সৈয়দ মিজান
গান মানুষের মনকে প্রফুল্ল করে আনন্দের এক ভুবনে নিয়ে যায়। পৃথিবীর আদি থেকেই গানের পরিচয় এটাই। কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাসে একটি গান আছে আত্মহত্যার প্ররোচনায় যেটির কুখ্যাতি রয়েছে। গানটির নাম গ্লুমি সানডে।
১৯৩২ সাল। প্রেমিকার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে হাঙ্গেরিয়ান কবি ল্যাজলো জাভিয়েরের। সেই দুঃখ নিয়ে এক বিষণ্ণ সন্ধ্যায় তিনি লিখে ফেললেন একটি কবিতা। গ্লুমি সানডে' নামে কবিতাটি পাঠালেন বন্ধু রেজসো সেরেসের কাছে। সেরেস মামলা মোকদ্দমায় হেরে এক বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। কবিতার কথাগুলো ব্যাপক প্রভাব ফেলে তার ওপর।
বিলি হলিডের কণ্ঠেই সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে গ্লুমি সানডে গানটি। (ছবি : সংগৃহীত )
১৯৩৩ সালে কবিতাটিকে গানে রূপ দেন তিনি। পিয়ানোর সি মাইনর মেলোডিতে গানটির সুর করার সময়টাতে প্রকৃতিও যেন বিষণ্ণ হয়ে পড়েছিল। গানটিতে প্রথম কণ্ঠ দিয়েছিলেন পল কেলমার নামে এক শিল্পী। এই তিনজনের হাত ধরে সৃষ্টি হয় পৃথিবীর বিষণ্ণতম গানের। যে গান শুনে শতাধিক মানুষ বেছে নিয়েছিলেন আত্মহননের পথ। এমনকি গীতিকার ল্যাজলো জাভিয়েরের প্রাক্তন প্রেমিকাও গানটি শুনে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে জীবনাবসান ঘটান। আরো বেশ কয়েকটি আত্মত্যার ঘটনা ঘটে যার কারণ গ্লুমি সানডে গানটি। আত্মহত্যাকারীদের অনেকের হাতে, পকেটে পাওয়া গিয়েছিল গানের লিখিত কপিটি।
ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে আত্মহত্যার সংখ্যা। এক সময় হাঙ্গেরিয়ান সরকার গানটি নিষিদ্ধ করে দেয়। কিন্তু নিষিদ্ধ করার পরও গানটি মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পেতেই থাকে। হতে থাকে বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ। ১৯৩৫ সালে প্রথম রুশ ভাষায় এবং এর পরের বছরই ফরাসি ও জাপানি ভাষায় অনুদিত হয় গানটি। তবে বিশ্বব্যাপী যার কণ্ঠে গানটি | বেশি ছড়িয়েছে তিনি বিলি হলিডে। বিখ্যাত এই গায়িকার কণ্ঠে ইংরেজি অনুবাদটি শুনেও বেশ কিছু তরুণ তরুণী আত্মহত্যা করে বসে।
২০০২ সালে মুক্তি পাওয়া গ্লুমি সানডে সিনেমার একটি দৃশ্য। (ছবি : সংগৃহীত )
বলা হয়ে থাকে এই গানটি শুনে আত্মহত্যা করেছে প্রায় দুইশত' বিভিন্ন বয়সী মানুষ। খোদ হাঙ্গেরিতেই মারা গেছে ১৯ জন। তবে কারো কারো মতে এই সংখ্যাটা গুজব। ১৯৬৮ সালে গানটির স্রষ্টা রেজসো সেরেস নিজেই গানটি গাইতে গাইতে চারতলার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়েন। সে যাত্রায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হলেও একটু সুস্থ হয়ে হাসপাতালেই গলার সঙ্গে তার পেঁচিয়ে তিনি পৃথিবী ছেড়ে যান। এরপর এই গানটি নিষিদ্ধ করার হিড়িক পড়ে যায়। সবাই গানটিকে নিষিদ্ধ গান হিসেবেই দেখত।
বিবিসি রেডিও থেকেও গানটি প্রচার করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ২০০২ সাল পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা ছিল। এটি শুধু গান হিসেবেই থেমে থাকেনি। এই গানকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে সিনেমাও। ১৯৯৯ সালে জার্মান চিত্র পরিচালক রলফ সুবলের পরিচালনায় গ্লুমি সানডে মুভিটি মুক্তি পায়।
ওডি/এসএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড