মোশারফ হোসাইন
দেখে একেবারেই মনে হয় না ২৬ বছরের কোন যুবক। চোখ অনেক তীক্ষ্ণ, উচ্চারণ অনেক স্পষ্ট, চিন্তা অনেক গোছানো আর কথা অনেক সুনির্দিষ্ট। স্কুল জীবন শেষ করার পর একরাশ স্বপ্ন নিয়ে কলেজ জীবন শুরু করেন মাশাহেদ হাসান সীমান্ত, বছর না ঘুরতেই ২০০৯ সালে বহিষ্কার হয় কলেজ থেকে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে নিজের স্বপ্নগুলো সাজাঁতে গিয়ে ২০১২ সালে যায় ড্রপ । একটা সময়ে আর ৫টা বিপথগামী তরুণের মতো হারিয়ে যাচ্ছিলেন সীমান্ত। নিজেকে খুঁজে পাওয়ার জন্য যখন থেকে কাজ শুরু করলেন, তখনই আগ্রহ জন্মায় বক্তব্য আর প্রশিক্ষণের ব্যাপারে। আইবিএ জেইউ ডিবেটিং ক্লাব আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির হয়ে বিতর্ক যেন ছিলো তার পছন্দের কাজ। একাগ্রতা আর পরিশ্রমের কারণেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ এবং সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী থাকাকালীন সময়ে বিতর্ক, বক্তৃতা, ব্যবসায় প্রতিযোগিতা, ছায়া জাতিসংঘে দেশ এবং দেশের বাইরে থেকে শতাধিক পুরষ্কার পান তিনি। পরবর্তিতে ব্যক্তিগত জীবনের সিদ্ধান্ত ও পেশাগত জীবনের দক্ষতা বৃদ্ধির কৌশলগুলোকে বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেমিনার, কর্মশালা এবং ব্যক্তিগত সেশনের মাধ্যমে শিখিয়ে আসছেন নিয়মিত।
২০১৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ল্ড ডিবেইট ইন্সটিটিউট এর আয়োজনে চীনের বেইহ্যাং-এ ফ্যাকাল্টির ভূমিকায় দায়িত্ব পালন করেন, সেখানে ১১০জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও ১০ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ প্রদাণ করেন। ২০১৬ সালে স্কোর পাওয়ার ওয়ার্ল্ড ডিবেইট ইন্সটিটিউট এর আয়োজনে ৩৮ দিনের জন্য যুক্তরাজ্য ভ্রমণ করেন, যুক্তরাজ্যে অবস্থান কালে তিনি হাউজ অব কমন্সে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পান । এরপর থাইল্যান্ড এর বিতর্ক বিশ্বকাপে একটি বিশেষায়িত ক্যাটাগরির মাস্টার্স চ্যাম্পিয়নশীপ বিচারকার্যের সুযোগ পান ও ভারত সফরে বক্তব্যদেন ভারতের ক্রীড়া মন্ত্রনালয়ে, পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। ২০২০ এর ফেব্রুয়ারিতে ভারতের ভোপালের জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে জাতীয় বিতর্কে প্রধান বিচারকের ভূমিকা পালনের পাশাপাশি মালয়েশিয়ার সুইনবার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রনে বিতর্কের কর্মশালা পরিচালনা করেন। গত ৫ বছর ধরে যুক্তরাজ্যের ইংলিশ স্পিকিং ইউনিয়নের আয়োজনে প্রায় ৬০টি দেশের অংশগ্রহণে ১৬ থেকে ২০ বছর বয়সী তরুণদের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিতর্ক প্রতিযোগিতার নির্বাচক এবং প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। জার্মান সংবাদপত্র ডয়েচ ভেলে সীমান্তকে বাংলাদেশের অন্যতম অণুপ্রেরণাদায়ী তরুণ হিসেবে উল্লেখ করে।
উপস্থাপনা, যোগাযোগ দক্ষতা, নেত্রীত্ব, দলবদ্ধ কাজ, সেলস ইত্যাদি বিষয়ে দেশের ভেতরে কথা বলেছেন জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থার প্রকল্পে, বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়ন মেলা, ব্রিটিশ কাউন্সিল, ওয়ালটন গ্রুপ, ম্যাকসন্স গ্রুপ, উরি ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম, বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমী আইবিএ ঢাকা এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ অসংখ্য জায়গায়। ২০১৮ সালে ব্যক্তিগত জীবনের জটিল মুহুর্তগুলোতে মানুষ, পরিস্থিতি আর ফলাফল মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কৌশল নিয়ে সীমান্তের লেখা প্রথম বই ‘লাইফ ইজ ভেরি ইজি’ বইটি দেশে ও দেশের বাইরে ব্যপক সাড়া ফেলে। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০-এ বর্ণ প্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে তার লেখা ২য় বই ‘জীবন ও জগতের গল্প’ বইটিও দেশে ব্যাপক সাড়া ফেলে। বর্ণ প্রকাশের নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকাশক সাইদুর রহমানের সাথে কথা বলে জানা যায়, কলকাতা বই মেলায় ‘জীবন ও জগতের গল্প’ বইটির ব্যাপক সাড়ার পাশাপাশি দিল্লী, মালয়েশিয়া এবং আয়ারল্যান্ডের বাঙ্গালিদের কাছেও ব্যপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। প্রশিক্ষণ, বই লেখা, ওয়ান-টু-ওয়ান কোচিং এর পাশাপাশি নিয়মিত ইউটিউব চ্যানেল থেকে ভিডিও কন্টেন্ট বানানোর মাধ্যমে জীবনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, মানুষ চেনা এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী কর্মপন্থা নির্ধারণের জটিল পথটাকে সকলের জন্য সহজ করার লক্ষ্যে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন তিনি ।
সীমান্ত বলেন, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে বিশ্ব যখন অচল তখন ঘরে বসেই অনলাইনে দেশের বাহিরে বিভিন্ন বিতর্ক প্রতিযোগিতার বিচারকার্য ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছি । তিনি আরও বলেন, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিতর্ক প্রতিযোগিতার ফাইনালের বিচাকার্য পরিচালনার জন্য আমাকে নির্বাচিত করা হয়েছে, অপেক্ষা শুধু পৃথিবীর সুস্থতার।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড