মো. খালিদ হাসান মিলু
২ মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামার টার্মের প্রথম পরীক্ষা। ফেব্রুয়ারির ২৭ তারিখে গড়িমসি করছি যে হাতে ২৯, ৩০ তারিখ আছে। কিন্তু হঠাৎ ২৮ তারিখের পর ১ মার্চ চলে এলো; পাক্কা ৩ দিন হিসেব থেকে গায়েব! খেয়ালই ছিল না যে বছরের এই মাসটায় মাত্র ২৮ দিন থাকে এবং অধিবর্ষে ২৯ দিন। তখন মনে হলো- ইস্ যদি এই মাসে অন্তত ৩০ দিন থাকতো! কিন্তু মজার ব্যাপার হলো একটা সময় সত্যি ফেব্রুয়ারি মাসে ৩০ দিন ছিল।
ইতিহাসে অন্তত দুবার ৩০ ফেব্রুয়ারিকে একটি বাস্তব তারিখ হিসেবে ধরা হয়েছিল। সুইডেন তার ১৭১২ সালের ক্যালেন্ডারে ৩০ ফেব্রুয়ারি তারিখটি যোগ করেছিল যা তাদের পূর্ববর্তী ক্যালেন্ডারের ত্রুটির কারণে। আবার সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৩০ ও ১৯৩১ সালে ৩০ ফেব্রুয়ারি পালন করেছিল সাত দিনের সপ্তাহকে পাঁচ দিনের সপ্তাহ বানানের জন্য এবং প্রতিটি মাস ৩০ দিনের করার প্রয়াসে।
সুইডেনের ৩০ দিনে ফেব্রুয়ারি-
১৭০০ সালের কথা। অবশ্য সেসময়ে ফিনল্যান্ডও সুইডেনের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেবছর তারা জুলিয়ান ক্যালেন্ডার থেকে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করার পরিকল্পনা করে। তাই ১৭০০ সাল, যা জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে একটি অধিবর্ষ হওয়া উচিত ছিল কিন্তু সুইডেনে এ বছরটি অধিবর্ষ ছিল না। যাই হোক, ১৭০৪ এবং ১৭০৮ সাল ত্রুটিপূর্ণভাবে অধিবর্ষ হয়ে যায়। এ ঘটনা সুইডেনে জুলিয়ান এবং গ্রেগরিয়ান উভয় ক্যালেন্ডারের সাথে অসমতা সৃষ্টি করে, তাই দেশটি আবার জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে ফিরে আসে।
মূলত জুলিয়ান ক্যালেন্ডার থেকে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে পরপর দিনের একটি ব্লক বাদ দেওয়া হয়। কিন্তু সুইডিশ সাম্রাজ্য ১৭০০ থেকে ১৭৪০ সাল পর্যন্ত সমস্ত লিপডেগুলোকে বাদ দিয়ে ধীরে ধীরে পরিবর্তন করার পরিকল্পনা করেছিল। ১৭০০ সালের ফেব্রুয়ারিতে লিপডে বাদ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সেই বছরের পরেই গ্রেট নর্দার্ন ওয়ার শুরু হয় এবং সুইডিশদের মনোযোগ তাদের ক্যালেন্ডার থেকে সরিয়ে দেয় ফলে তারা পরবর্তী ১৭০৪ ও ১৭০৮ অধিবর্ষে লিপডে বাদ দেয়নি।
বিভ্রান্তি এবং আরও ভুল এড়াতে ১৭১২ সালে একটি অতিরিক্ত লিপডে যোগ করে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল। সেজন্য সেই বছরের ক্যালেন্ডারে ৩০ ফেব্রুয়ারির প্রকৃত ব্যবহার হয়। তবে সেই দিনটি জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে ২৯ ফেব্রুয়ারি এবং গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে ১১ মার্চের সাথে মিল ছিল।
ঘটনা এখানেই শেষ নয়, তারা সত্যিই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার শুরু করে ১৭৫৩ সালে, তখন একটি ১১ দিনের সংশোধন প্রয়োজন হয়। সেবছর ১৭ ফেব্রুয়ারিকে ১ মার্চে হিসেবে ধরা হয়। ক্যালেন্ডারের এমন অদ্ভুত সংস্কারে সবাই সন্তুষ্ট ছিল না। কিছু লোক মনে করেন যে এটি তাদের জীবনের ১১ দিন চুরি করেছে।
সোভিয়েতের বৈপ্লবিক ক্যালেন্ডার-
১৯২৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন একটি বৈপ্লবিক ক্যালেন্ডার চালু করার পর ১৯৩০-১৯৩১ সাল পর্যন্ত ৩০ ফেব্রুয়ারির অস্তিত্ব ছিল বলে মনে করা হয়। এই ক্যালেন্ডারে ৫ দিনে সপ্তাহ, ৩০ দিনে মাস এবং বাকি পাঁচ বা ছয় দিন ছিল মাসবিহীন ছুটি। পাঁচ দিনের সপ্তাহের অনুকূলে সাত দিনের সপ্তাহ বিলুপ্তির উদ্দেশ্য ছিল সাপ্তাহিক ছুটিকে এড়িয়ে শিল্প-দক্ষতা উন্নত করা।
১৯৪০ সালে সপ্তাহ পুনরুদ্ধার-
যাই হোক, এই সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের ব্যবহার অব্যাহত ছিল। কমিউনিস্ট পার্টির অফিসিয়াল সংবাদপত্র প্রাভদা'র দৈনিক সংখ্যায় পাওয়া ধারাবাহিক তারিখগুলি দ্বারা এসব তথ্য নিশ্চিত করা হয় যে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে ১৯৩০ এবং ১৯৩১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ২৮ দিন ছিল। সোভিয়েতের সেই বৈপ্লবিক ক্যালেন্ডার বাতিল করা হয়েছিল কারণ রবিবারের বিশ্রামের ঐতিহ্যকে বাদ দেওয়া কঠিন ছিল। তবে আসল সাত দিনের সপ্তাহ ১৯৪০ সালে পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল।
তের শতকের পণ্ডিত জোহানেস ডি স্যাক্রোবোস্কো দাবি করেছিলেন যে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে ৪৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে ফেব্রুয়ারি মাসের অধিবর্ষে ৩০ দিন ছিল, তখন ফেব্রুয়ারিকে সংক্ষিপ্ত করে দেওয়া হয় কারণ পণ্ডিতগণ আগস্ট এবং জুলাই মাস দিনের হিসেব সমান করতে চেয়েছিলেন। জুলিয়ান ক্যালেন্ডার সম্পর্কিত ঐতিহাসিক প্রমাণ অবশেষে সাক্রোবোস্কোকের বক্তব্যকে খণ্ডন করে।
ফেব্রুয়ারি নিয়ে এতো মাতামাতি তাহলে আজকের ঘটনা নয় বুঝতেই পারছেন। রোনালদো ও নেইমারের মতো সেলেব্রিটির জন্ম এ মাসেই। এ মাসে দিনের সংখ্যা সব থেকে কম তাই দিনগুলো বেশি মূল্যবান।
লেখক- শিক্ষার্থী, কৃষি অনুষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
ওডি/নিমি
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড