং সবচেয়ে পুরনো বইয়ের নগরীর নাম হে-অন-ওয়ে। ১৯৬১ সালে রিচার্ড বুথ একে বিশ্বের সর্বপ্রথম বইয়ের শহরে পরিণত করেন এবং সেই সাথে এর নামকরণ করেন।
হে-অন-ওয়ের একটি বইয়ের দোকান (ছবি: ই-বুক ফ্রেন্ডলি)
এই শহর সুপরিচিত বই এবং হে উৎসবের জন্য। এখানে আছে প্রচুর সেকেন্ড হ্যান্ড বইয়ের দোকান। রয়েছে আর্ট-ক্রাফটের দোকান, পোশাকসহ কিছু এন্টিক জিনিসের দোকানও আছে এখানে।
১৯৮৭ সাল থেকে শুরু হওয়া জনপ্রিয় সাহিত্য উৎসব ‘হে সাহিত্য ও শিল্পকলা উৎসব’ এখনও প্রতিবছরের মে ও জুন মাসে অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবে অন্তত ২,৫০,০০০ জনের বেশি দর্শক ও বইপ্রেমীদের সমাগম ঘটে।
নরওয়ের মান্ডাল
৩০০ জন অধিবাসী নিয়ে নরওয়ের জস্টেডালসব্রিন হিমবাহের কাছে মধ্য ফিয়ারল্যান্ডে অবস্থিত ছোট্ট শহর মান্ডাল। এই শহর ‘নরওয়ের বইয়ের শহর’ হিসেবে স্বীকৃতি পায় ১৯৯৫ সালে।
মান্ডালের একটি বইয়ের দোকান (ছবি: ই-বুক ফ্রেন্ডলি)
এ শহরের বেশিরভাগ বইয়ের দোকানগুলো গড়ে উঠেছে বিভিন্ন পরিত্যক্ত ভবনে। যেমন, ওয়েটিং রুম, মুদির দোকান, ব্যাংক আর পোস্ট অফিস। এই শহরে রয়েছে প্রচুর বই।
মে থেকে সেপ্টেম্বর মাসে বইয়ের দোকানগুলো খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
বেলজিয়ামের রেডু
ব্রাসেলস থেকে ১৩০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে বেলজিয়ামের ছোট্ট শহর আর্ডেনাসের রেডু। এখানে বসবাস মাত্র ৪০০ জন অধিবাসীর। ইউরোপের প্রথম এ বইয়ের শহরের প্রতিস্থাপন কাল ১৯৮৪।
রেডুর বইয়ের দোকানের বাইরের চিত্র (ছবি: ই-বুক ফ্রেন্ডলি)
বর্তমানে এখানে বইয়ের দোকানের সংখ্যা মাত্র ২৪টি। আরও রয়েছে ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট আর ক্রাফটের দোকান। প্রতি বছর এ শহরে দুই লাখেরও বেশি দর্শকের সমাগম হয়। ইস্টারের সময় অনুষ্ঠিত বইয়ের উৎসবে আগমন হয় অন্তত পনেরো হাজারেরও বেশি দর্শকের।
স্কটল্যান্ডের উইগটাউন
গ্লাসগো থেকে ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত স্কটল্যান্ডের বইয়ের শহর হিসেবে উইগটাউন আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায় ১৯৯৮ সালে। এ শহরে বসবাস এক হাজার অধিবাসীর। এখানে বইয়ের দোকানের সংখ্যা দশটি। এর এগুলোতে বইয়ের সংখ্যা দুই লাখ পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি!
স্কটল্যান্ডের উইগটাউনের একটি বইয়ের দোকানের বাইরের চিত্র (ছবি: ই-বুক ফ্রেন্ডলি)
সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত বই উৎসবে শুধু বইয়ের আলোচনা ছাড়াও থাকে নানা ধরনের মিউজিক, থিয়েটার আর নানা ধরনের শিল্পকলার প্রদর্শন।
বইকে ভালোবেসে এ শহরগুলো গড়ে উঠেছে বইয়ের নগরী হিসেবে। সাহিত্য ভালোবাসেন এমন অনেক মানুষই এ শহরে এসেছেন। আপনি যদি সাহিত্যপ্রেমী বা বইপ্রেমী নাও হয়ে থাকেন তবু কিন্তু আপনি চাইলে ঘুরে আসতে পারেন। বইয়ের শহরে মুঠো মুঠো ভালোলাগা আর স্মৃতি নিয়ে ফিরবেন এ কিন্তু হলফ করে বলাই যায়।
ওডি/এএন
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড