• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আলোকিত গ্রাম বিনির্মাণে পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তাবনা

  মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব

১৯ আগস্ট ২০২০, ১৩:৩২
মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব

গ্রামীণ জীবন অনেক আনন্দের। আমাদের ছোটবেলার গ্রামের পরিবেশ ছিল মনোরম। মাঠে ফুটবল খেলা ও খেলা শেষে বৃষ্টিতে নদীর পানির মধ্যে সাঁতার কাটার আনন্দ আজও আমার মনে অম্লান। ছোটবেলার সেই অনাবিল আনন্দ আর আগের মতো নেই। ১৯৮৬ সাল থেকে গ্রামের পরিবেশ ঘোলাটে হতে শুরু করে। ১৯৮৬ সালে বিশ্বকাপ ফুটবল চলছিল। গ্রামে ম্যারাডোনার ছবি সংবলিত পোস্টার শোভা পাচ্ছিল। প্রজাতপুর থেকে দেবপাড়া পর্যন্ত নির্মাণাধীন সড়ক নিয়ে গ্রামের লোকেরা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যান।

এ থেকে গ্রামে অশান্তির দানা বেঁধে ওঠে। পরিবেশ পরিস্থিতি ও নানা প্রতিকূলতা বর্তমানে গ্রামের পরিবেশকে বিষিয়ে তুলেছে। ছোটবেলার সকল স্মৃতি আজও অমলিন হৃদয় পটে। কেননা এই গ্রামের আলো-বাতাসে বড় হয়েছি। এই গ্রামের ‘দেবপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ থেকেই শিক্ষা জীবন শুরু করে জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে নবীগঞ্জ জে.কে. হাইস্কুল, সিলেট ক্যাডেট কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্যের লিডস বিশ্ববিদ্যালয়, জাপানের মিজি ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া করেছি।

ইংল্যান্ড থেকে ২৫তম বিসিএস-এ বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে আবেদন করে চূড়ান্তভাবে মনোনীত হয়ে বাংলাদেশ পুলিশে এএসপি হিসেবে যোগদান করি। সর্বশেষ ২০১৫-২০১৭ সালে জাপানের মিজি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক পলিসিতে ২ বছরের মাস্টার ডিগ্রি অর্জন করি জেডিএস স্কলারশিপ এর মাধ্যমে। আজো বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা করি। আমার চিন্তা চেতনা সর্বদা পড়ালেখা ঘিরে। আমি বিশ্বাস করি একমাত্র গুণসম্পন্ন ও মানবিকতা সম্পন্ন শিক্ষিত মানুষই পারে সমাজে পজিটিভ পরিবর্তন আনতে। বিগত ২০ বছরের মধ্যে আমি গ্রামে কোনোদিন কোন ঈদ পালন করিনি। এমনকি গত ২০ বছরে ২-৩ দিনের বেশি গ্রামে রাত্রি যাপন করিনি। গ্রামের বর্তমান প্রজন্ম যাদের বয়স ১৮-২০ এর মধ্যে আমার সঙ্গে তাদের তেমন পরিচয়ই নেই। আমি সারাটি জীবন ধর্ম, জাতি, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের কল্যাণ কামনা করে আসছি। বাংলাদেশ পুলিশে যোগদানের পর থেকে সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে স্বীয় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। একমাত্র আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য যেকোনো মানুষের যেকোনো বৈধ প্রয়োজনে পুলিশি সহায়তা স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রদান করি।

গ্রামের মানুষ ছাড়াও অগণিত পরিচিত অপরিচিত মানুষ যখনই কোনো বিপদে পড়ে সহায়তা চান, আপ্রাণ চেষ্টা করি বৈধভাবে সহায়তা প্রদান করতে। সর্বোচ্চ চেষ্টা করি যে কোনো অসহায় বিপদগ্রস্ত মানুষকে বৈধভাবে সহযোগিতা করতে। কোনো মানুষের প্রতি আমার ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দ্বন্দ্ব নেই। গ্রামে যারা বসবাস করেন তাদের মধ্যে-কারা বিগত ৩৬ বৎসরে বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন বা আজও দিচ্ছেন-তা আমি অবগত। তাঁদের কার কখন কেমন ভূমিকা তা আমি ভালো করে জানি। কারো নাম উল্লেখ করে আমি দোষারোপ করতে চাই না। এ গ্রামে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ভূমিকা সম্পর্কেও আমি ওয়াকিবহাল।

বিভিন্ন সময়ে থানা-পুলিশের বিভিন্ন পদক্ষেপ আমার অজানা নয়। ছাত্র জীবন থেকে শুরু করে চাকরি জীবনে আজ পর্যন্ত কোনো মানুষের উপকার করা ছাড়া অপকার করিনি। আমার বিশ্বাস দীর্ঘ সময়ের পর্যবেক্ষণলব্ধ বিষয়গুলোর অবলোকন করে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করলে গ্রামটি আলোকিত হয়ে উঠবে। এই গ্রামের বিরাজমান সমস্যা ও সমস্যা থেকে উত্তরণের নিম্নবর্ণিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করলে গ্রামের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ শিশু, তরুণ-তরুণী, নারী-পুরুষের মুখে হাসি ফুটবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

আমার এ পর্যবেক্ষণ বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রজন্মকে লক্ষ্য করে। যদিও সমাজের বাস্তবতা বড় কঠিন ও রূঢ়। তবে আমি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি সমস্যার মূল চিহ্নিত করে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ যদি আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসেন-খোলা মন নিয়ে তবে বিরাজমান সমস্যার সমাধান সম্ভব। আমার পর্যবেক্ষণ তুলে ধরলাম। আমি মনে করি আমার এ উপস্থাপনা এ গ্রামে শান্তি স্থাপনের জন্য একটি ভিত্তি প্রস্তর। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এ প্রস্তাবের উপর ভিত্তি করে গুণগত শিক্ষার বিস্তার ও একে-অন্যের প্রতি মায়া-মমতা পরিপূর্ণ গ্রাম গড়ে তুলবেন বলে প্রত্যাশা করি।

পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তাবনা:

চলাচলে বাধা: গ্রামের মানুষকে স্বাধীনভাবে চলাচলে বাধা দেয়া যাবে না। রাস্তাঘাটে সিএনজি, রিকশা ও পায়ে হেঁটে কেউ কোথাও যেতে চাইলে তাকে যেতে দিতে হবে। গ্রামের মানুষকে একে-অন্যের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য, কারো দোকানে যেতে বিধিনিষেধ আরোপ করা যাবে না। কে কখন কার দোকানে যাবে, কি যাবে না তা নির্ধারণ সে ব্যক্তি নিজে করবে। চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি কোনো স্বাভাবিক বুদ্ধি সম্পন্ন লোকের শোভা পায় না। মানুষের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি করে, এসব বিদ্বেষ সৃষ্টিকারী কাজ হতে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া কারো ধান কাটা ও রোপণে বাধা সৃষ্টি করা যাবে না।

বেআইনি কোনো কাজে একে-অন্যকে প্ররোচিত করা যাবে না।

পঞ্চায়েত ও দোকানে আড্ডা:

প্রতিদিন পঞ্চায়েত ও অনেক লোক মিলে দীর্ঘসময় দোকানে আড্ডা দেয়া যাবে না। আশপাশের অন্য গ্রামের মানুষ এইভাবে প্রতিনিয়ত বৈঠক করে না। মারামারি করে না। বিভিন্ন বিষয়ে দ্বিমত হতেই পারে। ভিন্নমত পোষণ করতে পারে- এজন্য মেরে ফেলতে হবে বা গুরুতর জখম প্রাপ্ত হয় এমন দেশীয় লাঠিসোঁটা দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে- দল বেঁধে? একবার ভাবুন এসব করে গ্রামের সকল শ্রেণির মানুষকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? এসব কাজ কখনও একটি পরিবার বা গ্রামকে আলোর দিকে নিতে পারে না। এসব কাজ অন্ধকারে নিয়ে যায়।

গোষ্ঠী প্রথা রহিতকরণ ও গ্রুপিং করে মারামারি বন্ধকরণ: গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে বা গ্রুপ সৃষ্টি করে মারামারি করা যাবে না। গ্রামের যুবকদের বিভিন্ন দলে ভাগ করে মারামারি, হানাহানি বন্ধ করতে হবে। গ্রামের লোকদের বিভক্ত করে গ্রামের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করা যাবে না। গ্রামে মারামারি করতে কোনোভাবেই লোকজনকে উদ্বুদ্ধ করা যাবে না। মারামারি বন্ধ করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। কখনো কোনো বিষয়ে বিরোধ হলে যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে সঙ্গে সঙ্গে আপস করে দেয়া। গ্রামের শিশু-কিশোর, নরনারী সবার মুখে হাসি ফোটাতে বিরোধে ইন্ধন যোগানো থেকে বিরত থাকতে হবে।

একঘরে রাখা ও সত্য সন্ধান:

গ্রামের কোনো পরিবারকে একঘরে করে রাখা যাবে না। কাউকে একঘরে করে রাখা অমানবিক। এটি জনগণের মৌলিক অধিকার বিঘিœত করে। স্বাধীনভাবে জীবন জীবিকা নির্বাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। গ্রামের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয় এমন কাজে একে-অন্যকে প্ররোচিত ও সহযোগিতা করা যাবে না। ধর্মীয় কাজ প্রতিপালনে কাউকে জোর করা যাবে না। কেউ ভিন্নভাবে ধর্ম কর্ম করে বলে তাঁর বাড়িঘরে আক্রমণ করা যাবে না। এই প্রযুক্তির যুগে সত্য সন্ধান অনেক সহজ। জ্ঞান-পিপাসু মন নিয়ে সত্যের অনুসন্ধান করলে সত্যের সন্ধান লাভ সহজ হবে।উদার মন নিয়ে নিজের ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মঙ্গলের লক্ষ্যে সত্য সন্ধান অব্যাহত রাখতে হবে। কে দাঁড়িয়ে, কে বসে মিলাদ পড়লো এসব চিন্তা না করে সত্য সন্ধানের জন্য পড়ুন। উত্তর পেয়ে যাবেন।

মিথ্যা মামলা/অভিযোগ/প্রচারণা হতে বিরত থাকা:

মিথ্যা মামলা মোকদ্দমা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। মিথ্যা মামলা মোকদ্দমা কারো জন্য সুফল বয়ে আনতে পারে না। মিথ্যা মামলা দায়ের করে সাময়িক আনন্দ পাওয়া যেতে পারে। মানবিক গুণসম্পন্ন লোক কখনো অন্যায়ভাবে নিরপরাধ লোকের বিরুদ্ধে মামলা বা অভিযোগ দায়ের ও মিথ্যা প্রচারণা করতে পারেন না।

শারীরিক শাস্তি ও অপমান বন্ধ করা:

গ্রামে সালিশ-বৈঠকের নামে কাউকে শারীরিক শাস্তি বা অপমান করা যাবে না। এটি মানুষের মধ্যে প্রতিহিংসার বীজ বপন করে যা গ্রামের শান্তি বিনষ্ট করে। গঠনমূলক কাজে লিপ্ত থাকতে হবে। জীবন-জীবিকা উপার্জনে প্রতিটি সক্ষম মানুষকে কাজ করতে হবে। বিগত দিনগুলোতে এমনকি এখনও পরিলক্ষিত হচ্ছে বহু লোক একত্রে জমায়েত হয়ে প্রতিদিন শত শত ঘণ্টা সময় অপচয় করেন পঞ্চায়েতের নামে এসব বন্ধ করে দিতে হবে সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ গড়তে হলে। সুন্দর মন নিয়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সময় নষ্ট না করে যার যার সন্তানসন্ততি ও পরিবারের সকলের জীবিকা উপার্জন ও শিক্ষার গুণগত বিস্তারে এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিটি বাড়িতে সুশিক্ষিত ছেলে মেয়ে বেড়ে উঠতে পারে- সেদিকে সবাইকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষার আলোই পারে- মানুষের মধ্যে সদগুণাবলী গড়ে তুলতে- যা সবার জন্যই কল্যাণকর। একজন সুশিক্ষিত ব্যক্তি অবশ্যই তাঁর গ্রামের সকলের মঙ্গলের জন্য কাজ করবে। সে কখনো গ্রামের অমঙ্গল চিন্তা করবে না-যদি আখেরাতের প্রতি সুদৃঢ় বিশ্বাস রাখে। দিন দিন পৃথিবী অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। এই হানাহানি মানুষে মানুষে বিদ্বেষ নিয়ে পড়ে থাকলে গ্রামের সম্ভাবনাময় শিশু ও ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ জীবন অনুজ্জ্বল থেকে যাবে। তাই সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ নির্মাণের লক্ষ্যে একে-অন্যের প্রতি দয়ার্দ্র মনোভাব নিয়ে কাজ করুন।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গ্রামে মারামারি বন্ধকরণ:

দীর্ঘ ৩৬ বছর ধরে চলমান গ্রুপিং বাদ দিতে হবে। শক্তিবৃদ্ধির লক্ষ্যে গ্রামের জনগণকে বিভক্ত করে গ্রুপিং সৃষ্টির প্রথা বাতিল করতে হবে। এতে যারা গ্রামে সংখ্যার দিক দিয়ে বেশি হয় ও পেশী শক্তিতে বলিয়ান হয়, তারা দুর্বলদের নানাভাবে অত্যাচার করে ও গ্রামে বিশৃঙ্খলা জিইয়ে রাখে। নির্বাচনে কারো পক্ষ নিয়ে গ্রামের লোকদের বিভক্ত করা যাবে না। যে যার পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দিবে।বাইরে জীবিকা উপার্জনরত লোকদের ফোন করে গ্রামে আনা: গ্রামে দলাদলি করে উত্তেজনা সৃষ্টি করে, যারা গ্রামের বাইরে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহের জন্য অবস্থান করে, তাদেরকে মারামারি করার জন্য ফোন করে গ্রামে আনা যাবে না। এতে করে যারা দৈনন্দিন জীবিকা উপার্জনে লিপ্ত থাকেন, তাদের আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়তে হয়। আর আহত হলে তো ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

কর্মে নিবিষ্ট থাকা:

কাজে মগ্ন থাকতে হবে- দিনরাত আড্ডা দেয়া বন্ধ করতে হবে। এটি করতে পারলে গ্রামে হানাহানি, হিংসা-বিদ্বেষ কমে যাবে। এই যে, শত শত লোক মিলে জমায়েত হয়ে প্রতিদিন হাজার ঘণ্টা সময় অপচয় করেন, তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মনোনিবেশ করতে হবে জনকল্যাণমুখী কাজে। সময় অপচয় করে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না। লেখাপড়ায় মগ্ন থাকতে হবে, একে-অন্যকে সহযোগিতা করতে হবে।

ধর্মীয় কাজ ও ইমাম নিয়োগ:

ধর্মীয় কাজে বাধা দেয়া যাবে না। গ্রামের দু’টি মসজিদে ইমাম নিয়োগে ইসলাম সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন- এমন লোকদের পরামর্শক্রমে ইমাম নিয়োগ দিতে হবে। গ্রামের মসজিদে তাবলীগ জামাত আসলে তাদেরকে বাধা দেয়া যাবে না। ইমাম নিয়োগের সময় গ্রামের শিক্ষিত লোকদের মতামত ও বিশিষ্ট আলেমদের পরামর্শ নিতে হবে। যদি সুশিক্ষিত বিশিষ্ট দু’জন আলেম গ্রামের দু’টি মসজিদে ইমাম হিসেবে রাখা যায়, তাহলে গ্রামের মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ববোধ, সৌহার্দ্য একে-অন্যের প্রতি সদাচরণ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়। দু’টি মসজিদের জন্য ১০ জন করে মসজিদ কমিটি গঠন করে গ্রামের শিক্ষিত লোকদের পরামর্শ নিয়ে আলেম নিয়োগ করা যেতে পারে।

জামানতবিহীন বিরোধ নিষ্পত্তি:

কোনো সমস্যা হলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে সমস্যার সমাধান করতে হবে। গ্রামের লোকদের থেকে চাঁদা তোলা যাবে না। কখনো মানুষে মানুষে বিরোধ হলে বিবদমান লোকদের পক্ষ না নিয়ে ন্যায়ের সঙ্গে নিষ্পত্তি করে দিতে হবে। বিচার করার উদ্দেশ্যে জামানত প্রথা রহিত করতে হবে। জামানত প্রথার মাধ্যমে বিচার-সালিশ করা কারো কারো জন্য লাভজনক। তাই এ প্রথা না থাকলে মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টির প্রয়াস কমে যেতে পারে।

আপোষ-মীমাংসায় জোর দেয়া:

দু’জন মানুষ বা ২ পরিবারের মধ্যে সমস্যা হলে অন্যরা তাদের পক্ষপাতিত্ব না করে মীমাংসা করবে। কাউকে প্ররোচিত করা যাবে না। যতদূর সম্ভব মীমাংসা করে দিতে হবে। মারামারি-হানাহানি করলে যে অপূরণীয় ক্ষতিসাধিত হয় তা সবাইকে উপলব্ধি করে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুন্দর জীবন বিনির্মাণের নিমিত্তে আপোষ-মীমাংসায় জোর দিতে হবে। কাল্পনিক ও মিথ্যা মামলা করা থেকে লোকদের নিরুৎসাহিত করতে হবে। মামলা মোকদ্দমায় যে পরিমাণ ক্ষতি হয় তা গ্রামের নিরীহ মানুষদের জীবনকে আরো দুর্বিষহ করে তোলে।শিশুদের ও ছেলেমেয়েদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানসিক বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তাই সব সময় আপোষ-মীমাংসাকে প্রাধান্য দিতে হবে। বিভেদ জিইয়ে রাখা যাবে না। একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও শান্তিময় গ্রাম গড়ার লক্ষ্যে সবাইকে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি সৃষ্টির জন্য নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগের বিকল্প নেই। সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সুন্দর মন নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

গ্রামের রাস্তা নির্মাণে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস:

গ্রামের রাস্তা নির্মাণে উদ্যোগী যারা তাদের সহযোগিতা করতে হবে। কেননা, স্বাধীনতার পর ৪৯ বৎসরেও আজ পর্যন্ত পুরো গ্রামের জন্য ন্যূনতম সুযোগসহ একটি রাস্তা নির্মাণ হয়নি। তবে গ্রামের পূর্বপাশে একটি রাস্তা এখনো নির্মাণাধীন বহুদিন যাবৎ। গ্রামের সকল শ্রেণির মানুষের সুবিধার জন্য বিশেষ করে দূরবর্তী স্কুলে যারা লেখাপড়া করে এবং অসুস্থ লোকদের জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনে একটি পূর্ণাঙ্গ রাস্তা অপরিহার্য। গ্রামের সবার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় এটি সম্ভব।

স্কুল মাঠে খেলাধুলা:

গ্রামের স্কুল মাঠে খেলাধুলার ব্যাপারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। যারা শান্তিপূর্ণভাবে খেলাধুলা যেমন-ফুটবল, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, ক্রিকেট ইত্যাদি করতে চায় তাদেরকে তা করতে দিতে হবে। খেলাধুলা পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য, শারীরিক ও মানসিক গঠনে অপরিসীম ভূমিকা রাখে। সুস্থ পরিবেশে খেলাধুলাকে উৎসাহ দিতে হবে।

জখমপ্রাপ্ত লোকদের চিকিৎসা ও ভরণপোষণ:

মারামারিতে যারা আহত হয় তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। উপার্জনক্ষম ব্যক্তি গুরুতর জখম হলে তার পুরো পরিবার সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ে। পরিবার অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে। ছেলেমেয়ের শিক্ষা বিঘ্নিত হয়। গোটা পরিবার মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত হয়। যারা আহত হয়েছেন তারা পূর্ণরূপে সুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের চিকিৎসা ব্যয় ও ভরণপোষণের ব্যবস্থা করতে হবে। যারা আঘাত করেছেন তাদেরকে এই ব্যয়ভার বহন করতে হবে-যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপকর্মে লিপ্ত না হয়।

সৃষ্টিশীল কাজে মনোনিবেশ করা:

অবসর সময়ে গ্রামের শিক্ষার্থী ও যুবকদের নিয়ে সৃষ্টিশীল কাজ করতে হবে। যেমন বৃক্ষরোপণ ও বিভিন্ন বয়সের মানুষের মধ্যে শিক্ষার বিস্তার। কথায় আছে ‘অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা’। জীবনের মূল্যবান সময় অপচয় না করে নিজের জীবন, পরিবারের জীবন, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী তথা সকল মানুষের কল্যাণ সাধিত হয়-এমনভাবে সময় কাটাতে হবে। দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হওয়া: দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে হবে। শুধু গ্রামকে নিয়ে পড়ে থাকলেই হবে না। চারদিকের অন্যান্য গ্রাম ও তাদের পরিবেশ কেমন তা ভাবতে হবে। পৃথিবীটা অনেক বড়। মনকে বড় করে গ্রামে হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি না করে গ্রামের বসবাসকারী সকলের কল্যাণ হয় এমন পরিবেশ সৃষ্টিতে এগিয়ে আসুন। মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন অনেক দিন। অন্যের কল্যাণের চিন্তা করলে আপনারাও কোনো না কোনোভাবে অন্যদের দ্বারা উপকৃত হবেন। মানুষের শ্রদ্ধার আসনে আসীন থাকবেন। অন্তরের নিয়তের পরিবর্তনের মাধ্যমে এমন কাজ করুন যা গোটা গ্রামকে আলোকিত করবে। একটি ছেলে বা মেয়ে যদি সুশিক্ষিত ও কর্মক্ষম হয় তাহলে আরো ১০ জনের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারবে। এভাবে ক্রমান্বয়ে যদি পুরো গ্রামে শিক্ষার বিস্তার হয় তবে মানুষে মানুষে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য বৃদ্ধি পাবে।

সুন্দর গ্রাম বিনির্মাণে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস:

গ্রামের রাস্তাঘাট নির্মাণের জন্য পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। একটি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করতে চাই আজ থেকে প্রায় ৩৬ বছর আগে প্রজাতপুর থেকে দেব পাড়া (৯ নং বাউসা ইউপি’র অন্তর্ভুক্ত) পর্যন্ত রাস্তা হয়েছিল। রাস্তা সম্পূর্ণ হওয়ার পরও দেবপাড়া গ্রামের কতিপয় লোক তাদের জমির উপর দিয়ে রাস্তা যাওয়া মেনে না নেয়ার কারণে পরবর্তীতে জমির মালিকরা রাস্তাটি কেটে আইলে পরিণত করে ফেলে। ঐ সময়ে গ্রামে নেতৃত্বদানকারী লোকজন যদি ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতে পারতেন তাহলে তারা আজ দেখতে পেতেন এত বছরে বা যুগের পর যুগ হাজার হাজার মানুষ এই রাস্তা ব্যবহার করছে। বহু মানুষের রোজগারের মাধ্যম হতো এই সড়কটি। দূরদৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করলে আজ এই গ্রাম উন্নতির শিখরে পৌঁছে যেতো। সংকীর্ণতা পরিহার করে উদার মন নিয়ে সার্বিকভাবে সকলের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে সম্মুখপানে এগিয়ে যাই জনকল্যাণমুখী গ্রাম গড়তে। মানুষের অদম্য বাসনা, কঠোর পরিশ্রম ও মেধার কাছে অজেয় হার মানে। সকলে মিলে প্রতিজ্ঞা করি সুন্দর গ্রাম বিনির্মাণে। গ্রামে ও দেশ-বিদেশে অবস্থানরত সকল শ্রেণি- পেশার মানুষের সমন্বিত উদ্যোগে বাসযোগ্য পরিবেশ গঠন সম্ভব।

শিক্ষার প্রসারে উৎসাহ:

গ্রামের পরস্পরের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। পরস্পরের প্রতি মায়া-মমতা ভালোবাসা ও সম্প্রীতি সৃষ্টির ব্যাপারে উৎসাহ উদ্দীপনা দিতে হবে। গ্রামের মানুষের পরস্পরের প্রতি মায়া-মমতা, ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়, এমন ধরনের শিক্ষামূলক প্রচারে উৎসাহ ও সহযোগিতা করতে হবে। সুন্দর পরিবেশ নির্মাণের লক্ষ্যে সবার মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িতে দিতে হবে।

শিক্ষিত ও চাকরিজীবীদের পরামর্শ গ্রহণ:

দীর্ঘদিনের বিরোধে গ্রামের লোকদের মানসিক বিকাশ, অর্থনৈতিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তা উপলব্ধি করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর বাসযোগ্য একটি গ্রাম তৈরির লক্ষ্যে গ্রামের সুযোগ্য ও শিক্ষিত চাকরিজীবী লোকদের পরামর্শ মতে জনকল্যাণমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। মারামারি হলে মৃত্যুর ঘটনাসহ মারাত্মক আহত লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এতে ভুক্তভোগী পরিবারসহ গ্রামের অন্যান্য মানুষ বিভিন্নভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়, জীবিকা উপার্জন ব্যাহত হয়, ছেলেমেয়েদের শিক্ষা ব্যাহত হয়। গ্রামের বিরাজমান পরিস্থিতি সকল শ্রেণির মানুষকে মানসিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য এবং বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি সুন্দর, সুস্থ ও স্বাভাবিক পরিবেশে বেড়ে ওঠার সুযোগ সৃষ্টির জন্য বর্তমান প্রজন্মের দায়িত্বশীলদের কার্যকর ভূমিকা অপরিহার্য। অন্যথায় প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম দুর্ভোগের শিকার হবে। এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য পরস্পর ভাই-ভাই হিসেবে দয়া-মায়ার ভিত্তিতে একটি সুন্দর গ্রাম আজ হতে সবাই মিলে গড়ে তুলি। মানুষের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিযোগিতা থাকবে এটি পৃথিবীর চিরায়ত নিয়ম। এ প্রতিযোগিতা যেন হয় সুস্থ সুন্দর স্বাভাবিক নিয়মে। বর্তমান ও আগামীর শিশুরা যেন গর্ব করে বলতে পারে আমাদের পূর্ব-পুরুষরা আমাদের জন্য একটি বাসযোগ্য মনোরম গ্রাম উপহার দিয়ে গিয়েছেন।

গুণসম্পন্ন শিক্ষার প্রসার:

এই গ্রামকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিতে হলে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। গ্রামের শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সম্মান ও মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে হলে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন বয়স ও গ্রুপের নারী-পুরুষকে ধর্মীয় ও জাগতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। গুণসম্পন্ন শিক্ষাই এই গ্রামের পথহারা মানুষকে আলোর দিকে নিয়ে আসতে পারে। গ্রামের প্রতিটি ঘরে ঘরে যাতে ছেলেমেয়েরা যথাযথ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ-বিদেশে কর্মক্ষম সুনাগরিক হয়ে গড়ে উঠতে পারে সেজন্য গ্রামের শিক্ষিত চাকরিজীবীসহ গ্রামের যুবক-বৃদ্ধ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নারী-পুরুষ সবাই শিক্ষার প্রতি মনোযোগী হলে আশা করা যায় মানুষে মানুষে হিংসা-বিদ্বেষ কমে যাবে। তারা কখনই অন্যের ক্ষতি করার চিন্তা-ভাবনা করবে নাÑযদি অন্তরে আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর শিক্ষা হৃদয়ে পোষণ করে। এ গ্রামের শিক্ষিত ও চাকরিজীবীসহ নবীগঞ্জের অন্যান্য গ্রামের বিশিষ্ট শিক্ষিত ও চাকরিজীবীদের পরামর্শ মতো প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করলে এ গ্রামের সকল শ্রেণির মানুষের জন্য মঙ্গলজনক হবে বলে প্রত্যাশা করা যায়।

পরস্পরের প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা:

বয়স্কদের সম্মান করতে হবে এবং ছোটদের ভালোবাসতে হবে। মৃত ব্যক্তিদের নিয়ে কটুু মন্তব্য করা বন্ধ করতে হবে। ধৈর্য্য ও স্থিরতার সঙ্গে একে অন্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। কাউকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য না করে যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দিয়ে কথা বললে অনেক সময় তিক্ততা দূরীভূত হয়। একে অন্যকে শ্রদ্ধা সম্মান করলে পরস্পরের প্রতি মায়া মমতা বৃদ্ধি পায়। এমনটি হলে পরস্পর পরস্পরের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে।

গ্রামের জনপ্রতিনিধির কাছে প্রত্যাশা:

জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিকে গ্রামের সকলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে হবে। পক্ষপাতমূলক আচরণ থেকে বিরত থাকতে হবে। লোকদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি না করে পরস্পরকে স্নেহ ভালোবাসার ভিত্তিতে শিক্ষা, অর্থনীতির উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসতে হবে।তিনি গ্রামের সকলের হয়ে কাজ করবেন। গ্রামে লোকদের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।

প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিদের কাছে মানবিক সুবিচার প্রত্যাশা: দীর্ঘ প্রায় ৩ যুগের বেশি সময় ধরে এই গ্রামের চলমান সমস্যা নিরসনে জনপ্রতিনিধিদের কার্যকর ভূমিকা অপরিহার্য। উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ হয়তো জানেন না কতিপয় লোক কীভাবে গ্রামটিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে দীর্ঘকাল ধরে। গ্রামের সকল শ্রেণির মানুষকে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিতে আপনাদের ভারসাম্যপূর্ণ সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য। বলাই বাহুল্য যে, দীর্ঘস্থায়ী বিরোধে এবং গ্রামের কতিপয় লোকের একগুঁয়েমির ফলে পুরো গ্রামের মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও মানসিক ক্ষতিসহ শিক্ষা ও জীবন মানের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দ এ গ্রামের শান্তি বিনষ্টকারী লোকদের আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা করতে পারেন। প্রয়োজনে গ্রামের বিবদমান লোকদের পক্ষ থেকে ২০ জন করে জেলার সর্বোচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের সম্মুখে নিয়ে ভবিষ্যতে গ্রামের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্টকারী কর্মে লিপ্ত হবে না মর্মে অঙ্গীকারনামা রাখা যেতে পারে।ক্ষণস্থায়ী এ দুনিয়ায় আপনাদের দরদী মনের একটুখানি মানবিক সুবিচার এ গ্রামে শান্তির সুবাতাস প্রবাহিত করতে পারে।

পুলিশ প্রশাসনের কাছে প্রত্যাশা:

পুলিশ প্রশাসন আন্তরিকভাবে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই গ্রামের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হলে কার্যকর ফল পাওয়া সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সমস্যার মূল যা এ গাইড লাইনে আলোকপাত করা হয়েছে তা হৃদয়ঙ্গম করে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এ গ্রামে বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে প্রত্যাশা করা যায় এ গ্রামকে বসবাস উপযোগী করা যেতে পারে।যারা জীবিকা উপার্জনে কাজকর্ম করেন না, তাদেরকে চিহ্নিত করে কাজকর্মে লিপ্ত হওয়াতে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে আশানুরূপ ফল পাওয়া যেতে পারে।

লেখক: মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব

উপ-পুলিশ কমিশনার (ইএন্ডডি), সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ-এসএমপি, সিলেট।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড