ফিচার ডেস্ক
মা কে ভালোবেসে গীতিকার প্রণব রায় লিখেছিলেন-
মধুর আমার মায়ের হাসি, চাঁদের মুখে ঝরে মাকে মনে পড়ে আমার মাকে মনে পড়ে।
তার মায়ায় ভরা সজল বীথি, সেকি কভু হারায় সে যে জড়িয়ে আছে, ছড়িয়ে আচ্ছে, সন্ধ্যা রাতের তারায় সেই যে আমার মা। বিশ্ব ভুবন মাঝে তাহার নেই কো তুলনা।
সত্যিই যেন তাই। মায়ের হাসির মতো এত মধুর হাসি আর কোথায় দেখতে পাওয়া যায়? মা যে বড্ড আপন, বড্ড কাছের। সুখের দুখের সকল আস্থার নীরব শান্তির জায়গা তো মায়ের কাছেই। বিশ্ব ভুবনের আর কোন জায়গায় গেলে মায়ের মত এমন আপন কাউকে পাওয়া যাবে। এই মাকে ভালোবেসে কত কবি, কত লেখক, কত গীতিকার কত সহস্র লেখা লিখে গেছেন।
মায়ের জন্য ভালোবাসার কথা বলতে গিয়ে কবি সুভাষ মখোপাধ্যায় লিখেছিলেন,
আমি ভীষণ ভালবাসতাম আমার মা-কে -কখনও মুখ ফুটে বলি নি। টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে কখনও কখনও কিনে আনতাম কমলালেবু -শুয়ে শুয়ে মা-র চোখ জলে ভ’রে উঠত আমার ভালাবাসার কথা মা-কে কখনও আমি মুখ ফুটে বলতে পারি নি।
মায়ের প্রতি অব্যক্ত ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার কথা উঠে এসেছিল কবি কালিদাসের 'মাতৃভক্তি' কবিতায়। সে কবিতায় তিনি লিখেছেন,
বায়েজিদ বোস্তামী- শৈশব হতে জননীর সেবা করিতেন দিবাযামী। দুপুর রাত্রে জননী জাগিয়া ডাকিলেন,'বাছাধন, বড়ই পিয়াস পানি দাও' বলি মুদিলেন দু'নয়ন। দেখিল বালক ঘরের কোণের কলসিতে নেই পানি, বহুদূর পথ ঝরনা হইতে কলসি ভরিয়া আনি।
মায়ের তৃষ্ণা মিটাইবে বলি গভীর অন্ধকারে ছুটিয়া বাহির হইল একাকী কলসি লইয়া ঘাড়ে।
এ কবিতার শেষে জানা যায়, বায়েজিদ বোস্তামী সারা রাত মায়ের শিয়রে দাঁড়িয়েছিলেন। সকালে মা চোখ খুলে যখন ছেলেকে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় দেখলেন তখন তিনি আদরে আদরে ভরিয়ে দিলেন ছেলের ছোট্ট মুখখানি।
মা নিয়ে লিখলে লেখা যেন শেষই হবে না। কবির কলমে মায়েদের কথা লেখা হয়েছে আরও গভীর শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায়। কবি কাজী নজরুল ইসলাম মা-কে নিয়ে লিখতে গিয়ে লিখেছেন,
যেখানেতে দেখি যাহা
মা-এর মতন আহা, একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই,
মায়ের মতন এত, আদর সোহাগ সে তো, আর কোনখানে কেহ পাইবে ভাই!
হেরিলে মায়ের মুখ, দূরে যায় সব দুখ, মায়ের কোলেতে শুয়ে জুড়ায় পরান,
মায়ের শীতল কোলে, সকল যাতনা ভোলে, কত না সোহাগে মাতা বুকটি ভরান।
কত করি উৎপাত, আবদার দিন রাত, সব স’ন হাসি মুখে, ওরে সে যে মা!
আমাদের মুখ চেয়ে, নিজে র’ন নাহি খেয়ে, শত দোষী তবু মা তো তাজে না।
কবির কথার সাথে মিলিয়ে আসলেই বলতে হয়, মায়ের মতন এত আদর-সোহাগ আর কোথাও মিলবে না। সারাদিন আমরা কতই না কষ্ট দেই মাকে। তবু কখনো মুখ ফুটে নিজের আবদারের কথা জানায় না মা। নিজে না খেয়ে সন্তানকে খাওয়ানোর এ গল্প তো তৈরি হয়ে আছে প্রতিটি ঘরেই।
এই যে সকল সুখ-দুখের মায়া আঁচলে তিনি আমাদের বেঁধে রেখেছেন তবু কখনো তাকে মুখ ফুটে বলা হয়নি 'ভালোবাসি'। মায়ের অবদানের কথা কখনোই তাকে বলে বা বুঝিয়ে শেষ করা যাবে না। প্রতিটি দিনই মাকে ভালোবাসার দিন। মাকে আগলে বেঁধে রাখার দিন। তবু মাকে যেন আমরা বুঝাতে পারি তাকে আমরা ভালোবাসি সেজন্য পুরো বিশ্বে আজকের এই দিন অর্থাৎ ১২ মে কে 'বিশ্ব মা দিবস' হিসেবে পালন করা হয়।
মা কে ভালোবাসার কথা সরাসরি জানাতে কিছুটা জড়তা কাজ করলেও এই দিনে মায়ের জন্য স্পেশাল কিছু করেও তাকে ভালোবাসার কথা জানানো যায়। কীভাবে এলো এই মা দিবস- তার পেছনে আছে একটি গল্প।
জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে আনা জার্ভিস ও তার মেয়ে আনা মারিয়া রিভস জার্ভিসের উদ্যোগে এই মা দিবসের সূচনা হয়। আনা জার্ভিস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর ও ওহাইওর মাঝামাঝি ওয়েবস্টার জংশন এলাকায় বাস করতেন। তার মা অ্যান মেরি রিভস জার্ভিস সারা জীবন অনাথদের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। ১৯০৫ সালে তিনি মারা যান। অসহায়দের জন্য অনেককিছু করে লোকচক্ষুর অগোচরে কাজ করা মেরিকে তার যথার্থ সম্মান দিতে চাইলেন মেয়ে আনা জার্ভিস। অ্যান মেরি রিভস জার্ভিসের মতো দেশজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সব মাকে স্বীকৃতি দিতে আনা জার্ভিস প্রচার শুরু করেন।
সাত বছরের অক্লান্ত চেষ্টায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায় 'মা দিবস'। ১৯১১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি রাজ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে মা দিবস পালনের ঘোষণা দেয়া হয়। ১৯১৪ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেস মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে 'মা দিবস' হিসেবে ঘোষণা করে।
বিশ্বের ৩৭টিরও বেশি দেশ মা দিবস পালন করে। মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার বাংলাদেশসহ অস্ট্রেলিয়া, বারবাডজ, বাহামাস, কানাডা, কলোম্বিয়া, চেক রিপাবলিক, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভারত, সিঙ্গাপুর নিউজিল্যান্ডসহ অন্তত ২৭টি দেশে পালন করা হয়ে থাকে। এছাড়া নরওয়েতে ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় রবিবার, আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, বেলারুশ, সার্বিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ মা দিবস পালন করা হয়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে মা দিবস পালন করা হয় ২১ মার্চ। এছাড়া, মে মাসের অন্যান্য দিন, জুন, আগস্ট, অক্টোবর এবং নভেম্বরেরও কয়েকটি দেশে মা দিবস পালন করা হয়ে থাকে।
ওডি/এএন
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড