নিশীতা মিতু
বাংলা ক্যালেন্ডারের পাতা জানান দিচ্ছে দিন দশেক বাদেই প্রকৃতিতে বসন্তের বিদায় ঘণ্টা বাজবে আর আগমন ঘটবে গ্রীষ্মের। অবশ্য এখন থেকেই সূয্যি মামা তার দাপট দেখাচ্ছে বেশ। আজকাল প্রকৃতির মন বোঝা দায়। এই কখনো রোদের শাসন, আবার এই বৃষ্টির বাড়াবাড়ি। আবহাওয়া যাই হোক না কেন, এই সময় আপনার হাতের কাছে যে জিনিসটি থাকা খুবই দরকার তা হলো ‘ছাতা’।
বেশিরভাগ মানুষই অবশ্যই ছাতাকে বাদল দিনের সঙ্গী হিসেবেই বেশি পছন্দ করেন। তবে কেবল বৃষ্টি হয়, সূর্যের অতিরিক্ত তাপ দিতেও এই জিনিসটি হতে পারে আপনার উপকারী বন্ধু। ছাতা কিন্তু আজকালের ব্যবহার্য জিনিস নয়, বহুকাল আগে থেকেই এর ব্যবহার করে আসছে মানুষ। কখনো আভিজাত্য, কখনো ফ্যাশন- ছাতার ব্যবহার চলছে বহু যুগ ধরেই।
ছাতার নানা রকমভেদ-
বাজারে দেশি ও বিদেশি নানা রকমের ছাতা পাওয়া যায়। কোনোটি লম্বা হাতলের আবার কোনোটি ছোট হাতলের। তবে বেশিরভাগ ছাতার হাতলই প্লাস্টিকের হয়ে থাকে। গ্রামাঞ্চলে কালো বড় যে ছাতা পাওয়া যায় তাকে ‘বাংলা ছাতা’ বলা হয়। এই ছাতার হাতল অবশ্য কাঠের হয়ে থাকে।
ছাতার স্টিকেও রয়েছে ভিন্নতা। কাঠ, স্টিল, অ্যালুমিনিয়ামের স্টিকযুক্ত ছাতা পাওয়া যায় বাজারে। চাইলে কিনতে পারেন স্টেইনলেস স্টিলের স্টিকযুক্ত ছাতাও। দামে খানিকটা বেশি হলেও এ ধরনের ছাতা ভিজলে মরচে পরার ভয় থাকে না।
গোল, চারকোনা দুই রকমের ছাতা পাওয়া যায়। তবে গোল ছাতার প্রচলনই বেশি। এক রঙা ছাতা যেমন পাবেন, তেমনই চাইলে কিনতে পারেন প্রিন্টের ছাতা। কিছু ছাতা আবার ফ্যাশনেবল করে তুলতে চারপাশে জুড়ে দেওয়া থাকে নকশা করা লেইস। তরুণীরা এমন ছাতাই বেশি পছন্দ করেন।
বাজারে ম্যানুয়াল ও অটোমেটিক দুই ধরনের ছাতাই পাওয়া যায়। ম্যানুয়াল ছাতাগুলো টেনে খুলতে ও আটকাতে হয়। অটোমেটিকগুলোতে সেই ঝামেলা নেই, সুইচ টিপলেই খুলে যাবে ছাতা আবার সুইচ টিপলেই বন্ধ হয়ে যাবে।
ফোল্ড করা ছাতাগুলো বর্তমানে রয়েছে সবার পছন্দের শীর্ষে। সহজে ভাঁজ করা যায় বলে এসব ছাতা আকারে হয় ছোট। তাই বহন করতে সুবিধা হয়। কিছু কিছু ছাতা অবশ্য তিন ভাঁজও করা হয়। কর্মজীবী ও তরুণীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে এমন ছাতা।
পছন্দে যেমন রং-
একসময় ছাতা বলতেই সবার মাথায় কালো রং আসতো। তবে এই রঙের ছাতার যুগ এখন প্রায় শেষ বললেই চলে। বর্তমানে সবাই রঙিন ছাতা ব্যবহার করতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। লাল, মেরুন, হালকা সবুজ, নীল, গোলাপি, চকোলেট রঙের ছাতা চলছে বেশি। নারীদের পছন্দে রয়েছে গাঢ় রঙের জমিনে হালকা রঙে নকশা করা ছাতা।
কোথায় পাবেন, কেমন দামে?
প্রায় সব শপিং মলেই পাবেন ছাতা। রাজধানীর গুলিস্তান, নিউ মার্কেট, বায়তুল মোকাররম ছাড়াও প্রায় ছোট-বড় সব বাজারে দেশি-বিদেশি ছাতা পাওয়া যায়। পাইকারি দরে ভালো ছাতা কিনতে চাইলে চলে যেতে হবে ঢাকার চকবাজারের ইমামগঞ্জে।
বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ছাতা পাবেন। প্রচলিত ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে- শরিফ, এটলাস, ইজতেমা, রহমান, মুন, শংকর, ফিলিপস, চেরি, ব্রাদার্স, মার্টিন, গোল্ডফিশ, রেলি ব্রাদার্স, স্ট্যামফোর্ড, মহেন্দ্র দত্ত ইত্যাদি। এছাড়াও চায়না থেকে আমদানিকৃত ছাতার চাহিদা রয়েছে বেশ।
লম্বা ডাঁটওয়ালা ছাতা পাবেন ১৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যেই। আট শিকের ফোল্ডিং ছাতা কিনতে লাগবে ২২০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা। ১০ শিকের ছাতার দাম পড়বে ৩২০ থেকে ৬৫০ টাকা। ফোল্ড করা, লেইস লাগানো ছাতাগুলো পাবেন ৪৫০ থেকে ৭০০ টাকায়। স্থান ও ডিজাইন ভেদে দাম ওঠা-নামা করতে পারে।
ছোট্ট সোনামণির ছাতা-
শুধু কী বড়রা ছাতা ব্যবহার করবে? না, ছোট্ট সোনামণির জন্যও কিনতে পারেন ছাতা। বাজারে ছোটদের উপযোগী নানা রং আর ডিজাইনের ছাড়া পাওয়া যায়। এসব ছাতায় কখনো দেখা যায় রংধনু, আবার কখনো ব্যাটম্যান, মিকি মাউস, মটু-পাতলুর মতো কার্টুন চরিত্রগুলো ফুটে ওঠে ছাতার গায়ে।
ডাঁটওয়ালা ছাতা যেমন রয়েছে তেমনি ছোটদের জন্য মাথালের মতো ছাতাও রয়েছে। ১০০ থেকে ৩৫০ টাকায় পাবেন ছোটদের ছাতাগুলো।
জেনে রাখুন টুকটাক বিষয়গুলো-
● পছন্দের ছাতা কেনার সময় কিছু ছোটখাটো তথ্য মাথায় রাখবেন। তবে কিনতে পারবেন টেকসই, মজবুত ও ভালো ছাতা।
● ছাতার ওপরের দিক প্রিন্টের হলেও ভেতরের দিক যেন সাদা বা ধূসর হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। কারণ এটি তাপ ও বৃষ্টি রোধ করে।
● দশ শিকের ছাতা কিনতে চেষ্টা করুন। কারণ আট শিকের ছাতার চাইতে দশ শিকের ছাতা বেশি দিন স্থায়ী হয়।
● ভেজা ছাতা ফোল্ড করে না রেখে ভালোভাবে শুকিয়ে নিন। অনেকসময় ভেজা কাপড় ভাঁজ করে রাখার কারণে তা তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়।
● একটু ঝামেলার হলেও অটোমেটিক ছাতাগুলোর চাইতে ম্যানুয়াল ছাতাগুলো বেশি টেকসই হয়ে থাকে।
● শিশু ও বয়স্কদের জন্য একটু লম্বা ধরনের ছাতা কিনুন। শিশুদের জন্য মানানসই হবে রঙিন ছাতা।
তবে আর কী, সময় করে কিনে ফেলুন নিজের জন্য একটি পছন্দসই ছাতা। এবারের রোদ আর বৃষ্টি কোনোটিই যেন আপনার ক্ষতির কারণ না হয়ে দাঁড়ায়।
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড